যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরের অনুষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(আইএমএফ) এর শীর্ষ প্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই সফরে অর্জন শূণ্য’। বুধবার দুপুরে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদের সাথে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।তিনি বলেন, ‘‘ আমরা বরাবরই বলে আসছি সরকার মিথ্যা কথা বলে পুরোপুরিভাবে মিথ্যা প্রচারনা করে জনগনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে প্রথম থেকেই। যেহেতু তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই, এই ধরণের মিথ্যা গোয়েবলসী প্রচার করে, তারা প্রচার করতে চায় যে তারা সবকিছু এই যে সফর করেছে এই সফরটা তাদের অত্যন্ত সফল হয়েছে।”
‘‘ আইএমএফ বলেছে যে, তার(শেখ হাসিনা) নেতৃত্বে ৃ - এটা ডাহা মিথ্যা কথাৃ। আমরা ইতিমধ্যে কাগজপত্র দেখেছি ৃ তারা ইতিমধ্যে একটা স্টেটমেন্ট পর্যন্ত দিয়েছে যে, আমরা(আইএমএফ) এই কথা বলিনি, শুধুমাত্র তার সঙ্গে মিটিংয়ের কথা বলেছি।একভাবেই বিশ্বব্যাঙ্কের ঋণ পূর্ব নির্ধারিত। আগেই কথা হয়েছে যে তারা এই ঋণ দেবো। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে এচিভমেন্ট ইজ জিরো।”
ফখরুল বলেন, ‘‘ ওই মিথ্যা কথা বলে মানুষকে এক-একদিন বোকা বানানো কিন্তু বেশিদিন বোকা বানিয়ে রাখা যায় না।আওয়ামী লীগ সেই কাজটাই করে যাচ্ছে।”
‘‘ এবার তারা ব্যর্থ হবে। কারণ জনগন তাদের মিথ্যাচার বুঝে গেছে, ঝারি-ঝুড়ি বুঝে গেছে, জনগন তাদেরকে সরিয়ে জনগনের একটা শাসন প্রতিষ্ঠা করবে।”
দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তিন দেশ সফরকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ এগুলো বা পুরো বিষয়টা হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই সমস্ত সফর, ধানা-পানাই করা। এসব করে কোনো লাভ হবে না।”
‘‘ কিন্তু জনগনের লক্ষ্য একটাই –তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরতে হবে এবং জনগনের নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে, আইনের শাসনকে ফিরিয়ে আনতে হবে। জনগন যেন সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক সমাজে বাস করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দেশ সফরে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছেন। সেখানে বিশ্বব্যাংক-বাংলাদেশ এর অংশদারিত্বের পঞ্চাশ বছরপূর্তি অনুষ্ঠান, বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(আইএমএফ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে তিনি জাপান সফর করেন, সবশেষে যাবে যুক্তরাজ্যে।
‘সংলাপ আমরাও চাইনা, ফয়সালা হবে রাজপথে’
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভয়েস অব আমেরিকা’য় এক সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির সাথে সংলাপ করতে চান না বলে যে মন্তব্য করেছে তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা তো তাদের সাথে আলোচনা করতে চাইনি। কারণ আমাদের যে পূর্ব অভিজ্ঞতা সেই অভিজ্ঞতা তো ৃতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার যুক্তি থাকতে পারে না এজন্য যে, তারা পুরোপুরিভাবে মিথ্যা কথা বলে এবং তারা ভিটট্রে করে, বিশ্বাসঘাতকতা করে জাতির সঙ্গে।”
‘‘ সেই কারণে জনগনের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই জনগন রাজপথে ফয়সালা করে নেবে।”
বিএনপি অগ্নি সন্ত্রাস করে- যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এরকম বক্তব্যে জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ অগ্নি সন্ত্রাসের ধারক-বাহক আওয়ামী লীগই। তারাই অগ্নি সন্ত্রাস শুরু করেছে, তারাই এটা কনটিনিউ করে, নিজেরা করে উদোর-পিন্ডি বুদোর ঘাঁড়ে চাপায়।”
‘‘এখানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে জন্ম এবং সন্ত্রাস করেই তারা টিকে থাকে। তাদের বডি কেমেস্ট্রিতে দুই জিনিস আছে। একটা সন্ত্রাস আরেকটা দুর্নীতি এই দুইটা ছেড়ে তারা থাকতে পারে না।”
সকাল ১১টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এলডিপির চেয়ারম্যান আসেন এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে ঘন্টাব্যাপী রুদ্ধাদ্বার বৈঠক করেন। এই বৈঠকে যুগপত আন্দোলনের কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
‘ক্ষমতা নয়, জনগনের মুক্তির জন্য এই আন্দোলন’
বৈঠকের পর অলি আহমেদ বলেন, ‘‘ আজকে ১৪/১৫ বছর যাবত নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশ শাসন করছে না। একদলীয় শাসনের অধিনে আমরা বর্তমানে আছি। এই অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য বিএনপির নেতৃত্বে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে যাচ্ছি।”
‘‘ এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, এই আন্দোলন মন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়, এই আন্দোলন দেশের ১৮ কোটি মানুষের মুক্তির করার জন্য। এদেশের জনগনের মুক্তি যতদিন না হয় আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।”
তিনি বলেন, ‘‘ তারা(সরকার) চাচ্ছে, যেনকোনো প্রকারে একটা নির্বাচন করার জন্য। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহনমূলক হবে, অবাধ সুষ্ঠু হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে হবে। একদিন আওয়ামী লীগ এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে ১৯৯৬ সালে জনগনের সম্মুখে এসেছিলো। এই দাবি নতুন কিছু নয়। আওয়ামী লীগের এই দাবি অস্বীকার করার উপায় নেইৃএটা একদিন তাদেরই দাবি ছিলো।”
‘‘ আমরা সেই দাবি নিয়ে জনগনের সম্মুখে এসেছি। আমরা চাই জনগন প্রত্যেকে নিজের ভোট নিজে দিয়ে তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে, আগামীতে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এদেশ পরিচালনা করবে, একদলীয় শাসন থেকে জনগন মুক্ত হবে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে।”
বৃহস্পতিবার এলডিপির লিয়াজোঁ কমিটির সা্থে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক রয়েছে বিকাল ৪টায়।ইতিমধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এর সাথে বৈঠক সেরেছে বিএনপি।