
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল বিভাগের ছয়টি আসনে বিএনপির হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী ৫০ জনের বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী ইতোমধ্যে সক্রিয় প্রচারণা শুরু করেছেন। তারা সবাই দলীয় প্রতীক ‘ধানের শীষ’ নিয়ে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।যদিও নির্বাচন কমিশন এখনো ভোটের তারিখ ঘোষণা করেনি, ধারণা করা হচ্ছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা বরিশালে মাঠপর্যায়ে তৎপরতা জোরদার করেছেন।
অভ্যন্তরীণ কোন্দল বৃদ্ধি পাচ্ছে
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অস্বাভাবিকভাবে বেশি সংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশীর কারণে বরিশাল বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও কোন্দল তীব্র আকার ধারণ করেছে। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এই বিভাজন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।
দলীয় সতর্কতা ও নির্দেশনা সত্ত্বেও অনেক প্রার্থী কেন্দ্রীয় পর্যায়ে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে।
আসনভিত্তিক মনোনয়নপ্রত্যাশী তালিকা
বরিশাল-১ (আগৈলঝাড়া-গৌরনদী):
-
জহির উদ্দিন স্বপন (চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক এমপি)
-
প্রকৌশলী আবদুস সবাহান (কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য)
-
আকন কুদ্দুসুর রহমান (বিভাগীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক)
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া):
-
সরফুদ্দিন আহমেদ সান্তু (কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য)
-
মোহাম্মদ দুলাল হোসেন
-
দেলোয়ার হোসেন
-
কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু (সহসম্পাদক, বন ও পরিবেশ বিষয়ক)
-
সাঈদ মাহমুদ জুয়েল (সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল)
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদি):
-
সালামা রহমান (স্থায়ী কমিটির সদস্য)
-
অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন (সহসভাপতি)
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ):
-
মেজবাহ উদ্দিন ফারহাদ (সাবেক এমপি)
-
রাজিব আহসান (সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল)
বরিশাল-৫ (সদর):
-
মজিবুর রহমান সরোয়ার (তিনবারের এমপি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা)
-
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল (চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা)
-
আবু নাসের মো. রাহমাতুল্লাহ (কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য)
-
এবায়দুল হক চাঁন
-
বিলকিস জাহান শিরিন (সাবেক বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক)
-
মনিরুজ্জামান ফারুক (মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক)
-
আবুল কালাম শাহিন (জেলা বিএনপির সদস্যসচিব)
-
আফরোজা খানম নাসরিন (সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক)
-
জিয়াউদ্দিন সিকদার (মহানগর সদস্যসচিব – প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন)
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ):
-
আবুল হোসেন খান (সাবেক এমপি)
-
নজরুল ইসলাম খান রাজন (সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক)
-
নূরুল ইসলাম খান মাসুদ (সাবেক যুবদল ও ছাত্রদল নেতা)
-
আবু জাফর সিকদার বাদল (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবক দল)
কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা
মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলাদলি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও মৌখিক বিরোধও দেখা দিয়েছে।
দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একাধিকবার সতর্কবার্তা জারি করেছে, এমনকি তারেক রহমান নিজেও কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন জনসম্মুখে কোনো বিভেদ না দেখাতে।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, জহির উদ্দিন স্বপন (বরিশাল-১), অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন (বরিশাল-৩) এবং রাজিব আহসান (বরিশাল-৪) ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে অন্য প্রার্থীরা বিষয়টি ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
এই ভিন্নমত ও প্রতিযোগিতার মধ্যেও কেন্দ্রীয় নেতারা ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছেন এবং সব প্রার্থীকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিচ্ছেন।
বিএনপির অবস্থান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন,
“বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তাই অনেক প্রার্থীর আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি যখন প্রতিটি আসনে একজন করে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে, তখন এই বিভাজন দূর হয়ে যাবে। আমি বিশ্বাস করি, কেউই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন না।”
তিনি আরও বলেন,
“এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। জনগণ দীর্ঘদিন ধরে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা আশা করি, এবার সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে।”