ঢাকা, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫,
সময়: ০৭:৫২:৫১ PM

হাদি হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’শাহীন চেয়ারম্যান!

স্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
20-12-2025 05:12:49 PM
হাদি হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’শাহীন চেয়ারম্যান!

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির সংগঠক শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ ওরফে ‘শাহীন চেয়ারম্যান’-এর নাম উঠে এসেছে।গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন শাহীন চেয়ারম্যান নিজেই। পাশাপাশি এ ঘটনায় তার সহযোগী হিসেবে আরও কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে, যাদের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের একাধিক নেতা রয়েছে।তদন্তে আরও জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের পর ঘাতকদের ঢাকা থেকে সীমান্ত পর্যন্ত পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হামিদ। এ ঘটনায় তার ভূমিকার তথ্য পাওয়ার পর থেকেই তাকে গ্রেপ্তারের জন্য তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সূত্র বলছে, জুলাই বিপ্লবে শরিফ ওসমান হাদির সক্রিয় ভূমিকা এবং গত বছরের ৫ আগস্টের পর তার প্রকাশ্য বক্তব্য ও রাজনৈতিক তৎপরতায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। দলটির জন্য বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে ‘হিটলিস্ট’-এ তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপরই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার ছক আঁকা হয়।

তথ্য অনুযায়ী, শাহীন আহমেদ দীর্ঘদিন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তবে রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি এলাকায় একজন প্রভাবশালী সন্ত্রাসী হিসেবেও পরিচিত। শেখ হাসিনা সরকারের সময় সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে তিনি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। অস্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরেই তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শাহীন চেয়ারম্যান অন্যান্য প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের মতোই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। শুরুতে নীরব থাকলেও গত কয়েক মাস ধরে তিনি আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে দেশে থাকা আওয়ামী লীগের স্লিপার সেল সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হত্যাকাণ্ডসহ নানা নাশকতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, হোয়াটসঅ্যাপ কল ও এসএমএসের সূত্র ধরে হাদি হত্যায় শাহীন চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। ঘটনার আগে ও পরে ঘাতকদের সঙ্গে পলাতক ছাত্রলীগ নেতা হামিদের একাধিক যোগাযোগের তথ্যও উদ্ধার হয়েছে। পাশাপাশি ভারতে অবস্থানরত আরও কয়েকটি গ্রুপ অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকায় থাকা স্লিপার সেল সদস্যদের কার্যক্রম সমন্বয়ের তথ্য মিলেছে।

তদন্তসূত্র জানায়, মামলার সন্দেহভাজন তালিকায় কয়েকজন রাজনীতিকের নামও উঠে এসেছে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের যৌথভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া পলাতক শাহীন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কেরানীগঞ্জের দুই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারে অভিযানও জোরদার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম বলেন, সব দিক বিবেচনায় নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত চলছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার পরিচয় প্রকাশ করা সম্ভব হবে।