বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং পূর্ব ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা দাবি আদায়ে সারা দেশের সাড়ে ৬ শতাধিক স্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত ও গ্রেপ্তার হয়েছেন কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী। শুধু রাজধানীতে আহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন। অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে আটক হয়েছেন আরও অনেকে। গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ সব মহানগরীর থানা এবং উপজেলা পর্যায়ে দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে এসব ঘটনা ঘটে।
বিএনপি জানায়- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ ১৩টি মহানগরীর ১২৮টি সাংগঠনিক থানায় এবং সাড়ে ৫০০ উপজেলা মিলে প্রায় সাড়ে ৬০০ স্থানে একযোগে এ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এতে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, দলের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতারা অংশ নেন। কয়েকটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। মাদারীপুর, ভোলা, যশোর, লক্ষ্মীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পটুয়াখালী, শরীয়তপুর, নাটোর, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা ও ভাঙচুরের তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে, গতকাল রাজধানীর ৫০টি থানার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিএনপিসহ অংঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। হামলা, ভাঙচুরের মধ্যেও কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। রমনা থানা বিএনপি ও অংগসংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাজধানীর মৌচাক এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ সময় ১৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল মোতালেব রুবেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধোলাইখালে বিএনপি’র সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এড. ফাহিমা নাসরিন মুন্নি এবং সূত্রাপুর থানা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলামের উপর হামলা চালায় যুবলীগ। নিউ মার্কেট থানা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বাটা সিগন্যাল মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ২ জনকে আটক করা হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন শাহবাগ থানা বিএনপি’র নেতারা। ঢাকা উত্তর বিএনপি’র দপ্তর সম্পাদক এবিএমএ রাজ্জাক জানান, ঢাকা উত্তর বিএনপি’র ২৬টি থানার মধ্যে অন্তত ২০টি থানায় দলের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
নাটোর: দুপুরে নাটোর জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে কর্মসূচি প- হয়ে যায়। হামলায় আহত হয়েছেন সদর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন। বিএনপি’র নেতারা বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুরে আলাইপুরে জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নেন দলটির নেতাকর্মীরা। দুইটার পর মুসলিম ইনস্টিটিউট চত্বর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সমর্থিত দলের শতাধিক নেতা-কর্মী মোটরসাইকেল নিয়ে জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে আসেন এবং এলোপাতাড়ি ভাঙচুর ও মারধর করেন। আবুল হোসেনকে হকিস্টিক দিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করেন এবং তার মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা আবুল হোসেনকে উদ্ধার করেন এবং চিকিৎসার জন্য অটোরিকশায় করে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর জেলা যুবলীগের ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী হকিস্টিক হাতে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়কে টহল দিতে থাকেন।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ: বিএনপি’র কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর গাড়িবহরে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। বেলা ১১টার দিকে সুবিদখালী বন্দর এলাকার তিন রাস্তার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় মির্জাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা বেগমসহ অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। আহত অন্য দু’জন হলেন- উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নাজমুল মৃধা ও মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য মো. আল-আমিন।
সিলেট : কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার পথে সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরের সামনে থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরকে আটক করা হয়। পরে জামিনের কাগজপত্র দেখিয়ে মুক্ত হন তিনি।
সিলেটে পুলিশের বাধা: সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে বাধা প্রদানের অভিযোগ ওঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, পুলিশের বাধার কারণে নগরের পাঠানটুলা এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে পারেননি তারা।
জানা যায়, নগরীর তিনটি পয়েন্টে শনিবার অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে মহানগর বিএনপি। তবে পাঠানটুলা এলাকায় কর্মসূচি শুরুর আগেই বাধা দেয় পুলিশ। ফলে কর্মসূচি পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে যায়। এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, পুলিশ আমাদের অবস্থান করতে দেয়নি। আমরা রাস্তার পাশে অবস্থান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ আমাদের বাধা প্রদান করে।
