ঢাকা, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪,
সময়: ০৬:০২:৫৬ AM

বরিশাল বিএনপির কর্মসূচিতে নেতার মেলে না

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
13-11-2024 06:02:56 AM
বরিশাল বিএনপির কর্মসূচিতে নেতার মেলে না

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে টানা কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। কর্মসূচি বাস্তবায়নে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছে নেতাকর্মীরা।কিন্তু বরিশালে আন্দোলন-সংগ্রামে ম্লান দলটি। মাঠে দেখা যাচ্ছে না ব্যাপক নেতাকর্মীকে; যারা আসছেন তারাও হাতেগোনা।কিছু কিছু নেতাকর্মী চলমান আন্দোলনে ঝটিকা মিছিল, সড়কে টায়ার বা গাছের গুড়িতে আগুন জ্বালিয়ে স্লোগান দিয়েই চলে যাচ্ছেন। ব্যবহার করছেন বান্দরোড ও সিঅ্যান্ডবি রোডের নির্দিষ্ট কিছু স্থান। এ ছাড়া সমগ্র বরিশালে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ে না।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বরিশালে তেমনভাবে হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচিতে প্রভাব ফেলতে পারেনি বিএনপি। যদিও নাগরিকদের চোখে, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি আর গ্রেপ্তার এড়াতেই এমন কৌশলি কর্মসূচি পালন করছে স্থানীয় বিএনপি ও তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, রাজপথে নামার মতো কর্মী থাকলেও নেতাদের কারণেই সবাই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। বরিশাল মহানগর ও জেলার শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তারের পর বাকীদের মধ্যে কেউ কর্মসূচি পালনে উদ্যোগী হয়নি।  মহানগর বিএনপির কর্মী সুমন জানান, বরিশাল মহানগর বিএনপি ও ছাত্রদলের সভাপতি কারাগারে যাওয়ার পর সভাপতি পদ দুটির দায়িত্ব পালনের জন্য দুই সহসভাপতিকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্র। এরপর হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি হলেও, বুধবার সকাল পর্যন্ত তাদের মাঠে দেখা যায়নি।

সর্বশেষ হরতাল কর্মসূচিতে মহানগরের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মীর জাহিদুল কবির জাহিদ সেচ্ছাসেবক দলের একটি মিছিলে উপস্থিত ছিলেন। যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়া উদ্দিন সিকদারও বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেন। তবে অবরোধ-হরতালের মতো কর্মসূচির শুরু থেকেই মহানগর বিএনপির আহ্বায়কসহ জেলা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই বরিশালের প্রেক্ষাপট পাল্টে যেতে থাকে। বিএনপির পাশাপাশি, ছাত্রদল, যুবদল, সেচ্ছাসেবকদলের নির্দিষ্ট নেতারা সল্পসংখ্যক কর্মীদের সমন্বয়ে মিছিলের মতো কর্মসূচি পালন করছেন।

 

অন্য কর্মীরা জানান, শীর্ষ পদের নেতা ছাড়া পদে থাকা অন্য কাউকেই রাজনৈতিক মাঠে দেখা যাচ্ছে না। বরিশাল মহানগরের সদস্য (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) জাহিদুর রহমান রিপন বলেন, সারা দেশে যে দমন-নিপীড়ন হচ্ছে, তাতে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ হচ্ছে। ফলে মিছিল মিটিং করা যাচ্ছে না। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কর্মীদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাই কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রেপ্তার এড়িয়ে আন্দোলন কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

 

আগে থেকে বরিশালে মিছিলসহ কর্মসূচি বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ইঙ্গিত দেন এ নেতা। তিনি বলেন, যে হারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হয়রানি করছে, তাতে তো কেউ দাঁড়ানোর সুযোগই পাচ্ছে না। তারপরও তৃণমূলে আমাদের কর্মীরা উজ্জীবিত। ওয়ার্ডগুলো যেমন পৃথক কর্মসূচি পালন করছে, তেমনি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও করছে।

 

তিনি বলেন, সভাপতি গ্রেপ্তারের পর বর্তমানে আমাদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা অ্যাডভোকেট আলী হায়দার বাবুল, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মীর জাহিদুল কবির জাহিদসহ অন্যরা সক্রিয়। তবে কৌশলি হয়ে কর্মসূচি পালন করায় সবার প্রোগ্রামে তাদের দেখা নাও যেতে পারে।

 

যদিও পুলিশ বলছে, বিনা কারণে কাউকে হয়রানির সুযোগ নেই, নাশকতা বা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে জনভোগান্তি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে তো নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বরিশালের উপজেলাগুলোয় ছোট কিছু কর্মসূচি হলেও তাতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি তেমন একটা নেই শুরু থেকেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও সদর আসনের সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট মো. মজিবর রহমান সরোয়ার, বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংরক্ষিত-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বরিশাল-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খানসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের পর কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজপথে তেমন কোনো ভূমিকায় দেখা যায়নি এ অঞ্চলে নেতাকর্মীদের।

 

এমন অবস্থা যে শুধু বরিশাল জেলায় এমনটা নয়, বিভাগের কোথাও হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না বিএনপি। এখানেও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবুল কালাম শাহীনসহ হাতে গোনা কয়েকজন সক্রিয়। এ বিষয়ে জানতে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরীনকে কল করা হলে তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

 

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে সাংবাদিকতার সুবাদে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন আনিসুর রহমান স্বপন। এই সাংবাদিক ও লেখক বলেন, পরিস্থিতি যাই হোক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কিছু নেতাকর্মী যদি কারাগারে থাকে তাহলে বাকিরা সেই জায়গাটায় কাজ করবে, এটাই নিয়ম হওয়া উচিত। যেমন জামায়াতের কারও যদি অনুপস্থিতি ঘটে, তাহলে তাদের অন্য একজন তৈরি হয়ে যায় অটোমেটিক। কিন্তু বরিশালের প্রেক্ষাপটে যেটা লক্ষ্য করা গেছে, তাতে বিএনপির সেভাবে লোক তৈরি হয় না।তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতি একদিনে হয়নি বিএনপিতে। এর মাঝে সমন্বয়হীনতার অভাবকে দায়ী করতে হবে। সেইসাথে শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতিতে দলের হাল ধরার লোক তৈরির ব্যবস্থাও এখানে তেমন একটা দেখা যায়নি। কর্মী সমর্থক থাকলেও সর্বোচ্চসংখ্যক নেতা নেই হয়তো।