ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫,
সময়: ০৫:৫০:১৬ PM

গরিবের হক মেরে কোটিপতি টিসিবির হুমায়ুন

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
14-03-2025 02:18:06 PM
গরিবের হক মেরে কোটিপতি টিসিবির হুমায়ুন

গরিব, অসহায় ও সাধারণ জনগণের জন্য ন্যায্যমূল্যে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বিক্রি করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সরকারের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটির যুগ্ম পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর। তার বিরুদ্ধে সরকারি টাকা কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ, পণ্য সরবরাহ না করেই বিল পরিশোধ, ব্ল্যাকে পণ্য বিক্রি, আত্মীস্বজনের নামে ডিলারশিপ নেওয়া, ডিলারদের কাছে থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেওয়াসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় অঢেল সম্পত্তি গড়ার অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আহসানুল হক টিটুর এলাকা হওয়ায় নিজেকে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিতেন তিনি। এতে ক্ষমতার অপব্যবহার করেও থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, টিসিবির চেয়ারম্যান বরাবর একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের কপি কালবেলার হাতেও এসেছে। অনুসন্ধানে নেমে এসব অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অসহায় গরিবের কাছে স্বল্পদামে বিক্রির পণ্য ব্ল্যাকে বিক্রি ও ডিলারদের সঙ্গে যোগসাজশে কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন হুমায়ুন কবির। মিরপুর ১০ ও ১১ এর মাঝে ৭.৫০ কাঠা জমি, টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার অন্তর্গত দুয়াজানি গ্রামে প্রায় ২০ লাখ টাকার জমি কিনে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তার পাশেই আরও ১৫ লাখ টাকার জমি কিনেছেন। নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী নূরে জান্নাতের (আশা) নামে সাড়ে ৫ শতাংশ জমি কিনেছেন। প্রায় ৪ কোটি টাকা দিয়ে ছোটবোন কানিজ ফাতেমা, শ্বশুর মো. গিয়াস উদ্দিনসহ আত্মীয়স্বজনের নামে মিরপুর পলাশ নগরে ৬ কাঠা (৯.৯০শতাংশ) জমি কিনেছেন। মা লতিফা জাহানের নামে নাগরপুর উপজেলার কেদারপুরে ২০ শতাংশ জমি, সাভার আশুলিয়ায় মা, শাশুড়ি নাসরীন পারভীন, বোন কানিজ ফাতেমার স্বামীর নামে ৩১ শতাংশ জমি কিনেছেন। এ ছাড়া আশুলিয়ায় ৫ বন্ধু মিলে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কর্মাশিয়াল জমি কিনেছেন। মামাতো ভাই নয়নের নামে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম দিয়ে যৌথ মালিকানায় জমির শেয়ার কিনেছেন। রাজধানীতে আত্মীয়স্বজনের নামে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন।

কয়েকজন ডিলার জানান, হুমায়ুনের নিয়োগ দেওয়া কিছু ডিলার আছে। তাদের কাছে তেল, চিনি, খেজুর অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে নিয়মিত মোটা অঙ্কের কমিশন নেন। কোনো ডিলার ঘুষ দিতে না চাইলে ডিলারশিপ বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দেন। তার অধীনস্থ মনি নামে একজন ডিলারের সঙ্গে সবচেয়ে লেনদেন করেন তিনি। ফুয়াদ এন্টারপ্রাইজ নামে হিসাব নম্বর ০০৩০-০২১০০৯৮, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড কারওয়ান বাজায় শাখায়ও কমিশনের টাকা লেনদেন করেন। ডিলার মনির সঙ্গে হুমায়ুন কবীর ২ কোটি টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগ করে রেখেছেন। গত বছর রমজানে টিসিবির পছন্দের ডিলারের মাধ্যমে লোকাল মার্কেটে তেল, চিনি, খেজুর বিক্রি করে মোট অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। অনিয়ম দুর্নীতি করার সুবির্ধাথে মাঝে মাঝে সরকারি ছুটির দিনেও অফিস করেন।

টিসিবির এক কর্মকর্তা জানান, ২০২৩ সালে তেজগাঁওয়ে টিসিবির গুদাম থেকে সয়াবিন তেল, চিনি, খেজুর বাইরে বিক্রি করে দেন। রাতের মধ্যে এই খবর জানাজানি হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি তিনি নিজেই অবহিত করেন এবং ওই রাতেই গোডাউনে আগুন লাগে। আগুনে প্রায় প্রায় ১০ টন সয়াবিন ও ১০ থেকে ১২ টন ছোলাসহ অন্যান্য পণ্য পুড়ে যায় বলে জানানো হয়। পরিকল্পিতভাবে এই আগুন লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন টিসিবির যুগ্ম পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। যারাই আমার বিরুদ্ধে এসব বলছে—মিথ্যা বানোয়াট কথা বলছে। আমার সাবেক স্ত্রী ও তার পরিবার মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমাদের একটা বাচ্চা থাকার পর সাবেক স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা করে চলে গেছে। তারাই পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে নানান কিছু ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমার কোনো অবৈধ সম্পত্তি নেই, যা আছে তা বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি।’