এবার ‘বুঙ্গার চিনি’র নিলাম নিয়ে আলোচনায় আসলেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। এ দুই নেতার একজন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম স্বাধীন, অপরজন সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজান আহমদ পারভেজ।তারা ৩টি চালানে ৮২৯ বস্তায় ৪১ হাজার ৪৫০ কেজি চিনি বাজারদরের চেয়ে অতিরিক্ত দামে নিলামে কিনে নিয়েছেন। চোরাই পণ্যকে সিলেটে বলা হয় ‘বুঙ্গার মাল’। আর চোরাই চিনিকে বলা হয় ‘বুঙ্গার চিনি’। শুল্কফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা চিনির চালানই ‘বুঙ্গার চিনি’।বুধবার (১০ জুলাই) সিলেট মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের বিচারক সুমন ভূঁইয়া ৩টি চিনির চালান নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতাদের নামে বরাদ্দ দেন। একই দিনে নিলামে যায় পুলিশের অভিযানে জব্দ করা ভারতীয় সুপারি, চা পাতা ও প্রসাধনী সামগ্রী।আদালত সূত্র জানায়, এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ কর্তৃক জব্দকৃত দুটি চিনির চালান এদিন একই আদালতে নিলামে ওঠে। ২৯৫ বস্তায় ১৪ হাজার ৭৫০ কেজি এবং ১১৭ বস্তায় ৫ হাজার ৮৫০ কেজি চিনির চালান একাই নিলামে কিনে নেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম স্বাধীন। সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাটসহ ২৯৫ বস্তা চিনির দাম পড়ে ১৮ লাখ ২১ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ১১৭ বস্তা ৭ লাখ ২২ হাজার ৪৭৫ টাকায় কিনে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম স্বাধীন জানান, নিলামে চিনি তিনি একাই কিনে নিয়েছেন। আদালতে জামানত বাবদ ৩ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। তবে দাম একটু বেশি পড়ে গেছে। নিলামে কেনা চিনির চালান পাবনায় পাঠিয়ে বিক্রি করবেন, এমনটি জানান তিনি।
একই আদালতে নিলামে বিক্রি হয় মোগলাবাজার থানা পুলিশের জব্দকৃত ৩০০ বস্তা চিনি। এই চালান ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকায় নিলামে কিনে নেন সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজান আহমদ পারভেজ।
তিনি জানান, ৩০০ বস্তা চিনি ১৫ টন (১৫ হাজার কেজি) চিনি ১১৫ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়েছেন। সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাটসহ প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ে ১২২ টাকা ৫০ পয়সা। সে হিসেবে ১৫ টন চিনির সর্বোচ্চ দর দিয়েছেন ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। নিলামকালে আদালতে জামানত দিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। তার সঙ্গে আরও ২/৩ জন ব্যবসায়ী জড়িত রয়েছেন বলে জানান তিনি।
বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে চিনি কেনার কারণ জানতে চাইলে মিজান আহমদ পারভেজ বলেন, এই প্রথম নিলামে চিনি কিনেছি। দাম একটু বেশি পড়ে গেছে। ক্ষতি মেনে নিয়েই চিনির চালানটি কিনেছি। আদালত থেকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে চিনি নিতে বলা হয়েছে।
একই দিনে কোতোয়ালি থানা কর্তৃক জব্দকৃত প্রসাধনীর ও ৭ বস্তা সুপারি চালান, শাহপরান থানা পুলিশের জব্দকৃত চা পাতার চালানও নিলামে বিক্রি হয়।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের কালিঘাট পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি চিনির মূল্য পড়ে ১০২ থেকে ১০৫ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। কিন্তু বাজারদরের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে নিলামে চিনি নেওয়ার বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য সিটি’।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত দিনে আদালত থেকে নিলামে নেওয়া চিনির চালানের কাগজ ব্যবহার করা হতো চোরাচালানে। সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে চোরাই পথে আনা চিনির চালান ধরা পড়লে নিলামের কাগজ তুলে ধরা হতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে। অনেকটা রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতো এই নিলামের কাগজ। যে কারণে চোরাকারবারিদের কাছে চিনির চেয়ে কাগজের গুরুত্ব বেশি।
এরআগে গত ৩ জুলাই জালালাবাদ থানা কর্তৃক জব্দকৃত ১৪ ট্রাক চিনির চালান কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি হয়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিলামে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে চিনির চালানটি কিনে নেন নগরের কালিঘাটের রুহেল ট্রেডার্স নামক চালের আড়তের ব্যবসায়ী গিয়াস মিয়া। কিন্তু তাকে সামনে রেখে তৈরি সিন্ডিকেট সদস্যরা নানা অজুহাত দেখিয়ে নিলামে বিনিয়োগ করেননি। যে কারণে কোটি টাকার চিনির চালান নিয়ে বেকায়দায় পড়েন তিনি। ফলে গত সোমবার নিলাম বাতিল ও জামানতের টাকা ফেরত পেতে আদালতের দ্বারস্থ হন।
একাধিক সূত্র জানায়, গত ৬ জুন জালালাবাদ পুলিশ ১৪ ট্রাকভর্তি চিনির চালান জব্দ করে। বিশাল এই চালানটি গত ৩ জুলাই সিলেটের আদালতে চড়াদামে নিলামে বিক্রি হয়। সে সময় চিনি নিলামের কাগজ চোরাচালানে ব্যবহারের ঘটনাটি আলোচনায় আসে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এই বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। চোরাই চিনির ক্ষেত্রে নিলামের কাগজ প্রদর্শন করলে আটকানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই চোরাই চিনিতে বিনিয়োগকারীরা বিপাকে পড়েছেন। কিন্তু এবার নিলামে চিনি কিনে নিয়ে আলোচনায় আসলেন দুই ছাত্রলীগ নেতা।