আমাদের দেশে নারীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানান সমস্যার মুখোমুখী হয়ে থাকেন। ইদানিং অনলাইনের বিস্তৃতি ঘটায় এই জগতেও নারীরা বিভিন্ন ধরণের হয়রানীর শিকার হচ্ছে। যদিও নারী অধিকারের বিষয়ে অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমাদেরকে এখনো অনেক পথ এগুতে হবে। এক্ষেত্রে সাহিত্যিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রয়েছে। তারা যদি নাটক, কবিতা, গল্প, উপন্যাস প্রভৃতির মাধ্যমে নারী অধিকারের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন, তাহলে সমাজে সচেতনাতা তৈরী হবে বলে আশা করা য়ায়। আমাদের দেশে জনসংখ্যার অর্ধেক নারীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বেশ কিছ নারী তাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। কবি, সাংবাদিক ও গীতিকার সৈয়দা রাশিদা বারী তাদের মধ্যে অন্যতম।
তিনি তার নিজস্ব অবস্থান থেকে নারীদের উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। তিনি মনে প্রাণে বিশ^াস করেন যে, সমস্ত নারীদের অবস্থার উন্নয়ন ছাড়া আমাদের দেশে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়, কারণ এই জাতীয় উন্নয়নের মূল কথাই হলো কাউকে পিছনে না ফেলে রাখা। আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী, তাদেরকে পিছনে রেখে আমরা এসডিজি'র লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো না, তাই আমাদের জন্য নারীদের উন্নয়ন একটি জরুরি বিষয়।
তিনি তার জীবনের শুরুতেই লেখালেখির মাধ্যমে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু করেন। তিনি বিশ^াস করেন যে, তার লেখালেখির মাধ্যমে দেশে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সচেতনাতা তৈরী হবে যেটা কিনা নারীদের উন্নত জীবনের পথ তৈরীর ক্ষেত্রে ভ’মিকা রাখবে। তিনি সেই সমস্ত নারীদের অভিনন্দন জানান যারা জীবনের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন।
সৈয়দা রাশিদা বারী নিজেকে বিভিন্ন প্লাটফর্মে যুক্ত করে রেখেছেন এই কারণে যে, এর মাধ্যমে তিনি ্একটি নজীর সৃষ্টি করতে চান যাতে করে অন্যান্য নারীরা এর থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে নারী অধিকারের বিষয়ে সচেতনাতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্লাটফর্মে যুক্ত হতে পারে। তিনি মনে করেন, এজন্য কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় প্রয়োজন। এটা ছাড়া নারীদের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না।
তার মতে, মেয়েরা সর্বপ্রথমে নিজেদের পিতা-মাতার দ্বারা বৈষম্যের শিকার হয়। পরিবারে পিতা-মাতারা মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের বেশী মূল্যায়ন করে থাকে। এই জাতীয় অবমূল্যায়নই আমাদের সমাজে নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের মূল কারণ। সমাজে নিজ ঘরের বাইরে নারীরা যেসমস্ত বৈষম্য বা সহিংসতার শিকার হন সেজন্য পিতা-মাতার পারবারে অবজ্ঞাকেই দায়ী করেন সৈয়দা রশিদা বারী। পিতা-মাতার পরিবারে অবজ্ঞার কারণেই তাদের এই দুর্গতি বলে মনে করেন তিনি।
তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে বালক ও বালক উভয়ের জন্যই নিজ পিত-মাতার পরিবারে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচার কাজ চালিয়ে আসছেন। নিজ পিতা-মাতার ঘরে বৈষম্যের অবসান করা সম্ভব হলে সমাজে নারীদের জন্য সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা সহজতর হবে বলে মনে করেন এই লেখিকা। এই ব্যাপারে তিনি নারীদের পাশাপশি অন্যদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
ধর্মীয় বা অন্য যে কোনো কারণে নারীর যে পরিচয়ই হোক না কেনো নারীর মূল পরিচয় হলো তারা নারী। পৃথিবীর সকল নারীর দাবী হলো--সমাজে নারীর শিক্ষা, ধ্যান জ্ঞান ও গুরত্বারোপের বিষয়ে পুরুষের সমমর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে হবে। অর্থ সম্পদ সম্পত্তিতেও পুরুষেরই সমপর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
বালিকা ও নারীদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং নিজ পিতা-মাতার সম্পত্তিতে সমান অধিকার প্রদান তাদের সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে ভ’মিকা রাখতে পারে বলে এই লেখিকা মনে করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবেশ শীঘ্রই এই দেশে তৈরী হবে।
সকলের সম অধিকারের বিষয়টি শুরু হতে হবে নিজ পিতা-মাতার ঘর হতে। এসব বিষয়ে মেয়ে-ছেলের কোন বিভেদ করা যাবেনা। তিনি মনে করেন, এই দাবী কারো ব্যক্তিগত কোনো দাবী নয়, বরং এটা বিশ্বের সকল নারীর দাবীরই প্রতিধ্বনি।
ব্যক্তিগত জীবনে দুই পুত্র সন্তানের জননী হিসাবে তিনি মনে করেন, তার কন্যা থাকলেও তাদের মূল্যায়ন ও অধিকার এর বিষয়ে আলাদা করে দেখতেন না। তিনি মনে করেন, আমাদের সমাজ মূলত পুরুষ-কেন্দ্রিক, সেজন্য নারীরা নিজ পিতা-মাতার ঘরে বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন।
এযাবত তিনি ১০১টি বই (গল্প, উপন্যাস, ছড়া, কবিতা) লিখেছেন যেখানে মূলত নারীদের অধিকারের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে উঠে এসেছে। রশিদা বারী তার সমাজ সেবা ও সাহিত্য সংক্রান্ত কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ এযাবত ৮৭টি পুরুস্কার ও ২১টি উপাধি পেয়েছেন। এছাড়া, ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ১২টি সংবর্ধনা ও সাহিত্য পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এগুলো হলো: ভারতের আন্তর্জাতিক আলো আভাষ, আন্তর্জাতিক বিশ্ব বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন এর আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরষ্কার, এবং বাউল পত্রিকা ও ‘কুশুমে ফেরা’ সংস্থা হতে নেতাজি সুভাষ স্মৃতি পুরষ্কার। সম্প্রতি তিনি ভারত রতœ উপাধিতে ভ’ষিত হয়েছেন।
তিনি বেতার, বিটিভি ও চলচ্চিত্রের গীতিকার। এযাবত তিনি ৪০০০ গান রচনা করেছেন। ভাষা সৈনিক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম এর কন্যা সৈয়দা রাশিদা বারী একজন বহুমাত্রিক লেখক। তিনি একাধারে কবি, কথাশিল্পী, সাংবাদিক ও গীতিকার। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও চলচ্চিত্রের গীতিকার। তার জন্ম দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে পরিচিত কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার একটি গ্রামে।
বর্তমানে তিনি চিন্তা করছেন তাঁর লেখাগুলোর ওপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক নির্মাণ করবেন। এখানে নারীর বিরুদ্ধে কুসংস্কার ও বৈষম্য এর বিষয়সমূহ তুলে ধরা হবে। খুব শীঘ্রই তিনি তাঁর রচিত কবিতা, গান, গল্প ও উপন্যাস এর ওপর ভিত্তি করে নাটক ও চলচ্চিত্র বানানোর কাজ শুরু করবেন।
সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও রয়েছে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন সময়ে তিনি স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় মাসিক পত্রিকা ’স্বপ্নের দেশ’ এর সম্পাদক-প্রকাশক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সমাপ্ত/