জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় বন্ধ করা যাচ্ছেনা এসব চুরির ঘটনা। এছাড়া চুরির পর তদন্ত কমিটি গঠন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ। তাই দেখা দিয়েছে নিরাপত্তা শঙ্কা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় বর্তমানে নিয়োজিত আছে ১৮ জন নিরাপত্তাকর্মী। নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে ৩ শিফটে কাজ করেন ১৮ জন অর্থাৎ এক শিফটে ৬ জনের ওপর পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব। এর মধ্য থেকে আবার ২ জন মূল ফটকে ও একজন দ্বিতীয় ফটকে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন। বাকি ৩ জন দিয়ে চলে নতুন একাডেমিক ভবন, কলা ভবন, বিজ্ঞান ভবন, প্রশাসনিক ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা। জানা যায়, গত বছর নতুন একাডেমিক ভবনের পেছনের অংশের গ্রিল কেটে ছাত্রী কমনরুমের ওয়াশরুমে ও পরিবহন দপ্তরে চুরির ঘটনা ঘটে। একইসময়ে শিক্ষক সমিতিতে চুরির চেষ্টা চালানো হয়। এছাড়াও সিসিটিভি ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) কাচের গ্লাস ও দরজা ভেঙে চুরি ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারেজে বিভিন্ন সময় সাইকেল, মোটরসাইকেলের তেল ও হেলমেট এমনকি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাও ঘটেছে। ক্যাম্পাসের বাউন্ডারি দেয়ালের গ্রিল কাটার সময় এক চোরকে হাতেনাতে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা। কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে কিছুদিন পরপরই ঘটে জুতা চুরির ঘটনা। কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম থেকে মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায় বোরকা পরিহিত একজন মহিলা। গত অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেইটে দুপুরে এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন সর্বনিম্ন ১০২ জন নিরাপত্তারক্ষীর তন্মধ্যে আছে মাত্র ১৮ জন অর্থাৎ প্রায় ৮০ শতাংশ নিরাপত্তারক্ষীর সংকট নিয়েই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় গেইট সংস্কারের পর থেকেই বন্ধ হয়ে আছে, যার প্রধান কারণ নিরাপত্তারক্ষীর সংকট। বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে ও ভবনগুলোর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নিরাপত্তা কর্মী বলেন, আমরা বিরতিহীন ৮ ঘন্টা কাজ করি সামান্য বসার সুযোগও নেই। যে জায়গায় ৬ জন নিরাপত্তা কর্মী দরকার সেই জায়গায় আমরা ১ জন দিয়ে করি। তাছাড়া সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গা থাকার কারণে অনেক সময় আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ করে। আমাদের আরও সহকর্মী দরকার পুরো ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য।
এ বিষয় জানতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা ডেপুটি রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান রনির সাথে যোগাযোগর চেষ্টা করা হলে তার কোন সাড়া পাওয়া যায় নি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা এ বিষয়ে ইউজিসির নিকট ৫৪ জন নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে চিঠি দিয়েছি। আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও হলের জন্য অনেক নিরাপত্তা কর্মী দরকার। আমাদের নিরাপত্তা কর্মীর সংকট রয়েছে। আমরা বিশেষ প্রয়োজনে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে থাকি। আর চুরি ঘটনায় থানায় জিডি হয়। পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন।