ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৬,
সময়: ০৩:৫৫:৫৪ PM

পর্ব ৬: প্রথম দেখা

মান্নান মারুফ
30-12-2025 02:03:04 PM
পর্ব ৬: প্রথম দেখা

নীলা হালকা জ্বর নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
রবি পাশে চুপচাপ বসে আছে।
কেউ কিছু বলছে না।
শব্দের বাইরে বোঝাপড়া, নীরব সংযোগ।
চেয়ারতে বসে রবি শুধু দেখছে—নীলার কেমন নিঃশব্দে শরীর ভরে অসুস্থতা।

হাসপাতালের হালকা আলো, মৃদু যন্ত্রের আওয়াজ, দূরের পদচাপ—সব মিলিয়ে যেন সময় থমকে গেছে।
রবি হাত বাড়ায়, কিন্তু ছোঁয় না।
নীলার চোখে প্রথমবার এক অদ্ভুত প্রশান্তি দেখা যায়।
কেন? কারণ বোঝা যায়—ছোঁয়া ছাড়া, চাপ ছাড়া, পাশে থাকা কতটা শক্তিশালী।

নীলা দুর্বল কণ্ঠে বলে—
—“তুমি কি আমার হাত ধরবে না?”
রবি ধীরে মাথা নেড়ে উত্তর দেয়—
—“চাইলে ধরব। কিন্তু যদি তুমি নিজেই শক্ত হতে চাও, আমি পাশে থাকাই যথেষ্ট।”

নীলা চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে।
এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো—রবি শুধু শারীরিকভাবে নয়, আত্মার মাধ্যমে পাশে আছে।
হৃদয়ের নীরব সংযোগ।
দূরত্বে থাকা, স্পর্শ না করা—সব মিলিয়ে ভালোবাসা গভীরতর।

রবি কাগজের ছোট নোটবুক থেকে কিছু লিখছে।
নীলা চুপচাপ তাকিয়ে আছে।
শব্দের বাইরে বোঝাপড়া।
হাসপাতালের নিঃশব্দতা যেন তাদের একমাত্র বন্ধু।
প্রতিটি শ্বাস, প্রতিটি চোখের খেলা—সব মিলিয়ে বোঝানো হচ্ছে—“আমি এখানে আছি।”

ডাক্তারের চেকআপ শেষ হলো।
নীলা জানল, সে ধীরে ধীরে সুস্থ হবে।
কিন্তু রবি চলে যায়নি।
চুপচাপ, দম বন্ধ না করে, পাশে থাকা—এটাই যথেষ্ট।
দূরত্বের মধ্যেও নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ভালোবাসা।

রাত্রে, নীলা ঘুমের প্রান্তে।
রবি চেয়ার থেকে তাকিয়ে আছে।
কেউ কিছু বলছে না।
তবু বোঝাপড়া অটুট।
চোখে চোখ পড়ছে, হৃদয়ে হৃদয় স্পন্দিত হচ্ছে।

নীলা হঠাৎ মনে করে—প্রতিটি সম্পর্কেই স্পর্শের আকাঙ্ক্ষা থাকে।
কিন্তু স্পর্শ ছাড়া বোঝার ক্ষমতা, দূরত্বের সৌন্দর্য, নীরব সংযোগ—সব মিলিয়ে সম্পর্কের গভীরতা অমর।

রবি হঠাৎ বলে—
—“তুমি জানো, ভালোবাসা কখনো চাপিয়ে ধরা হয় না। পাশে থাকা, বোঝা, দূরে থেকেও অনুভব করা—সবই যথেষ্ট।”
নীলা হেসে চোখ বন্ধ করে।
হৃদয়ের মধ্যে এক অদ্ভুত শান্তি।
স্পর্শ না করা, দাবি না করা—তবু মিলন চূড়ান্ত।

পরদিন, নীলা ধীরে সুস্থ হতে থাকে।
রবি পাশে চুপচাপ বসে আছে।
কেউ প্রশ্ন করে না—“কেমন আছ?”
কেউ দাবী করে না—“আমি এখানে আছি।”
শুধু চোখে চোখে বোঝাপড়া, হৃদয়ে হৃদয় স্পন্দন।
দূরত্ব, নীরবতা, স্পর্শহীন সংযোগ—সব মিলিয়ে প্রেম চিরস্থায়ী।

রাত্রি নেমেছে।
হাসপাতালের আলো কমেছে।
নিশ্বাসের শব্দে, দূরের পদচাপে, নীলা বুঝছে—রবি এখনো পাশে আছে।
চোখ বন্ধ করে সে অনুভব করছে—স্পর্শ ছাড়া, কাছাকাছি না থেকে ভালোবাসা কত গভীর হতে পারে।

রবি হঠাৎ বলে—
—“দূরত্ব মানেই ছোঁয়া না করেও মিলন। পাশে থাকা মানেই ভালোবাসা।”
নীলা হেসে মাথা নেড়ে বোঝাল—“হ্যাঁ, নিঃশব্দ ভালোবাসা।”

এই অসুস্থতা শিখিয়েছে—চাপ ছাড়া, দাবী ছাড়া, স্পর্শ ছাড়া ভালোবাসা কত শক্তিশালী।
হৃদয়ের নীরব সংযোগ, দূরত্বের মধ্যে মিলন, চোখের খেলা—সব মিলিয়ে সম্পর্ককে চিরস্থায়ী করে।
স্পর্শ না করা, পাশে থাকা—সব মিলিয়ে তাদের ভালোবাসা অমর।

হাসপাতালের শেষ রাতে, তারা চুপচাপ বাইরে তাকায়।
শহরের আলো, দূরের শব্দ, হালকা হাওয়ার ছোঁয়া—সব মিলিয়ে নীরবতার গভীরতা।
নীলা হঠাৎ বলল—
—“তুমি জানো, পাশে থাকা কখনো স্পর্শের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
রবি হেসে মাথা নেড়ে বোঝাল—“হ্যাঁ, দূরত্বেই ভালোবাসার পূর্ণতা।”

চুপচাপ, নিঃশব্দ, স্পর্শহীন—সব মিলিয়ে ভালোবাসা চিরস্থায়ী।
এই অসুস্থতা, এই শিথিলতা, এই নীরবতা—সব মিলিয়ে তাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।