ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫,
সময়: ১২:৪৫:০৪ AM

ত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ে ভোগান্তিতে নগরবাসী

স্টাফ রিপোটার।।দৈনিক সমবাংলা
17-09-2025 10:17:11 PM
ত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ে ভোগান্তিতে নগরবাসী

গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে সাধারণ মানুষের মূল সড়কেই হাটা কষ্ট, অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালালেও ফলাফল শুন্য, পার্কিং সিস্টেমকে মেট্রোরেলের বাইরে নেওয়া গেলে এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ও শহরে জমির সংকট, বাজেট সীমাবদ্ধতায় বড় চ্যালেঞ্জ ঢাকার বিজয় স্মরণী কিংবা ফার্মগেট—দুটি জায়গার নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে যানজটের এক বিরক্তিকর ছবি। সকালবেলায় অফিসযাত্রীদের ঢল নামার সঙ্গে সঙ্গে সড়কজুড়ে তৈরি হয় গাড়ির সারি। অথচ যানজটের মূল কারণ সবসময় যানবাহনের সংখ্যা নয়, বরং যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। রাস্তার একপাশ জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস কিংবা পিকআপ ভ্যান—সব মিলিয়ে লেন সংকুচিত হয়ে আসে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় সাধারণ মানুষকে।বিজয় স্মরণীর চত্বর থেকে যখন ফার্মগেটের দিকে এগোনো হয়, দেখা যায় ফুটপাতের বড় অংশ দখল হয়ে আছে গাড়ির সারিতে। পথচারীদের হেঁটে চলার কোনো সুযোগ নেই। ফলে মানুষকে নামতে হয় মূল সড়কে, যেখানে বাস, রিকশা আর মোটরসাইকেলের ভিড়ে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সড়কের দু’ধারে অবাধে গাড়ি পার্ক হওয়ায় চলাচলের লেন একেবারেই কমে গেছে। একটি বাস বা ট্রাক ঢুকলেই পুরো রাস্তা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায়। নগরবাসীর প্রত্যাশা, প্রশাসন দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। মাল্টি-স্টোরি পার্কিং সেন্টার, নির্দিষ্ট পার্কিং জোন ও জনসচেতনতা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। অন্যথায় যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং নগরের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। এখনই সময় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার, নয়তো প্রতিদিনের এই দুঃসহ চিত্র ঢাকার নাগরিক জীবনের চিরচেনা বাস্তবতায় পরিণত হবে।অফিসগামী নির্মল রায় বললেন, প্রতিদিনই অন্তত আধা ঘণ্টা সময় নষ্ট হয় শুধু গাড়ি রাখার জায়গা খুঁজতে গিয়ে। অথচ কাজের চাপ সামলাতে আমার সময়ের মূল্য অনেক। অনেক সময় বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি রাখতে হয়, তখন ট্রাফিক পুলিশ এসে জরিমানা করে। এতে সময়, টাকা আর মানসিক শান্তি—সবই নষ্ট হয়।ফার্মগেট এলাকায় কলেজগামী শিক্ষার্থী ময়ৌরী জামান জানালেন, পরীক্ষার দিনে সবচেয়ে বিপদে পড়ি। গাড়ি নামিয়ে দেওয়ার মতো জায়গাই থাকে না। অনেক সময় বাবাকে অনেক দূরে গিয়ে গাড়ি রাখতে হয়, আমি দৌড়ে পরীক্ষার হলে ঢুকি। এতে পড়াশোনার মনোযোগও নষ্ট হয়। চালক আল আমিনের অভিজ্ঞতা একই রকম। তিনি বলেন, গাড়ি পার্ক করার মতো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। যত্রতত্র রাখলে জরিমানা, আবার যাত্রী নামাতে গেলে জায়গা পাওয়া যায় না। সারাদিন দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। আমরা তো শুধু গাড়ি চালাচ্ছি, কিন্তু সব চাপ আমাদের ওপর পড়ছে। স্থানীয় দোকান মালিক আমির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দোকানের সামনে সারি সারি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। ক্রেতারা দোকানে ঢুকতেই পারেন না। অনেক সময় ক্রেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে যান। এতে আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে আর কতদিন চলবে? বিজয় স্মরণীর ভেতর দিয়ে হাঁটলে দেখা যায়, ফুটপাত দখল হয়ে আছে গাড়িতে। সাধারণ মানুষকে মূল সড়কেই হেঁটে যেতে হচ্ছে। এক বৃদ্ধ পথচারী আক্ষেপ করে বললেন, আমরা হেঁটে চলার মানুষ, কিন্তু ফুটপাতও দখল হয়ে গেছে গাড়িতে। মনে হয় এই শহর কেবল গাড়ির জন্য বানানো।ফার্মগেটের চিত্রও আলাদা নয়। সেখানে দিনের পর দিন একই অব্যবস্থা। দুপুরবেলায় ট্রাফিক পুলিশের হুইসেল বাজানো আর গাড়ি সরাতে চিৎকার করার দৃশ্য দেখা গেলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার আগের অবস্থা ফিরে আসে। যেনো এই সমস্যার কোনো শেষ নেই। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং শুধু যানজট তৈরি করছে না, মানুষের মানসিক চাপও বাড়াচ্ছে। সময় নষ্ট হচ্ছে, কর্মক্ষমতা কমছে, ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। নগরের জীবনের মান নষ্ট হচ্ছে প্রতিদিন। বিজয় স্মরণী ও ফার্মগেটের অভিজ্ঞতা আসলে পুরো ঢাকার প্রতিচ্ছবি।সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই সমস্যার সমাধান কেবল মাল্টি-লেভেল পার্কিং নির্মাণের মাধ্যমেই সম্ভব। জমির সংকট আর বাজেট সীমাবদ্ধতা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার পরিকল্পনায় পার্কিং ব্যবস্থাপনা কখনো গুরুত্ব পায়নি। বহুতল ভবন, শপিংমল কিংবা অফিস ভবনের নকশায় পার্কিং স্পেস থাকলেও বাস্তবে তা ব্যবহার হয় না। অনেক গাড়ির মালিক নিয়ম জেনেও মানতে চান না। এতে সমস্যাটি দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে।বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এখানে মূল সমস্যাটি মেট্রোরেলকেন্দ্রিক। আমরা যদি উন্নত দেশগুলোর মেট্রোরেলের দিকে তাকাই, দেখতে পাই তারা পার্কিং সিস্টেমকে বাইরে স্থানান্তর করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে তা হয়নি। আমাদের মেট্রোরেলের রাস্তা সড়কের উপর, কিন্তু আবার গাড়ির পার্কিং সড়ককেন্দ্রিক। এ কারণেই এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এই সংকট তৈরি হবে—এটা আমরা আগেই বলে এসেছি। এখন তা বাস্তবে দেখা যাচ্ছে।তিনি আরও বলেন, যদি পার্কিং সিস্টেমকে মেট্রোরেলের বাইরে নেওয়া যায়, তাহলে আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। এখন সংশ্লিষ্ট মহলের ভাবা দরকার—বিজয় স্মরণীর চত্বর থেকে ফার্মগেটমুখী সড়কে যে পার্কিং রয়েছে তা কীভাবে নির্মূল করা যায়। কারণ বাইরে যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করলেই সমাধান সম্ভব। বিভিন্ন স্থানে ফাঁকা জায়গা আছে, সেগুলো কাজে লাগাতে পারলেই হবে।