সাভারে আদালতের নির্দেশে মৃত্যুর ২৩ দিন পর কবর থেকে জামাল হোসেন গোলদার (৫৫) নামের এক ব্যাবসায়ীর লাশ উত্তোলন করেছে পুলিশ।রোববার (৮ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে সাভার পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের আলবেদা বাইতুন নূর জামে মসজিদের সামাজিক কবরস্থান থেকে লাশটি উত্তোলন করা হয়।সাভার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম নূর এর উপস্থিতিতে লাশ তুলে তা ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত জামাল হোসেন দক্ষিণ রাজাসন ঘাসমহল কাইজ্জারটেক এলাকার মৃত ফরিদ আহমেদ গোলদারের ছেলে। তিনি ঢাকার গাবতলী এলাকায় ইঞ্জিন ওয়েলের ব্যাবসা করতেন এবং রাজাসন এলাকার রিয়াদ ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী ছিলেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. ইমরান হোসেন গোলদার বাদী হয়ে আদালতে একটি হত্যা মামলা (নং -১০৬৬) দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন, সাভার পৌরসভার দক্ষিণ রাজাসন এলাকার আব্দুল হামিদ মাওলানার ছেলে ফোরকান হাকিম (৪৮), লোকমান হাকিম (৫১), গোফরান হাকিম (৪৫) ও ভোলা জেলার রুইতা গ্রামের আজিজ সিয়ালীর ছেলে কাঞ্চন সিয়ালী ওরফে দ্বীন মোহাম্মদ (৫৫)।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে
বাসা থেকে বের হন নিহত জামাল হোসেন গোলদার। দক্ষিণ রাজাসন সাইনবোর্ড এলাকার ফোরকান হাকিমের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক ১৭ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টা ২৫ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় স্ট্রোকজনিত কারণে হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই জামাল হোসেনের মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়।
তবে মামলার বাদী ও নিহতের ভাই ইমরান হোসেন গোলদার জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টা ৪০ মিনিটে ফোরকানের মাধ্যমে মুঠোফোনে সংবাদ পাই, আমার ভাই ফোরকানের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে আমি সহ আমাদের পরিবারের সদস্যরা হাজির হই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই আমার ভাই জামাল হোসেন ফোরকানের বাড়ির উঠানে ফোরকানের কোলে উলঙ্গ, অজ্ঞান ও আধাশোয়া অবস্থায় রয়েছে।
আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত কোল থেকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে ফোরকান বলে, "জামাল হোসেন তার বাড়িতে এসে হটাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাকে হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন। এ সময় জামাল হোসেনের মাথায় ও দুই হাঁটুতে আঘাতের চিহ্নসহ উলঙ্গ ও অজ্ঞানের ব্যাপারে ফোরকানসহ উপস্থিত সবাইকে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি পড়ে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে তাকে জানানো হয়।"
তাৎক্ষণিক ভাবে আমাদের পরিবারের কাউকে না নিয়েই আগে থেকে ডেকে আনা একটি প্রাইভেটকারে টানা হেঁচড়া করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। ইমরান হোসেন তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এনাম মেডেকেলের মর্গে ভাইকে সনাক্ত করেন। পরে পোস্টমর্টেম ছাড়াই জোরপূর্বক জামাল হোসেনকে দাফন করতে বাধ্য করেন ফোরকান হাকিম ও তার লোকজন।
তিনি আরও জানান, প্রথমে তিনি ফোরকানের কথা শুনে এটিকে স্ট্রোক করে মারা গেছেন ভেবেই ভাইকে কবরস্থ করেন। পরে তাদের কথাবার্তায় ও মৃত্যুর আলামত দেখে তার বুঝতে বাকি থাকে না যে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ইতিপূর্বে ইমরানের ভাই জামাল হোসেন ফোরকান হাকিমের কাছে ২ লাখ টাকা পাওনা ছিলেন। পাওনা টাকা চাইলে বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হত। প্রতিশোধ নিতে ফোরকান হাকিমের সঙ্গে লোকমান হাকিম, গোফরান হাকিম ও কাঞ্চন শিয়ালী ওরফে দিন মোহাম্মদ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ইমরান হোসেন গোলদারের ভাই জামাল হোসেনকে হত্যা করেছে। এর দুইদিন পর সাভার মডেল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশের পরামর্শে আদালতে মামলা করেন বলে জানান নিহতের ভাই ও মামলার বাদী ইমরান হোসেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) আব্দুল্লা বিশ্বাস জানান, ইমরান হোসেন গোলদারের ভাই জামাল হোসেন গোলদার গত ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সাভার আমলী আদালতে রুজু করে কবর থেকে লাশ তোলার নির্দেশ দেন। তদন্তের স্বার্থে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ তুলে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।সাভার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম নূর বলেন, মৃত্যুর সময় থানায় কোন কিছুই জানানো হয়নি। মৃত্যুর দুইদিন পর নিহতের ভাইয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৩ দিন পর আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলন করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।