সিলেট মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস বলেন, বিএনপিকে ইনডোরে তাদের কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়েছে। তারা নগরের একাধিক স্থানে ইনডোরের কর্মসূচি পালন করেছেন। এসব কর্মসূচিতে কোনো বাধা দেয়া হয়নি। তবে পাঠানটুলা এলাকায় সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় তাদের সেখানে অবস্থান না নিতে বলা হয়েছে।
মনপুরায় ২৫ নেতাকর্মী আহত
ভোলা প্রতিনিধি জানান, ভোলার মনপুরায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় উপজেলা বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। এতে উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ২৫ নেতাকর্মী আহত হন বলে দাবি করেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সেলিম মোল্লা। এ ছাড়া পর পর দুইবার হামলা চালিয়ে উপজেলা যুবদলের আহবায়কের বাড়ি-ঘর ভাঙচুরের অভিযোগ করেন তিনি।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে পুরান হাসপাতাল সংলগ্ন সড়ক দিয়ে কর্মসূচিতে আসা কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম নয়ন ফিরে যাওয়ার সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহতরা হলেন, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক শামসুদ্দিন মোল্লা, উপজেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ছালাউদ্দিন প্রিন্স, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জামাল মেম্বার, যুবদলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মো: মিজান, যুবদল নেতা মহিউদ্দিন, ওবায়দুল, বাহার, নুরনবী, ইলিয়াস, স্বেচ্ছাসেবক দলের তুহিন, ছাত্রদলের শুভ ফরাজী।
সেলিম মোল্লা জানান, সকাল ১০টার দিকে নুরুল ইসলাম নয়নসহ নেতাকর্মীরা উপজেলা যুবদলের আহবায়ক শমিসুদ্দিন মোল্লার বাড়িতে অবস্থান নিয়ে উপজেলা বিএনপির অফিসের সামনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে প্রস্তুতি নেয়। এই সময় যুবলীগ-ছাত্রীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে পর পর দুইবার হামলা চালিয়ে বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে। পরে কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন চলে যাওয়ার পথে ফের হামলা চালিয়ে ২৫ নেতা-কর্মীকে আহত করে। এদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ভোলা প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
দাগনভূঞায় হামলায় আহত ২০
ফেনী অফিস জানায়, ফেনীর দাগনভূঞায় কর্মসূচিতে হামলা করেছে সরকারদলীয় কর্মীরা। হামলায় ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপি শনিবার বিকেলে পৌর শহরের ডাকবাংলোর মুখে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে সরকারদলীয় ৫০-৬০ জন লাঠিসোঁটা হাতে অতর্কিত হামলা করে। এতে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইমুন হক রাজিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মামুন ও যুগ্ম-আহবায়ক পলাশসহ বিএনপির ২০ জন নেতাকর্মী আহত হন। দাগনভূঞা থানার ওসি মো: হাসান ইমাম জানান, হামলার খবর শুনে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রামগঞ্জে সংঘর্ষে আহত ১৫
রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা জানান, রামগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে আহত হয়েছে ১৪ নেতাকর্মী। এ সময় দুইপক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপে নিউজ ফুটেজ সংগ্রহের সময় আহত হয়েছেন দৈনিক কালবেলা রামগঞ্জ প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৬-৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ১০ বিএনপি নেতাকর্মী আহত হন বলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ দাবি করেন। শনিবার বেলা ৩টায় রামগঞ্জ পৌর ৫ নম্বর ওয়ার্ড সাতারপাড়া চৌরাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মামুন আহম্মেদ ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি ইমাম হোসেন জানান, নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে সাতারপাড়া এলাকা থেকে বাইপাস সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে নেতাকর্মীরা বের হন। কিন্তু আগে থেকে সাতারপাড়া চৌরাস্তায় অবস্থান করে পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও কাচের বোতল নিক্ষেপ করে। এ সময় বাধ্য হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়লে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে।
ডাসারে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ১৫
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, ডাসার উপজেলায় কর্মসূচি চলাকালীন সময় ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। বেলা সাড়ে ৩টায় উপজেলার কাঁঠালতলা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ দিকে হামলার ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খোকনসহ চার জনকে আটক করেছে ডাসার থানা পুলিশ। তারা হলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার (৪৫), ডাসার যুবদল নেতা নুরু তালুকদার (৪৫), ডাসার ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মন্নান সরদার (৫৫) কালকিনি উপজেলা স্বেচ্ছাবেসক দলের আহ্বায়ক শহিদুল ব্যাপারী (৪০)।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বেলা ৩টায় ডাসার উপজেলায় ডাসার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন তালুকদারের সভাপতিত্বে উপজেলার কাঁঠালতলা বাজার এলাকায় প্যান্ডেল করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় ডাসার বাজার আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির অনুষ্ঠানে এসে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন। এতেই বিএনপির ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেকাকর্মীদের বাগি¦তণ্ডা বাধে। এ সময় ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুর হয়। দু’পক্ষের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
