ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪,
সময়: ০৫:২৮:২৮ AM

মালয়েশিয়া যাত্রা অনিশ্চিত লাখ লাখ শ্রমিকের

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
25-12-2024 10:38:39 AM
মালয়েশিয়া যাত্রা অনিশ্চিত লাখ লাখ শ্রমিকের

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সভা হচ্ছে না। আগামী ২৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পর্যায়ের এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বিদেশে শ্রমিকদের জন্য বাজার খুলে দেবে মালয়েশিয়া। তারা নতুন করে প্রায় ১২ লাখের বেশি শ্রমিক নেবে বলে বিভিন্ন সূত্র কালবেলাকে নিশ্চিত করেছে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির সভা না হলে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে মালয়েশিয়ায় প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টি। যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সভা না হওয়ার নেপথ্য কারণ হিসেবে জানা গেছে, বিগত সময়ে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে ব্যবসায়ীদের ভয়াবহ বিরোধের বিষয়টি। ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ নিজেদের ‘বঞ্চিত’ দাবি করে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। অন্যদিকে ৫ আগস্ট-পূর্ববর্তী সময়ে শ্রমিক পাঠানোর নামে অর্থ পাচারের অভিযোগ এনে আলাদা অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. সরওয়ার আলম  বলেন, ‘ডিসেম্বরের শেষ দিকে ঢাকায় দুদেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেটা না হওয়ায় আমরা আগামী জানুয়ারিতে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করার চেষ্টা করছি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান কালবেলাকে লিখিতভাবে জানান, আগামী ২৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দুদেশের মন্ত্রীপর্যায়ের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির (জেডব্লিউজি) সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে এখনো বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। আমাদের পক্ষ থেকে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি সভার নতুন একটি তারিখ নির্ধারণের চেষ্টা চলছে।

কালবেলার নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী চেষ্টার পরও মালয়েশিয়ান সংশ্লিষ্টদের জেডব্লিউজির সভায় রাজি করানো যায়নি। মালয়েশিয়ান মানবসম্পদ মন্ত্রীসহ যেসব কর্মকর্তা বাংলাদেশে আসবেন, তাদেরও কোনো সফরসূচি পায়নি বাংলাদেশ। ফলে শিগগির জেডব্লিউজির সভা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এতে করে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ বড় শ্রমবাজার হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বিগত ২০২২ সালের ৮ আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ২২ মাসে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যায়। মালয়েশিয়ান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৩১ মের মধ্যে শ্রমিক পাঠানোর সময়সূচি বেঁধে দেওয়ায় নিয়োগানুমতি পাওয়ার পরও উড়োজাহাজের টিকিট সংকটসহ নানা কারণে প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক যেতে পারেনি। গত ৪ অক্টোবর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ঢাকা সফরের সময় সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। তিনি সেই ১৮ হাজার শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দেন। ওই সময় আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা পুরো ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়েছি। আমাদের শ্রমিক দরকার। আর এসব শ্রমিক বাংলাদেশ কিংবা অন্য যে কোনো দেশেরই হোক না কেন।’সংশ্লিষ্টরা জানান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী গত ৪ অক্টোবর ঘোষণা দেওয়ার তিন মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু ওই ১৮ হাজারের একজন শ্রমিককেও পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে ওই শ্রমিকদের পাঠানোর বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সভা হলে এই বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করা যেত।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণে মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগ এনে রিক্রুটিং এজেন্সি আফিফা ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী আলতাফ হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী পল্টন থানায় ১০৩ জন ব্যবসায়ীকে আসামি করে মামলা করেন। মামলাটির তদন্তে নেমে পল্টন থানা পুলিশ এনসিবি ইন্টারপোলের মাধ্যমে কুয়ালালামপুর ইন্টারপোলের কাছে আমিনুল ইসলাম আব্দুল নূর ও রুহুল আমিন স্বপন নামে দুজন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার ও সেখানকার জনশক্তি আমদানিবিষয়ক সফটওয়্যার ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফডব্লিউসিএমএস) কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়ে চিঠি দেয়। বাংলাদেশসহ ১৫টি সোর্স কান্ট্রি থেকে শ্রমিক নেওয়ার জন্য এফডব্লিউসিএমএসের মাদার কোম্পানি বেস্টিনেট সিন্দিরিয়ান বারহাদের সঙ্গে মালয়েশিয়ান সরকারের চুক্তি রয়েছে।

