ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সময়: ১২:৩৭:৫৪ PM

অপহরণের ঘটনায় পাভেল কারাগারে

এস এম মনিরুল ইসলাম,সাভার:
24-11-2024 12:37:54 PM
অপহরণের ঘটনায় পাভেল কারাগারে

সাভারে এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর স্ত্রী সোনালী আক্তার ও প্রেমিক জয়ের অসামাজিক কার্যকলাপউ ফাঁস করায় রকি মন্ডল নামে এক যুবককে অপহরণের পর ৩ দিন আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।রকি মন্ডলের পরিবারের অভিযোগ সাভারের স্থানীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী মোহাম্মদ পাভেল ওরফে তোতলা পাভেলের কাছে তার স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিককে একসাথে ধরিয়ে দেওয়ার পর উল্টো নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। শুধু তাই নয় এসব অপকর্ম ঢাকতে ওই যুবককে একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।তবে এত কিছুর পরেও শেষ রক্ষা হয়নি অপহরণ ও নির্যাতন কান্ডের মূল হোতা মোহাম্মদ পাভেল ওরফে তোতলা পাভেলের। অবশেষে রকি মন্ডলের পরিবারের দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার জামিন চেয়ে আত্মসমর্পণ করার পর আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার থানার তদন্তে থাকা মামলার নথি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা আদালতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন শাখার (জিআরও)  উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) এসএম শাহরিয়ার।তিনি বলেন, ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট- ৩ আদালতে হাজির হয়ে দুই আসামি জামিন চেয়েছিলেন। আদালত প্রধান আসামি পাভেলের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে তার স্ত্রী সোনালী আক্তারের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। এই মামলার অন্য আসামিরা এখনো পলাতক রয়েছে।

 

অন্য আসামিরা-আরিফ (২০), ইব্রাহিম ওরফে রিংকু (২৬), শরীফ ওরফে ধলা শরীফ (২৭), জয়(২৬) সহ অজ্ঞাত আরও তিনজন।

 

এরআগে রোববার ২৬ নভেম্বর গভীর রাতে মজিদপুর এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী পাভেল ওরফে তোতলা পাভেলের ভাড়া বাসা থেকে রকি মণ্ডলকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পুলিশ। পরে অপহরণ ও নির্যাতনে অভিযুক্ত একজনের দায়ের করা মামলায় দুপুরে রকি মন্ডলকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। রকি মন্ডল (২৮) রাজশাহীর পুঠিয়া থানার সরিষাবাড়ী গ্রামের ফুলাল মন্ডলের ছেলে। তিনি গত এক বছর যাবত পাভেলের লাইসেন্সবিহীন ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

 

রকি মন্ডল সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের বলেন, তার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের মালিক পাভেলের স্ত্রী সোনালী আক্তারকে পরকীয়া প্রেমিক জয়ের সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত অবস্থায় দেখে ফেলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে।  শুধু তাই নয় তার স্ত্রীর পরকীয়ার ব্যাপারে পাভেলকে বিষয়টি জানালে তাদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। এরপর স্ত্রী সোনালীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পাভেল সহ কয়েকজন তাকে ২৩ সেপ্টেম্বর রাত থেকে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে ২৬ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সময় মত তাকে উদ্ধার করে প্রাণ রক্ষা করায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান রকি মন্ডল। 

 

এদিকে রকি মন্ডলকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে তার ফুপু সেলিনা বাদী হয়ে পাভেল, তার স্ত্রী সোনালী ও পরকিয়া প্রেমিক জয়সহ জড়িত ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা (নং-২) দায়ের করেন। 

 

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ নভেম্বর রাত ১১ টায় রকি মন্ডলকে ইমারজেন্সি ইন্টারনেট লাইন দেওয়ার কথা বলে বাসায় ডেকে নিয়ে অপহরণ করেন পাভেল ওরফে তোতলা পাভেল। অতঃপর পাভেল তার স্ত্রী সোনালীর সামনে রকি মন্ডলকে জিজ্ঞেস করে" তুই আমার বউয়ের ব্যাপারে কি বলছস.? তখন রকি মন্ডল "কিছু বলি নাই" বলার সাথে সাথে  আসামিরা রকি মন্ডলকে একটি রুমে তিন দিন আটক রেখে লাঠি সোটা, মরিচ বাটার পুতা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা ফোলা যখম করে। পরে রকি মন্ডলের হাত-পা বেঁধে ঘরের মেঝেতে ফেলে রাখে। এ সময় রকি মন্ডল পানি চাইলে তাকে পানি না দিয়ে প্রস্রাব করিয়ে প্রস্রাব খাওয়ানোর পর আরো মারধর করে প্রাণনাশের হুমকি দেয় আসামিরা। এছাড়াও পাভেলের স্ত্রী সোনালী ভুক্তভোগী রকি মন্ডলের পিঠের বিভিন্ন স্থানে কামড় দিয়ে জখম করে।

 

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ একাধিক সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে আগত সাভার পৌরসভা এলাকার স্বঘোষিত পাতি নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মোহাম্মদ পাভেল ওরফে তোতলা পাভেল দীর্ঘদিন ধরে সাভার পৌরসভার শাহীবাগ ও মজিদপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তিনি কিছুদিন আগে স্থানীয় সাংবাদিকদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন সাভার প্রেসক্লাবে ঢুকে সিনিয়র সাংবাদিকদের লাঞ্ছিতসহ হামলা ও ভাঙচুর চালায়, একাধিক সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীকে হত্যা চেষ্টা চালায়, প্রকাশ্যে মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করে, অন্যের ফ্ল্যাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে। এছাড়াও সন্ত্রাসী পাভেল চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে মোট ৬ টি মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক জিডি ও অভিযোগ রয়েছে। চাঁদার দাবিতে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের এক ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সাভার মডেল থানা পুলিশের তৎপরতায় গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো বিভিন্ন অপকর্মে জড়ানোর পাশাপাশি অপহরণ ও পাশবিক নির্যাতনের মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর আদালতে আত্মসমর্পণ করলে সন্ত্রাসী পাভেল ওরফে তোতলা পাভেলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।