ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪,
সময়: ০৭:২৭:১৮ AM

ইছাখালীর চরে তরমুজ চাষিদের হাহাকার

বখতিয়ার আবিদ চৌধুরী
19-09-2024 07:27:18 AM
ইছাখালীর চরে তরমুজ চাষিদের হাহাকার

চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার ইছাখালীর চরাঞ্চলে বিগত ২ বছর তরমুজের উচ্চ ফলন বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে একদল কৃষক এসে তরমুজ চাষের ওই সফল অধ্যায় রচনা করেছিলেন। বিগত বছরগুলোর সাফল্যে আশায় বুক বেঁধে এ মৌসুমে ঘর ছেড়েছেন মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ও মোহাম্মদ মুজাক্কির হোসেন। সুবর্ণচর থেকে যে দলটি এসে ইছাখালীর চরে প্রথম তরমুজের বীজ বপন করেছিল, তারা সে দলেরই সদস্য। আলমগীর ও মুজাক্কিরসহ ৩০ সদস্যের একটি দল প্রায় ২ মাস ধরে অবস্থান করছেন এখানে।কিন্তু এবার তাদের ভাগ্য অনুকূলে নয়। লিজ নেওয়া জমির ধান একটু দেরীতেই কেটেছেন স্থানীয় কৃষকরা। তার ওপর জমির ভেজা ভাব হারিয়ে বীজ বোনার অনুপোযুক্ত হয়ে পড়েছিল। চরের পাশের বড় বড় জলাশয় থেকে সেচ দিয়ে সে সংকট কাটিয়ে ওঠা গেছে। বীজ থেকে চারা জন্মাল, সে চারা ধীরে ধীরে বড় হলো, ফুল এসে যখন ফলে রূপ নেবে; ঠিক সেই সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝড়-বৃষ্টিতে সব ফুল ঝরে গেল। চরের জমি খানিকটা উঁচু থাকায় পানি জমতে পারেনি, গাছগুলো কোনোমতে বেঁচে যায়।মুজাক্কির হতাশার সুরে বলেন, ‘আমাদের অস্তিত্ব নেই, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। জমিতে ভেজা ভাব না থাকায় সেচ দিয়ে বীজ বপন করেছি। পাঁচবার বীজ বপন করার পর গাছের দেখা পেয়েছি। একশ গ্রাম ভালো জাতের তরমুজের বীজের দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা। এ জন্য খরচটা এবার বেড়েছে। প্রায় ১০ একর জমিতে ১৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। প্রথমে ১০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করতেন। কিন্তু খরচ সামলাতে না পেরে তা ৪ জনে নামিয়ে এনেছি। ঝড়-বৃষ্টি সব শেষ করে দিলো, তবুও আশা ছাড়ছি না। গাছের অবস্থা এখনো ভালো। বৃষ্টি না হলে ৩ মাসের মাথায় ফল পাওয়ার আশা করছি, তবে সে আশা খুব ক্ষীণ।’

 

আলমগীরের ক্ষেতের চিত্র আরও করুণ। আশপাশের ক্ষেতগুলোর মধ্যে তার ক্ষেতই সবচেয়ে দুর্বল মনে হলো। ক্ষেতে গাছের পরিমাণ অনেক কম। যখন দেখা হলো, আলমগীর তখন গাছে ভিটামিন স্প্রে করছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল নিজেকে বোঝাচ্ছেন, এখনো আশা আছে। আলমগীর ২ একর জমিতে ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। একটি এনজিও থেকে সুদের ওপর এ টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি। বাড়ীতে স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে আছে। তাদের এ সংকটের কথা জানাননি। এখনো লাভের আশা করেন কি না, জিজ্ঞেস করতেই মলিন হাসি দিয়ে বলেন, ‘নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে বউ, ছেলে-মেয়ে ফেলে এসেছি। লাভের আশা না করে তো উপায় নেই।’তরমুজ মৌসুমি ফসল। সারাবছর এর চাষ সম্ভব নয়। সুবর্ণচরের এ চাষিরা বছরের অন্য সময় নিজ এলাকায় ছোটখাটো ব্যবসা অথবা ধান চাষের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। যেমন আলমগীর তার এলাকার বাজারে ছোট একটি পানের দোকান পরিচালনা করেন। আর মুজাক্কিরের আছে একটি গরুর ফার্ম ও মাছ চাষের পুকুর।ফসল তোলার মৌসুমের সবচেয়ে লাভজনক মুহূর্ত পেরিয়ে যাচ্ছে। তাদের ক্ষেতে তরমুজের দেখা নেই। ইতিউতি হাতেগোনা কিছু তরমুজ ক্ষেতে উঁকি দিচ্ছে। তাতে লাভ না হোক অন্তত ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে উঠবে। সে আশায় বিরান এ চরে পড়ে থাকা। বাকিটা প্রকৃতির ওপর নির্ভর করছে। লেখক: শিক্ষার্থী, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ।