গত আগস্টে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। এরপর জোরদার হয়েছে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক। ফলে আগামী এক বছরে দুই দেশের মধ্যে তিনগুণ বেড়ে ৩০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে। যা বর্তমান সময়ের চেয়ে চারগুণ বেশি।মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় বাংলাদেশ। এরপর আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা যখনই ক্ষমতায় গিয়েছেন তখনই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দেয়। সর্বশেষ তৃতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সম্পর্ক একদম তলানিতে গিয়ে পৌঁছায়। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে তার পতনের পর এ সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে।গেল বছরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একাধিক বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছরে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল এস এম কামরুল হাসান ইসলামাবাদ সফর করেন। এ সময় তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।
এরপর গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফল করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় চেম্বার অব কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রিজের (এফপিসিসিআই) একটি প্রতিনিধি দল। গত এক দশকের মধ্যে এটি পাকিস্তানের উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়িক দলের প্রথম সফর। সফরে তারা বাণিজ্য উপদেষ্টা, ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের কর্মকর্তা ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় দুই দেশের মধ্যে যৌথ ব্যবসায়িক কাউন্সিল গঠনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এ ছাড়া তারা দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিরও আহ্বান জানান।
এফপিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাকিব ফাইয়াজ মাগুন বলেন, ঢাকা আমদানির জন্য পাকিস্তানি ব্যবসাকে পছন্দ করে জানিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা।তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেবল পোশাক ও প্লাস্টিকশিল্প রয়েছে। ফলে তাদের জনগণের জন্য অনেক পণ্য আমদানি করতে হয়। এটি আমাদের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। শেখ হাসিনার সময় এটি বন্ধ ছিল।
মাগুন বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৫০ হাজার টন চাল ও ২৫ হাজার টন চিনি আমদানির আদেশ দিয়েছে। পাকিস্তান থেকে খেজুর আমদানির কথা ভাবছে তারা।তিনি নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দূর হলে এক বছরের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্য ৩০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে। আমরা চাল, চিনি, তেল, তুলার সুতা ও নারীদের পোশাকের মতো অনেক পণ্য আমদানি করতে পারে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচনা জলো চট্টগ্রাম-করাচির জাহাজ যোগাযোগ চালু হওয়া। যা গত ৫২ বছরের মধ্যে ব্যবহৃত হয়নি। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়টি যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের পর থেকে এ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।