ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫,
সময়: ১১:০১:৪৪ AM

ট্রেন চলাচল বন্ধের পেছনে দুই মন্ত্রণালয়ের ঠেলাঠেলি

স্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
28-01-2025 06:33:45 PM
ট্রেন চলাচল বন্ধের পেছনে দুই মন্ত্রণালয়ের ঠেলাঠেলি

রেলপথ মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণায়লের ঠেলাঠেলিতে ট্রেনের রানিং স্টাফদের দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অনড় কর্মীরা কর্মবিরতি থেকেও সরছেন না। দফায় দফায় রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা, রেলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা, মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বৈঠক হলেও সুরাহা হচ্ছে না। যেহেতু রেল কর্মীদের দাবির পেছনে বেতন-ভাতা-পেনসন জড়িত তাই রেল মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তের দায় ঠেলে দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকে।আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিষ্কার জবাব, রেল কর্মীদের ‘অযৌক্তিক দাবি’ মানার সুযোগ নেই। এই ঠেলাঠেলি কয়েক বছর ধরেই চলছে। 
সব মিলিয়ে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় সাড়ে ৫টার দিকেও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক চলছিল।এর ঘণ্টা তিনেক আগে ট্রেন চালু করতে আরো কয়েক দফা সমঝোতার বৈঠক হয়। রাজধানীর ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে স্টেশনে দুপুরে সব পক্ষকে নিয়ে ট্রেন চালু করতে বৈঠক হয়। কয়েক দফায় দুই ঘণ্টার বেশি বৈঠক চললেও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা যায়নি। কর্মবিরতি থেকে সরে আসতে রানিং স্টাফদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ফাহিমুল ইসলাম।ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। কিন্তু কোনো সুরাহা না হওয়ায় রানিং স্টাফরা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান।
বৈঠকে অংশ নেওয়া রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের ঢাকা বিভাগের আহ্বায়ক সাইদুস রহমান  বলেন, ‘আমরা দীর্ঘক্ষণ রেল সচিব, (ভারপ্রাপ্ত) মহাপরিচালক সঙ্গে বৈঠক করেছি। তবে কোনো সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছতে পারিনি বলে ওই বৈঠক চলাকালীনই আমি চলে আসছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।বৈঠকে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তারা আবারো অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে যাবে বিষয়টা নিয়ে। তবে আমাদের দাবি না মানা হলে কর্মসূচি তুলব না।’
এদিকে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, সন্ধ্যায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ে রেল উপদেষ্টা, রেল সচিব ও রানিং স্টাফদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আরেক দফায় বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

‘যৌক্তিক দাবি যতটুকু পূরণ করা সম্ভব তা করেছি’

দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা চলতে থাকলেও সমাধান করতে পারিনি রেল মন্ত্রণালয়। রেল মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঠেলাঠেলিতে এই অবস্থানে গিয়েছে বিষয়টি। অবশেষে বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন চলাচল। 

এদিকে রানিং স্টাফরা দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন তাঁরা। যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ।

এ ছাড়া অবসরের পর মূল বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর এই সুবিধা সীমিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই সময়ের পর নতুন করে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা পুরনোদের চেয়ে আরো কম সুবিধা পাবেন বলেও সরকার সিদ্ধান্ত নেয়।২০২২ সালের পর নিয়োগপত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা চলন্ত ট্রেনে দায়িত্বপালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা পাবেন না এবং মাসিক রানিং অ্যালাউন্সের পরিমাণ মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না। এ ছাড়া অবসরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বশেষ আহরিত মূল বেতনের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পাবেন। এরপর থেকে শুরু হয় জটিলতা। 

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রেলের কর্মচারীদের যে যৌক্তিক দাবি তা যতটুকু পূরণ করা সম্ভব তা করেছি। এরপরও তারা কেন আন্দোলন করছে এমন প্রশ্ন করেছেন। রেলের কর্মচারীদের জন্য মানবিক কারণে যতটুকু করা দরকার করেছি। ওভারটাইম ইস্যুর সমাধান করা হয়েছে। এর বাইরের যেসব দাবি তা পূরণ করা সম্ভব নয়। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে।

দিনভর ভোগান্তিতে ট্রেনের যাত্রীরা

রেলওয়ে রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সারা দেশের সব স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ। এ বিষয়ে রেলওয়ে থেকে যাত্রীদের আগাম কোনো বার্তাও দেওয়া হয়নি। ফলে স্টেশনে এসে ফিরে যাওয়াসহ গন্তব্যে পৌঁছানো নিয়ে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

গতকাল সকাল থেকে দেশের বড় বড় রেল স্টেশনে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র ছিল সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায়।বেশিরভাগ যাত্রীদের অভিযোগ ‘ট্রেন বন্ধ আমাদের আগে কেন জানাল হলো না’। আর ট্রেন না চললে টিকিট কেন বিক্রি করেছে তারা। 

ট্রেনের যাত্রী বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, যোশোর যাওয়ার জন্য ২৫ তারিখে টিকেট কেটেছিলাম। (আজ) ১০টা ৪৫ মিনিটে রূপসী বাংলা ট্রেনে যশোর যাওয়ার কথা ছিল। আমি বাসে যাতায়াত করতে পারব না। ট্রেন যদি নাই যাবে, তাহলে টিকেট বিক্রি করল কেন? আমি তো মহাপবিপদে পড়েছি। এর দায় নেবে কে?