ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সময়: ০২:৫৬:২৬ AM

ভারতকে কোণঠাসা করার ছক?

ডেস্ক নিউজ।। দৈনিক সমবাংলা
22-11-2024 02:56:26 AM
ভারতকে কোণঠাসা করার ছক?

পশ্চিম এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ। চিরকালীন দ্বন্দ্ব লেগে আছে তাদের মধ্যে। তেল থেকে শুরু করে আমেরিকার সান্নিধ্য, নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে ঝামেলায় জড়িয়েছে ইরান এবং সৌদি আরব।ইরান, সৌদি আরবের মধ্যে দূরত্ব খুব বেশি নয়। দুই দেশকে আলাদা করেছে পারস্য উপসাগর। দু’টি দেশের মধ্যে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক মনে করিয়ে দিতে পারে ভারত, পাকিস্তানকেও।সম্প্রতি এই ইরান এবং সৌদি আরবের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে নাক গলিয়েছে চিন। শুধু তাই নয়, দুই দেশের মধ্যে শান্তি চুক্তিও স্থাপিত হয়েছে বেজিংয়ের মধ্যস্থতায়।গত ১০ মার্চ ইরান এবং সৌদি চিনের এক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিকের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তাতে বলা হয়েছে, দুই দেশই আগামী দু’মাসের মধ্যে দূতাবাস খুলে দেবে।পশ্চিম এশিয়ায় চিনের এই সক্রিয়তায় প্রমাদ গুনেছে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়া। ইরান আর সৌদির দ্বন্দ্ব মিটিয়ে সেই এলাকায় জিনপিং ঠিক কী করতে চাইছেন, তা নিয়ে চিন্তার মেঘ ঘনিয়েছে পশ্চিমের আকাশে।চিন অবশ্য বিশেষ কোনও সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছে। সে দেশের এক কূটনীতিক জানিয়েছেন, ইরান-সৌদি শান্তি চুক্তি এশিয়ার পশ্চিম অংশে চিনের দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টার ফল।বিশ্বে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ব নিরাপত্তা প্রকল্প গ্রহণ করেছিল চিন। ইরান এবং সৌদির মধ্যস্থতাও সেই উদ্যোগেরই অংশ, দাবি বেজিংয়ের।চিনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজ় সেন্টারের অধিকর্তা ইউ বিংবেন দ্য ওয়্যারকে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, পশ্চিম এশিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে তারা নতুন একটি কাঠামো গঠন করেছে। সাম্প্রতিক শান্তি চুক্তিও তারই অন্তর্গত।বিশ্ব নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে চিন কী ভাবছে, তার নথি গত বছরই প্রকাশ করেছিল বেজিং। বিংবেন জানিয়েছেন, এই প্রথম নয়, এর আগে ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্যও তারা উদ্যোগী হয়েছিল। সিরিয়া বিতর্কেও হস্তক্ষেপ করেছিল চিন।চিনা কূটনীতিবিদ এ প্রসঙ্গে আমেরিকার প্রসঙ্গও টেনে আনেন। তিনি জানান, পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি স্থাপনে আমেরিকার চেয়ে বেশি সফল চিন। কারণ, আমেরিকা যে কোনও ইস্যুতে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। ইরানের সঙ্গেও তা-ই করেছে। বিপরীতে ইরান এবং সৌদি, দুই দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে চিন। তাই তারাই সাফল্য পেয়েছে।ইরানের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ভাল নয়। সৌদির সঙ্গেও গত কয়েক বছরে ওয়াশিংটনের মতানৈক্য প্রকাশ্যে এসেছে। চিনের মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে আমেরিকাকেই বার্তা দিতে চাইল সৌদি, মনে করছেন অনেকে।চিনা কূটনীতিবিদ জানিয়েছেন, পশ্চিম এশিয়ায় তাদের মূল লক্ষ্য তেলের খনি এবং সেই সংক্রান্ত বাণিজ্য। সেই বাণিজ্য যাতে অটুট থাকে, তার জন্য এলাকায় শান্তি স্থাপিত হওয়া জরুরি।পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে শান্তি বজায় না থাকলে সেখানে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাবেন। তাতে শুধু চিন নয়, সামগ্রিক ভাবে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি সমস্যায় পড়বে। সেই আগ্রহ থেকেই ইরান, সৌদিতে চিনের এই হস্তক্ষেপ। অন্তত এমনটাই দাবি চিনের।ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিম এশিয়ায় চিনের এই অতিসক্রিয়তায় আমেরিকা এবং অন্য পশ্চিমি দেশগুলি সমস্যায় পড়তে পারে। চিনের হস্তক্ষেপের পর আর কোনও দেশ এই এলাকার রাজনীতিতে নাক গলাতে চাইবে না। যা আখেরে বেজিংয়ের রাস্তাই পরিষ্কার করবে।পশ্চিম এশিয়ার সব দেশের সঙ্গেই কমবেশি সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে ভারত। তারা কোনও বিতর্কে নাক গলায় না। চিনের বক্তব্য, ভারতকে এ বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। ভারত কোন পক্ষ নিয়ে কথা বলে, তা দেখতে আগ্রহী বেজিং।বাণিজ্যিক স্বার্থে পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতিতে নাক গলানোর কথা বললেও চিনের আসল মতলব সম্পর্কে সন্দিহান পশ্চিমি দুনিয়া। অনেকেই মনে করছেন, জিনপিংয়ের অন্য উদ্দেশ্য আছে।ইরান এবং সৌদি, দুই পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী দেশকে হাত মেলাতে বাধ্য করেছে চিন। এর মাধ্যমে আসলে ভারতের পশ্চিমে বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে বেজিং।পাকিস্তানের সঙ্গে বরাবরই চিনের সম্পর্ক ভাল। আফগানিস্তানের রাজনীতিতেও হস্তক্ষেপ করেছে বেজিং। এ বার ইরান এবং সৌদির মতো দেশকে মিলিয়ে দিয়ে ভারতকে কোণঠাসা করার পরিকল্পনা করছেন জিনপিং? সেই প্রশ্ন উঠেছে।