ঢাকা, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫,
সময়: ০৪:৫২:৩৬ AM

বিএনপির সামনে নতুন বছরের নতুন শঙ্কা

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
02-01-2025 11:27:07 AM
বিএনপির সামনে নতুন বছরের নতুন শঙ্কা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটেছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের। তার বিদায়ে ১৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ফুরফুরে অবস্থানে আছে দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে আসা বিএনপি। তবে নতুন বছরে বেশ কয়েকটি ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে দলটিকে। এর মধ্যে জনগণের আস্থা ধরে রাখা, নির্বাচন আদায় এবং প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়ে ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে আবারও দলটিকে বিপাকে পড়তে হতে পারে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট গঠিত হয়েছে অন্তর্র্বতী সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন পক্ষের দাবির প্রেক্ষাপটে এই অন্তর্র্বতী সরকার এখন সংবিধান, বিচার বিভাগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্কারে বিএনপির সায় থাকলেও এটি যেন দীর্ঘসূত্রতার জালে না পড়ে, সে কথা বলে আসছে বিএনপি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বিএনপি বহু বছর পর স্বাধীন পরিবেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে। তবে স্বৈরাচারের পতনের পর স্বস্তি মিললেও নানা কারণে রাজনৈতিকভাবে চলতি বছরে চ্যালেঞ্জ রয়েছে বিএনপির সামনে।  

যদিও সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহার হচ্ছে। দলটির নেতাকর্মীরা আগের চেয়ে এখন বেশি উজ্জীবিত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তারা নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করতে চায়। তারেক রহমান নিজেও নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছেন। নিজে বিরামহীন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। নতুন বছরে দলীয় কর্মকাণ্ড আরও বেগবান করতে চায় দলটি। সঙ্গে নির্বাচনী প্রস্তুতিও সারতে চাইছে দলের হাইকমান্ড।

এছাড়া অর্ন্তবর্তী সরকার গঠনের শুরু থেকেই তাদের সমর্থন দিয়ে আসছে বিএনপি। তবে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিও জানাচ্ছে তারা। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নতুন বছরেও তারা এই দাবি নিয়ে আরও বেশি সোচ্চার হবে। পাশাপাশি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করবে দলটি।

রাজনীতি বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, আগামী নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারে নিজেদের প্রস্তাবনা ও দলীয় নেতা-কর্মীদের কার্যক্রমে জনগণের আস্থা অর্জন, নির্বাচনে সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতায় নামতে হতে পারে বিএনপিকে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলকে নিয়ে ইসলামী ফ্রন্ট এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-তরুণদের সম্ভাব্য নতুন দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হতে পারে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলটিকে।

এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দখল ও চাঁদাবাজির বিচ্ছিন্ন অভিযোগ মিলছে। দলটির হাইকমান্ড কঠোর অবস্থান নিয়ে অনেককে বহিষ্কারও করেছে। আবার জামায়াত, ছাত্রদের বিভিন্ন প্লাটফর্মের নেতাদের বক্তব্যের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি প্রকাশ হতে শুরু করে।

অন্যদিকে বিএনপিকে অন্তর্র্বতী সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে নিয়ে যেতে হবে দেশকে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, দেশের সামরিক-বেসামরিক শক্তি ও সুশীল সমাজের সমর্থন আদায়ও করতে হবে দলটিকে। সঙ্গে রয়েছে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ।

দলটির নেতারা বলছেন, সমমনা দলগুলোকে নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের নতুন প্রস্তাব দিয়ে দেশি-বিদেশিদের আস্থা অর্জনে তারা আশাবাদী। একই সঙ্গে তারা দলকে সুসংগঠিত করে নতুন সব চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করবেন। আগামী নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসবে বিএনপি।

বুধবার (১ জানুয়ারি) জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে আবার চক্রান্তের খেলা শুরু হয়েছে। যে চক্রান্তের খেলার কারণে আমাদের নেত্রীকে ৬ বছর জেলে থাকতে হয়েছে, এখনো আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশের বাইরে থাকতে হচ্ছে। সে চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে।  

অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, মানুষের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে সময়ের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার আনতে হবে। তাই বলে, সংস্কারের নাম করে আমরা এমন কিছু হতে দিতে পারি না, যেটা আমাদের গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করবে। কাল বিলম্ব না করে এ সংকট থেকে মুক্ত করতে অতিদ্রুত নির্বাচন ব্যবস্থা করুন।

ওই অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্যে নেতাকর্মীদের বলেন, নিজেরা এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হবেন না যাতে কেউ অপপ্রচারের সুযোগ পায়। নিজেদের জনগণের আস্থায় রাখুন। জনগণের আস্থায় রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে, কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে যাতে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিনষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।  

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, চারিদিকে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি, এত এত মানুষ প্রাণ দিয়েছে, আত্মত্যাগ করেছে, তার মূল্য দিতে হবে। আমরা চাই নতুন বছরে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হোক।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই নতুন বছরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করাই হলো বিএনপির লক্ষ্য