ঢাকা, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫,
সময়: ১২:১৪:২১ AM

একটা দল হাসিনার মতো মিথ্যাচার করছে: রিজভী

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
25-10-2025 09:13:47 PM
একটা দল  হাসিনার মতো মিথ্যাচার করছে: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “অনেক রাজনৈতিক দল নানা রকম কথা বলে, কেউ বলেন, তাঁরা নাকি মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন, জান্নাতের হুরপরি পাইয়ে দেবেন, কত অদ্ভুত সব প্রতিশ্রুতি দেন, শুধু ভোট পাওয়ার আশায়। এই যে মিথ্যাচার আর ভণ্ডামি—শেখ হাসিনা ঠিক তেমনই করেছেন।”শনিবার (২৫ অক্টোবর) নয়াপল্টনে জিয়া মঞ্চ আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এসব কথা বলেন।তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রীরা জনগণের টাকা লুট করেছেন। তাঁদের লন্ডনে নাকি ১৫০টি বাড়ি রয়েছে! অথচ তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন করছেন, দেশের মানুষ নাকি এখন পেট ভরে খাচ্ছে, শান্তিতে-আয়েশে দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। হাটে-বাজারে দেখা যায়—একজন মা তাঁর সন্তানকে বিক্রি করছে, খাদ্যের অভাবে কাঁদছে। আর শেখ হাসিনা অবলীলায় মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন, প্রতারণা করে যাচ্ছেন।”

বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, “জনগণের ঘামঝরা টাকায় বিদ্যুৎ, পদ্মা সেতু, অবকাঠামো—সবখানেই চলেছে লোপাট আর হরিলুট। তাঁর মেয়ে, ছেলে, ভাগ্নি, ভাগিনা—সবাই লন্ডনে আরামে-আয়েশে বাস করছে। শেখ হাসিনা তাঁদের জন্যই এসব ব্যবস্থা করে রেখেছেন।”

রিজভী বলেন, “শেখ হাসিনার বাড়ি ধানমন্ডিতে, শেখ রেহানারও বাড়ি রয়েছে। তারপরও ৬০ কাঠা জমি পূর্বাচলে! কার নামে? শেখ হাসিনার ছেলে-মেয়ের নামে, শেখ রেহানার ছেলে-মেয়ের নামে। একের পর এক সম্পত্তি! এমনকি শেখ হাসিনার এক ভাগ্নি ইংল্যান্ডের নাগরিক, সেখানে এমপি পদেও আছেন। তাহলে তাঁর এত সম্পত্তি বাংলাদেশে কেন? ইংল্যান্ডে তো রাজনীতিবিদদের জবাবদিহি করতে হয়। এই বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও উঠে এসেছে, আর তা নিয়ে সরকারজুড়ে টানাপোড়েন চলছে।”

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, “এই প্রতারণা ও মিথ্যাচারের ওপর নির্ভর করেই শেখ হাসিনা তাঁর পাতানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জনগণের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। মানুষকে খুন করেছেন, গুম করেছেন, ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করেছেন। ১৬ বছর ধরে তিনি জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছেন। কিন্তু ইতিহাস বলে—লুটেরা, নির্যাতনকারী, নিপীড়নকারী বা খুনি কেউই টিকে থাকতে পারে না। তাঁদের পতন অবশ্যম্ভাবী।”

রিজভীর দাবি, শেখ হাসিনা এখন নানা কৌশলে দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশের সহযোগিতায় নাশকতার ইঙ্গিতও রয়েছে—এমন প্রশ্ন জনগণের মনে জেগেছে।

বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া জনগণের আশীর্বাদধন্য একজন রাজনীতিবিদ। জনগণের ভালোবাসায় তিনি সমাদৃত নেত্রী। তারপরও তাঁকে বছরের পর বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। তাঁর যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি, এমনকি ওষুধও সঠিকভাবে সরবরাহ করা হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “জনগণের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে—শেখ হাসিনা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাঁকে বিষপ্রয়োগ করেছেন কিনা, কিংবা তাঁর ওষুধের মধ্যে বিষ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা—এই নিয়ে আজও মানুষ প্রশ্ন তোলে। কারণ, যিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন, যিনি কারাগারে নেওয়ার সময় হেঁটে গিয়েছিলেন—টেলিভিশনে দেশের মানুষ তা দেখেছিল—সেই নেত্রী আজ বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাহলে নিশ্চয়ই তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছে।”

রিজভী আরও বলেন, “এই নির্যাতন ও নিপীড়ন শুধু বেগম জিয়ার ওপরই নয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপরও হয়েছে। শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল হিসেবে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছিল। তবুও আল্লাহর রহমতে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং বর্তমানে লন্ডন থেকে প্রতিদিন দেশের খবরাখবর রাখছেন।”

তিনি দাবি করেন, “তারেক রহমান নিয়মিতভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অসহায় পরিবার, শহীদ পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁদের পাশে দাঁড়াতে। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি আজ মানবহিতৈষী ও সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে সারা বাংলাদেশজুড়ে।”

সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, “একদিকে শেখ হাসিনা ‘শান্তি’র কথা বলেন, আর অন্যদিকে দেশে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। মিরপুরে রাসায়নিক গুদাম পুড়ে ১৬ জন মারা গেল, তার দুই দিন পর এয়ারপোর্টে আগুন, তারপর লঞ্চে আগুন, আবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ড—এটা কি কাকতালীয়? না, এর পেছনে নিশ্চয়ই একটি ষড়যন্ত্র আছে।”

তিনি বলেন, “মানুষ শান্তি চায়, স্বাধীনতা চায়। কিন্তু শেখ হাসিনা বন্দুকের নল দিয়ে আইন পাশ করেছেন, বন্দুকের মুখে জনগণের ওপর দমননীতি চালিয়েছেন। আদালত, হাইকোর্ট, নির্বাচন কমিশন—সবকিছু তিনি নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। তাঁর পাতানো সংসদ দিয়ে তিনি নিজের খুন, লুটপাট, নিপীড়ন আর স্বেচ্ছাচারিতা বৈধ করার চেষ্টা করেছেন।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, “মানুষের কণ্ঠের স্বাধীনতা থাকতে হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনেই আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং জনগণের কাছেই জবাবদিহি করতে হবে।”

সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম।