
গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নির্বাচনী প্রস্তুতি, দলীয় সভা-সমাবেশ, লোগো সংস্কার ও নারীদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে দলটি পরিবর্তন ও সংস্কারের পথে রয়েছে। তবে মুক্তিযুদ্ধ এবং ধর্মীয় ইস্যুতে দলটি নানা সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে।দলের কার্যক্রম বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মঞ্চ, সভা-সমাবেশের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে লাল-সবুজ রঙের ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়া জাতীয় পতাকার আদলে নতুন একটি লোগোও প্রকাশ করেছে দল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি জামায়াতের দেশপ্রেম প্রদর্শনের কৌশল এবং মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে বিতর্ক কমানোর প্রচেষ্টা।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন বলেন, “যুগের পরিবর্তন ও রাজনীতির চাহিদা অনুযায়ী নীতি-নির্ধারণে পরিবর্তন আসতে পারে। মৌলিক বিষয়গুলো আমাদের ইসলামের মূলনীতি অনুযায়ী অটুট থাকবে।”
দলীয় কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জামায়াতের মহিলা বিভাগে তিনটি পর্যায়ের সদস্য রয়েছে: সহযোগী সদস্য, কর্মী ও রুকন। রুকন সদস্যের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। মোট নারী-পুরুষ মিলিয়ে দলের কর্মী সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি, যার মধ্যে নারী প্রায় ৪০ শতাংশ। দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, “নারীদের ভোটদানের আগ্রহ বাড়ছে। ইসলামের মৌলিক নীতির আলোকে নারীদের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হবে।”
লগো সংস্কারের মাধ্যমে আরবি শব্দ বাদ দেওয়া হয়েছে এবং নতুন লোগোতে জাতীয় পতাকার রঙ ব্যবহৃত হয়েছে। এটি রাজনীতিতে নতুন বার্তা দিচ্ছে এবং দল সেক্যুলার চিত্রের দিকে যেতে চাইছে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
নির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে যোগ্য ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে। এর উদাহরণ হিসেবে ঢাকা-৭ আসনে হাজি হাফেজ এনায়েত উল্লাহকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
গত বছরের আগস্টের পর থেকে বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিনের জোট সমঝোতা বন্ধ হওয়ায় জামায়াত অন্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার চিন্তাভাবনা করছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (PR) ভোটসহ পাঁচটি দাবির ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনও পরিকল্পনা করছে তারা।
জামায়াতের গঠনতন্ত্রের সংস্কার ও কার্যক্রমের লক্ষ্য এখন ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠন, যেখানে দেশের জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রামের মর্যাদা রক্ষা করা হবে।