ঢাকা, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫,
সময়: ১১:১৯:২৩ PM

আমান উল্লাহ :গণতন্ত্র ও জনসেবার এক জীবন্ত প্রতীক

স্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
20-12-2025 08:52:39 PM
আমান উল্লাহ :গণতন্ত্র ও জনসেবার এক জীবন্ত প্রতীক

 ঢাকার কেরাণীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে ২৫ জানুয়ারি ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করা আমান উল্লাহ আমান বাংলাদেশে এক সুপরিচিত রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য নেতা। তাঁর পিতা মেঘু মিয়া এবং মা করিমন নেসা তাঁকে শৃঙ্খলা ও জনসেবা চর্চার মূল্যবোধে লালন করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকালে আমান শুধু বিদ্যাগত যোগ্যতা অর্জন করেননি, বরং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ শুরু করেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক যাত্রায় তিনি একজন অভিজ্ঞ নেতা, সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দেশের গণতন্ত্র এবং জনকল্যাণের প্রতি অটল প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন।

রাজনীতিতে পদার্পণ করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মাধ্যমে। শিক্ষার্থীবক্তি হিসেবে দ্রুত নেতৃত্বের দক্ষতা প্রদর্শন করেন। ১৯৯০-এর দশকে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিরোধী গণআন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা ছাত্র ও সাধারণ জনগণকে একত্রিত করে স্বৈরাচার পতনে অবদান রাখে। ১৯৯০–৯১ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন, যা তার গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রাথমিক স্বীকৃতি হিসেবে ধরা হয়।

ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতিতে তার পদার্পণ সহজেই ঘটে। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-৩ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ৯৭,২৯৯ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তফা মোহসিন মন্টু-কে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জনগণের প্রতি তার সেবা এবং ধারাবাহিক নেতৃত্বের কারণে তিনি আজ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯৬ সালের একদলীয় নির্বাচন এবং পরবর্তী সপ্তম সংসদ নির্বাচনে তিনি যথাক্রমে জয়লাভ করেন, সর্বশেষ ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নসরুল হামিদকে পরাজিত করে ১,৬৯,৯৮০ ভোট পান।

১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি সরকার গঠনের পর আমান উল্লাহ আমানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদে নিয়োগ করা হয়। এই সময়ে তিনি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নীতি প্রণয়নে অবদান রাখেন। ২০০১ সালে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২৮ অক্টোবর ২০০৬ পর্যন্ত এই দায়িত্বে থাকেন। উভয় মন্ত্রণালয়ে তার পদাধিকারকালে তিনি সততা, নিষ্ঠা ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে অঙ্গীকারের পরিচয় দেন।

রাজনৈতিক চাপে, জেল-জুলুম ও ব্যক্তিগত কষ্ট সত্ত্বেও তিনি কখনও দলের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। গত ১৭ বছরে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে, বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি বিএনপির নীতির প্রতি অটল থাকেন এবং দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া-র পূর্ণ বিশ্বাস অর্জন করেন। কেরাণীগঞ্জে তার জনপ্রিয়তা অত্যন্ত বেশি। তিনি সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান এবং সঙ্কটকালেও নাগরিকদের সহায়তার হাত বাড়ান।

আমান উল্লাহ আমানের রাজনৈতিক প্রভাব কেবল নির্বাচনী সাফল্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি কেরাণীগঞ্জকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে তুলনীয় আধুনিক ও উন্নত নগরী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। নাগরিকদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক, সহানুভূতি এবং ধারাবাহিক যোগাযোগ তাকে সকল রাজনৈতিক দলের সীমানা অতিক্রম করে জনগণের প্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই বছরও তিনি ঢাকা-২ আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, এবং তার জনপ্রিয়তার কারণে কেরাণীগঞ্জে এখনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্রায় নেই বললেই চলে।।

রাজনৈতিক জীবনের বাইরে আমান উল্লাহ আমানকে একজন সজ্জন, নম্র এবং আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার ব্যক্তিগত জীবন স্থিতিশীল ও প্রতিশ্রুতিশীল; তিনি বিবাহিত, স্ত্রী সাবেরা আমান। তাঁরা সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন এবং এটি জনগণের মধ্যে তাদের সুনাম বাড়িয়েছে।

ছাত্র আন্দোলন থেকে সংসদীয় দায়িত্ব, প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে দলের উপদেষ্টা পদ পর্যন্ত, আমান উল্লাহ আমান সবসময় গণভিত্তিক নেতৃত্বের আদর্শ প্রতিপন্ন করেছেন। তিনি বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং পূর্বে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন, যা তার দলের কৌশলগত নেতৃত্বে অবদানকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

আমান উল্লাহ আমানের জীবনকাহিনী হলো অধ্যবসায়, সততা ও জনসেবার শক্তিশালী উদাহরণ। রাজনৈতিক অস্থিরতা, চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি সত্ত্বেও তিনি গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের কল্যাণের প্রতি অটল থেকেছেন। কেরাণীগঞ্জ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার জনগণের জন্য তিনি শুধুই একজন রাজনীতিবিদ নন, তিনি আশা, সেবা এবং নৈতিক নেতৃত্বের প্রতীক

বর্তমান সময়ে যেখানে রাজনৈতিক আদর্শ প্রায়ই ব্যক্তিগত স্বার্থের কাছে হার মানে, আমান উল্লাহ আমানের বিএনপির নীতি অনুসরণ, অসহায়দের সেবায় নিঃস্বার্থ উদ্যোগ এবং ভোটারদের প্রতি অটল আনুগত্য সকলের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তার দীর্ঘমেয়াদি জনপ্রিয়তা ও ন্যায়পরায়ণতা তাকে বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রদ্ধেয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।