নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের গঠন প্রক্রিয়া ও আচরণ নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ নয়, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায়।বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে ‘বিমাতা’সুলভ আচরণের অভিযোগ
নাহিদ ইসলাম বলেন,
"নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী কাজ করার কথা থাকলেও তারা সে রকম ভূমিকা রাখছে না। বরং কিছু রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত এবং অন্যদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন অপরিহার্য।
"নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে এর দায়ভার সরকারের ওপরই বর্তাবে। তাই আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা জরুরি।"
জুলাই গণহত্যা ও বিচার নিয়ে সন্তোষ
বৈঠকে জুলাই মাসে সংঘটিত গণহত্যা এবং এর বিচার নিয়ে এনসিপি আলোচনা করেছে বলে জানান নাহিদ। তিনি বলেন,
"আজকে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেখেছি, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কয়েকজন সেনা সদস্যকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।"
এই উদ্যোগের জন্য সরকার ও ট্রাইব্যুনালকে ধন্যবাদ জানান তিনি। তবে একইসঙ্গে তিনি সারাদেশে শহীদ পরিবার ও আহতদের করা মামলাগুলোর অগ্রগতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
"আসামিরা জামিনে মুক্তি পাচ্ছে, শহীদ পরিবার ও আহতদের হুমকি দিচ্ছে—এই পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, এই মামলাগুলোর একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করতে হবে। ৮০০’র অধিক মামলার কী অবস্থা, কী প্রক্রিয়ায় সেগুলো নিষ্পত্তি হবে—তা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।"
জুলাই সনদ নিয়ে সতর্ক অবস্থান
জুলাই সনদ স্বাক্ষর নিয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে নাহিদ বলেন,
"আমরা এখনো সনদে স্বাক্ষর করিনি। কেবল কাগজে-কলমে সনদ থাকলেই হবে না, বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চাই। সেই নিশ্চয়তা পেলে আমরা সনদে স্বাক্ষর করবো।"
জনপ্রশাসনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
নাহিদ ইসলাম প্রশাসনিক নিয়োগ ও বদলি নিয়েও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন,
"এসপি, ডিসি, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দলীয়করণ হচ্ছে। বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসনের বিভিন্ন পদ ভাগ করে নিচ্ছে। এমনকি উপদেষ্টা পরিষদের ভেতর থেকেও এসব কর্মকাণ্ডে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।"
তিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন,
"যেসব উপদেষ্টা এ ধরনের রাজনৈতিক পক্ষপাতের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।"