মালয়েশিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবি, মামলায় মানব পাচারের যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটা কোনোভাবেই আমলযোগ্য নয়। কারণ, মানব পাচার হয়ে থাকলে মামলা করবে সংশ্লিষ্ট ভিকটিম। এখানে ভিকটিমের পরিবর্তে একজন ব্যবসায়ী তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ ছাড়া পল্টন থানা পুলিশ মালয়েশিয়া ইন্টারপোলকে যে চিঠি দিয়েছে, তা কোনোভাবেই যৌক্তিক হয়নি। কারণ, আমিনুল ইসলাম আব্দুল নূর একজন মালয়েশিয়ান নাগরিক (বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত)। পল্টন থানায় করা মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি। তাকে গ্রেপ্তারের চিঠি দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক হয়নি। এ ছাড়া এফডব্লিউসিএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাড়াও ১৪টি প্রেরণকারী দেশ থেকে মালয়েশিয়া শ্রমিক নেয়। সেখানে ওই সফটওয়্যার বন্ধ রাখার কথা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলতে পারেন না।

জানা গেছে, গত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে পল্টন থানার মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়েছে। সিআইডি অর্থ পাচারের অভিযোগ এনে ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়া দুদক সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামাল, মেয়ে নাফিসা কামাল, ফেনী-২ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ঢালাওভাবে সব ব্যবসায়ীকে চিঠি দিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এই আতঙ্ক জনশক্তি রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এক জনশক্তি রপ্তানিকারক বলেন, নাজিব আবদুল রাজাক মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদি সাত শতাধিক প্রস্তাবিত রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে ১০টি, ইসমাইল সাবরি ইয়াকোবের ২৫০টি সাব-এজেন্টসহ ২৫টি এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিক নেওয়া হয়। পরে মালয়েশিয়ান মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা ১০০টি করা হয়। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো হয় জিটুজি পদ্ধতিতে। সেখানে যারা শ্রমিক পাঠিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে সহযোগিতা করেছে, তাদের যাচাই-বাছাই ছাড়া ঢালাও আসামি করা যৌক্তিক নয়।

তা ছাড়া সম্প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ সদর দপ্তর ও অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে একটি চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, বিগত সময়ে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার ও অর্থ পাচারের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন মহল থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটা কাল্পনিক ও অগ্রহণযোগ্য।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে নিজেদের বঞ্চিত দাবি করে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এতে দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং শ্রমবাজারের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে। নতুন করে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খোলার ক্ষেত্রে ঢালাও মামলা ও হয়রানির ফলে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশবিমুখ হচ্ছে।

জানা গেছে, কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের প্ররোচনায় গত নভেম্বর মাসের শুরুতে মালয়েশিয়ান তিন নাগরিক গোপনে বাংলাদেশে আসেন। তারা সেখানকার ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পুলিশ ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এ বিষয়ে ৬ নভেম্বর হাওলাদার ফোরকান উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ী পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওই জিডিতে বাদী উল্লেখ করেন, অন্তর্র্বতী সরকারকে বিতর্কিত করা, জনশক্তি রপ্তানির নামে প্রতারণা ও বিশেষ একটি মহলের আমন্ত্রণে তিন ব্যক্তি বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় তারা ঢাকার পল্টন থানায় জনশক্তি রপ্তানিকারকদের বিরুদ্ধে করা একটি মামলার বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। সেখানে প্রতারণার মাধ্যমে নিজেদের ‘মালয়েশিয়ান সরকারের প্রতিনিধি’ বলেও পরিচয় দেন। মালয়েশিয়ার ওই তিন নাগরিক ছিলেন মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন ফর ফরেন ন্যাশনাল নামক সংগঠনের সভাপতি দাতোশ্রী থাইয়াগরাজ ও সাধারণ সম্পাদক ড. সুকমারানা এনকে নায়ার এবং দাতো মো. নোয়া। মালয়েশিয়ার জনশক্তি রপ্তানির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কৌশল হিসেবে বিতর্কিত দুজন তাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ওই ব্যক্তিরা নিজেদের মানবাধিকার কর্মী, মালয়েশিয়ান কেডিএনের লোক, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোক, সেখানকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্যাদি পরিচয় ব্যবহার করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেন। তারা কৌশলে কুয়ালালামপুর এনসিবি (ইন্টারপোল) বরাবর একটি চিঠি ইস্যু করান। মালয়েশিয়ার ওই তিন ব্যক্তির দুজন সেখানকার জনশক্তি আমদানি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতা। ২০০১ ও ২০০৮ সালে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ড. সুকুমারানাকে সেখানকার ব্যবসায়ী সংগঠন পিএএসএমএ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জনশক্তি নেওয়ার নাম করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ও প্রতারণা করে আসছিলেন। তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে আনা হয়েছে। তারা বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি খাত নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় নির্মাণ খাত, কৃষি ফার্ম, কলকারখানা, রেস্টুরেন্ট, সার্ভিস সেক্টরসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশি অন্তত ৬ লাখ শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশি শ্রমিকরা সেখানে গিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন এবং প্রত্যেক শ্রমিক মাসে কমপক্ষে আড়াই হাজার রিঙ্গিত (৭০ হাজার টাকা) আয় করেন। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকেও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি জনশক্তি দ্রুত নিয়োগ করা ও স্বল্প ব্যয়ে অধিকসংখ্যক কর্মী প্রেরণের নানামুখী চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের চেষ্টায় মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ বিভাগ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভার গুরুত্ব বিবেচনায় ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে (২৮ ডিসেম্বর) সভা আয়োজনের কথা জানায়। যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সভার মধ্য দিয়ে ফের মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর পথ খোলার আশা করা হচ্ছিল।

জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক প্রসঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়ায় দফায় দফায় শ্রমিক প্রেরণ বন্ধ হয়ে পড়ে। যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সভার মাধ্যমে সেটা নিরসন করা হয়। এবারও আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটাই—যে কোনো মূল্যে মালয়েশিয়ার বাজার খোলা। জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক নিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা আশাবাদী, বৈঠক হলে শ্রমবাজারটি খুলবে।’

জনশক্তি রপ্তানি সংশ্লিষ্ট এক বিশেষজ্ঞ জানান, মালয়েশিয়া আমাদের বড় শ্রমবাজার। আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমরা সেখানে পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রমিক পাঠাতে পারলে ২০২৫ সালে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। সিদ্ধান্তহীনতা বা অন্য কোনো কারণে এই বাজার হারালে আমাদের শ্রমবাজারে অপূরণীয় ক্ষতি হবে। আমরা বার্ষিক প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স হারাব। তাই সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে মালয়েশিয়া সরকারের আস্থা ফেরাতে সেখানে দ্রুত লবিস্ট নিয়োগ করা জরুরি; যাতে যে কোনো মূল্যে আমরা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে শ্রমিক পাঠাতে পারি।

এ বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী  বলেন, আমরা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে যতদূর নিশ্চিত হয়েছি যে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খুলবে। সেখানে বড় সোর্স কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ৫-৬ লাখ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দুদেশের সরকার পর্যায়ে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সভা করা সম্ভব হলে শ্রমবাজার ধরার সম্ভাবনার দুয়ার খুলত। কিন্তু সভা পরে বা না হলে সেটা সম্ভব হবে না। যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সভা না হলে কী পদ্ধতিতে কোন প্রক্রিয়ায় কত শ্রমিক যাবে, সেটা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া প্রেরক ও গ্রহণকারী দেশের মধ্যে কিছু চাহিদা বা প্রত্যাশার বিষয় থাকে। সেটা দুদেশের সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই নির্ধারণ করতে হয়। যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সভা না হলে সেটা সম্ভব নয়।’ বায়রা মহাসচিব আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমানে সৌদি আরব ছাড়া আর কোনো দেশে আমরা শ্রমিক পাঠাতে পারি না। মালয়েশিয়ায় ফেব্রুয়ারিতে শ্রমবাজার খুললে সেটা আমরা ধরতে না পারলে আমাদের শ্রমবাজার জন্য বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই এ ক্ষেত্রে যত ধরনের জটিলতা আছে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সেগুলো সমাধান করে শ্রমবাজার ধরা জরুরি। কারণ, এরই মধ্যে রেমিট্যান্স আয়ের দিক থেকে বর্তমানে মালয়েশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। বেশি বেশি শ্রমিক পাঠানো গেলে সেটা দ্বিতীয় বা তৃতীয় অবস্থানে আসা সম্ভব বলে মনে করেন বায়রার এই কর্মকর্তা।’