গোয়ালন্দে সাংবাদিকসহ আহত ১০
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, গতকাল বেলা ৩টার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলা কোর্ট চত্বরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বহনকারী একটি মাইক্রোবাস আসলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ওই গাড়িতে ভাঙচুর শুরু করে। হামলায় বিএনপি নেতা কর্মী বহনকারি ২টি গাড়ি ভাঙচুর ও আটজন নেতাকর্মীকে মারধর করে আহত করা হয়। এ সময় কর্মরত সাংবাদিকরা ঘটনাটি ভিডিও ধারণ করতে গেলে উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে। হামলায় আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মইনুল হক মৃধাকে ভর্তি ও মোজাম্মেল হক লাল্টুকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
বিএনপি মহাসচিবের নিন্দা ও প্রতিবাদ:এদিকে গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপি জানায়, গতকাল শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, নেত্রকোনা জেলাধীন পূর্বধলা উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক বাবুল আলম তালুকদার, সাবেক সভাপতি মো. সাইদুর রহমান তালুকদার, নেত্রকোনা জেলা বিএনপি’র সদস্য আব্দুর রহিম, সাবেক সদস্য আবদুল গফুর, পূর্বধলা উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসনাত, সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল আজিজ কমান্ডার, পূর্বধলা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক এনামুল হক হলুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল হায়াত খান বাদশা, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোলেমান কবীর পাপ্পু, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো. জহিরুল ইসলাম, মো. রফিকুল ইসলাম রফিক ও সেলিম, মিরপুর থানাধীন ১১নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি আফজাল হোসেন, সহ-প্রচার সম্পাদক মো. জসিম, ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ ও থানা শ্রমিকদল নেতা মো. বাবু, কুষ্টিয়া জেলাধীন কুমারখালী উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-রবিউল শরীফ ও আবুল কাশেম, হাতিরঝিল থানাধীন ২৪নং ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতি সোহেল ও ২২নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা মো. বেল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া যশোর জেলার শার্শা উপজেলা বিএনপি’র কর্মসূচিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় যশোর জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব এডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, জেলা বিএনপি’র সদস্য মফিকুল হাসান তৃপ্তি, উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান জহিরসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নাটোর জেলাধীন সদর উপজেলায় সদর থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফয়সাল আলম আবুল, ফেনী দাগনভূঁঞা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি-আকবর হোসেন আকবরসহ ১০/১২ জন নেতাকর্মী, ভোলা মনপুরা উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মান্নান হাওলাদার, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি-এডভোকেট সালাউদ্দিন প্রিন্স, যুবদলের আহ্বায়ক-মো. সামছুদ্দিন মোল্লাসহ ১৫/২০ জন নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করে ফেরার পথে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি’র কোষাধ্যক্ষ হাজী আব্দুল হক মোল্লার গাড়িসহ ৬টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর, শরীয়তপুর জেলাধীন ভেদরগঞ্জ উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ীঘর ভাঙচুরসহ ১০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে হামলা চালিয়ে আহত করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এদিকে, বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও তাদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, রাষ্ট্রক্ষমতা সামলাতে নিশিরাতের সরকার এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকেও বরদাশত করছে না। বিএনপিকে নানাভাবে হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত করার ধারাবাহিক সরকারি মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবেই উল্লেখিত নেতৃবৃন্দকে পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা আহত করা হয়েছে। দেশের বৃহত্তম ও সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত বর্তমান শাসকগোষ্ঠী। অব্যাহত গতিতে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে কারান্তরীণ করছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রতি জনগণের ঘৃণা এতটাই তীব্র মাত্রা লাভ করেছে যে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের সুযোগ পেলে জনগণ তার উপয্ক্তু জবাব দিবে। সেজন্য জনমতকে অগ্রাহ্য করে জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে জোর করে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে চায় আওয়ামী সরকার। আর সেজন্যই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলোকে নানা পন্থায় দমন করতে সরকার সবধরনের নিষ্ঠুর পদ্ধতি গ্রহণ করছে। কর্তৃত্ববাদী সরকার তাদের সকল অন্যায় এবং দেশবিরোধী কর্মকা- থেকে জনদৃষ্টিকে ভিন্নদিকে সরানোর জন্য বেপরোয়া গতিতে দেশব্যাপী হামলা-মামলা, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও আহত করা শুরু করেছে। কিন্তু এভাবে নির্যাতন চালিয়ে আওয়ামী সরকার নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে না, কারণ জনগণ এখন ক্ষমতাসীন ফ্যাসিষ্ট সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।