ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সময়: ০৪:৫০:৪১ PM

লাইভে খুন আতিক:পাঁচবার বিধায়ক

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক।। ঢাকাপ্রেস২৪.কম
23-11-2024 04:50:41 PM
লাইভে খুন আতিক:পাঁচবার বিধায়ক

এক মিনিটের কম সময়ের মধ্যেই সব শেষ। মাফিয়া ডন থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা আতিক আহমেদ শনিবার (১৫ এপ্রিল) এলাহাবাদ (বর্তমানে প্রয়াগরাজ) শহরের একটি হাসপাতালের কাছে পুলিশের গাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন। বিশাল দেহের অধিকারী আহমেদ সাবেক সংসদ সদস্য, ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত।শিকলে বেঁধে হাতকড়া অবস্থায় হাজত থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পুলিশ কনস্টেবলের সঙ্গে তারা যখন হাঁটতে শুরু করেন, সে সময় সাংবাদিক ছদ্মবেশে ছিলেন বন্দুকধারীরা। হাতকড়া অবস্থায় পুলিশ হেফাজতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন উত্তর প্রদেশের সাবেক সংসদ সদস্য আতিক ও তার ভাই আশরাফ। লাইভ চলাকালীন একটি বন্দুক তার মাথার কাছে ধরে হামলাকারী। তখনই গুলি চালানো হয়। গুলিবর্ষণের পর তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার সাদা পাগড়িটি মাথা থেকে আলাদা হয়ে যায়।  তার ভাইও নিহত হন।এই ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিন হামলাকারী।এ ঘটনায় তোলপাড় ভারতজুড়ে। হত্যাকাণ্ডে ইতোমধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর প্রদেশের রাজ্য সরকার। এ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদরা সমালোচনায় মেতেছে। তাদের ভাষ্য, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে।

 

আইনজীবী ও রাজনীতিক কপিল সিবাল বলেন, এই রাজ্যে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, ‘একটি আতিক ও দ্বিতীয়টি তার ভাই আশরাফ। এই হলো আইনের শাসন।’

 

উত্তর প্রদেশের রাজ্য পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক বিক্রম সিং বিবিসিকে বলেছেন, আতিক আহমেদের হত্যাকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য। পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু খুবই বাজে কাজ। হত্যাকাণ্ড তো আরও বেশি খারাপ।’

 

আহমেদ বিতর্কিত মানুষ হলেও অপরাধী হিসেবেও এমন হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই জায়েজ করা যায় না।

উত্থান

 

৬০ বছর বয়সী আতিক আহমেদ দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলে থাকা অবস্থাতেই ঝরে পড়েছিলেন। কিন্তু নানা উপায়ে প্রচুর সম্পদের মালিক হন তিনি। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং ক্ষমতা উপভোগ করেছিলেন। তার জন্মের শহরে ও বাইরেও দাপট দেখান।

 

১৯৮৯ সাল থেকে পাঁচবার উত্তর প্রদেশের বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আতিক। ২০০৪ সালে ফুলপুর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

 

রাজ্যের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বিক্রম সিং আতিক আহমেদকে বর্ণনা করেছেন ‘রবিন হুড’ চরিত্রের মতো। তিনি বলেন, আতিক আহমেদ দরিদ্র মানুষের জন্য প্রচুর খরচ করতেন। মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা দেওয়া, ঈদের বকশিশ এবং সন্তানদের স্কুল ইউনিফর্ম, বই-খাতা কিনতেও সহায়তা করতেন।

 

পতন

 

কিন্তু আহমেদের বিরুদ্ধে অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ প্রতিনিয়ত সামনে আসতে থাকে। এতেই তার মুখোশ উন্মোচন হতে থাকে। তার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। আরও অনেক অপরাধের ঘটনার সঙ্গেও জড়িত তিনি।

 

দুই দশকেরও বেশি সময় আহমেদ কারাগারে ছিলেন। কিন্তু তারপরও উত্তর প্রদেশের অপরাধ জগতে আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন এবং নিজের লোকদের নিরাপত্তা দিয়ে যেতেন। আলোচিত-সমালোচিত আতিক আহমেদের পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু হয় তার সঙ্গে সমাজবাদী পার্টির সম্পর্ক ছিন্ন করার পর থেকেই। একসময় বিজেপি ক্ষমতায় এলে ক্ষমতার দাপট কমতে শুরু করে তার।গ্রেফতার

 

একটি মামলায় ২০১৭ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের একটি কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয় তাকে। উমেশ পাল নামের একজন ব্যক্তিকে হত্যার ভিডিও প্রকাশের পর গত ফেব্রুয়ারিতে আতিকের বিরুদ্ধে সবশেষ বিচারকাজ শুরু হয়েছিল। উমেশ পাল ২০০৫ সালে বহুজন সমাজ পার্টির আইনপ্রণেতা রাজু পাল হত্যাকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। এ ঘটনায় আহমেদ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে পাল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। ওই  ঘটনার পর থেকেই আহমেদের পরিবারের পতন শুরু হয়।

 

গত বৃহস্পতিবার আতিকের ১৯ বছর বয়সী তার ছেলে আসাদ এবং সহযোগী পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। কিন্তু তার পরিবারের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবেই তাদের হত্যা করা হয়েছে।প্রয়াগরাজে উত্তেজনা

 

রবিবার সকালে প্রয়াগরাজের (এলাহাবাদ) অনেক এলাকা ভুতুড়ে পরিস্থিতি ছিল। শহরের প্রধান বাজারগুলোতে সাধারণত বছরের এই সময়ে মুসলমানরা ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিল। কিন্তু সেদিন জনশূন্য ছিল। বেশিরভাগ জায়গায় পুলিশের গাড়ি মোতায়েন এবং ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ। এ বিষয়ে মিডিয়ার সঙ্গেও কথা বলছে না স্থানীয়রা। 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪০ বছর বয়সী এক মুসলিম নারী বিবিসিকে বলেন, মিডিয়া ও পুলিশের সামনে কোনও মানুষকে প্রকাশ্যে কীভাবে হত্যা করা হয়? সে একজন দণ্ডিত অপরাধী ছিল, এ বিষয়ে আমি একমত, কিন্তু তার মানে এই নয় তাকে এভাবে গুলি করা যেতে পারে। তাহলে আইনের শাসনের কী হবে? এ ঘটনায় আমরা অনেকেই অবাক হয়েছি। একজন মুসলিম বলেই তাকে হত্যা করা হয়েছে কিনা, তা আমরা জানি না। কিন্তু এ ঘটনায় পুরো শহরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

 

সূত্র: বিবিসি