ব্রিকসের সদস্য হিসেবে নতুন আরও ছয়টি দেশের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই দেশগুলোকে পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানানো হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা নতুন সদস্য দেশগুলোর নাম ঘোষণা করেন। ব্রিকসের নতুন সদস্য দেশ হিসেবে মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, আর্জেন্টিনা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই তালিকায় নেই বাংলাদেশ। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন সদস্যপদ কার্যকর হবে। ফলে ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার এই বিশ্ব অর্থনীতির জোটে মোট সদস্য দেশ হবে ১১টি। মন্ত্রীদের সুপারিশের ভিত্তিতে নেতারা গত রাতে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। তারা বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। এদিকে রামাফোসার ঘোষণার পরপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন সদস্য দেশগুলোকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, আমি এ ছয়টি দেশকে ব্রিকসে স্বাগত জানাই এবং আমি এই দেশগুলোর নেতা ও জনগণকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। প্রতিটি দেশের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে এবং আমি বিশ্বাস করি যে সহযোগিতা ও সমৃদ্ধির নতুন যুগের জন্য এ দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করবে। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এই অর্থনৈতিক জোটের সদস্য হতে ইরান, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, আর্জেন্টিনা, আলজেরিয়া, বোলিভিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, ইথিওপিয়া, কিউবা, কঙ্গো, কমোরোস, গেবোন এবং কাজাখস্তানসহ ৪০টির বেশি দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশসহ অন্তত ২৩টি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছিল। কিন্তু মাত্র ছয়টি দেশকেই নতুন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে।
ব্রিকস জোটে নতুন সদস্য নেওয়ার বিষয়ে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে ভারত। গত বুধবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে এ বিষয়ে তাদের সম্মতির কথা জানিয়েছেন। বিভিন্ন দেশকে ব্রিকস সদস্য করার ক্ষেত্রে ভারতের স্বার্থের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেখানে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, ভারতের জন্য ঢাকার প্রার্থিতা বাছাই অপেক্ষাকৃত সহজ হবে। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বাংলাদেশ ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী। যদিও চীন তাদের জন্য অন্যতম শীর্ষ দাতা এবং বিনিয়োগের উৎস হিসেবে রয়ে গেছে, তবু ঢাকার ওপর নয়াদিল্লির যথেষ্ট আস্থা রয়েছে– অন্তত যতক্ষণ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। সম্পর্কটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কৌশলগত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় না। তবে ২০২২ সালে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবস্থা ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বকেও অতিক্রম করে’। বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, সদস্যপদের মানদ- এবং ব্রিকসের নতুন সদস্য নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য তৈরিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারত। নয়াদিল্লির কৌশলগত অংশীদারদের ব্রিকসে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে এই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটি। শক্তিশালী উদীয়মান বাজার হিসেবে পশ্চিমাদের বিকল্প বিবেচনা করা হয় ব্রিকস জোটকে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের শক্তিশালী হয়ে ওঠা বর্ণনা করতে গিয়ে ২০০১ সালে প্রথম ব্রিক (বিআরআইসি) শব্দটি ব্যবহার করেন গোল্ডম্যান স্যাশের অর্থনীতিবিদ জিম ও’নেইল। ২০০৯ সালে রাশিয়ায় নিজেদের প্রথম সম্মেলন করে দেশগুলো। ২০১০ সালে এতে যোগ দেয় দক্ষিণ আফ্রিকাও। তখন থেকে এই জোট ব্রিকস (বিআরআইসিএস) নামে পরিচিত হয়।
গত ২২ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হয়েছে ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও এতে অংশ নিয়েছেন চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের সরকারপ্রধানরা। জোটের আরেক সদস্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবারের সম্মেলনে সশরীরে যোগ দেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বিশেষ আমন্ত্রণে এবারের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।