কানাডার সংসদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দাবি করেছেন শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারতের জড়িত থাকার ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এরপরই ভারত ও কানাডার সম্পর্ক নজিরবিহীনভাবে খারাপ হয়। দেশ দুইটি একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। এরই মধ্যে এই ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এ বিষয়কে কেন্দ্র করে এশিয়ার অন্যতম অর্থনীতির দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কী রকম হবে।ভারতের অনেকেই মনে করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ট্রুডোকে ঝুলিয়ে রেখেছে। কারণ জো বাইডেন প্রশাসন তার অভিযোগের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। কোনো ধরনের সতর্কবার্তা না দিয়ে কেবল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ও ভারতকে তদন্তে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানের কারণে ভারত নিজেদের অবস্থানে শক্ত থাকছে ও হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি শিখদের প্রতি কঠোর অবস্থানে রয়েছে নয়াদিল্লি। এতে অনেক ভারতীয় তাদের সরকারের প্রতি খুশি। বহুদিন থেকেই কানাডীয় নাগরিক নিজ্জারকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সালে পাঞ্জাবে হত্যাকাণ্ড ও ১৯৮৪ সালে শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে ইন্দিরা গান্ধির হত্যাকে ভারতীয়রা এখনো মনে রেখেছে।ভারতীয় সমালোচকরা মনে করেছিল ট্রুডো অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। কারণ হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার তথ্য কানাডাকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র ফাইভ আইজের সদস্য। এই গোয়েন্দা গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলো অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও নিউজিল্যান্ড। এই দেশগুলো নিজেদের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি করে। জি২০ সম্মেলনেও মোদীকে ব্যক্তিগতভাবে এই হত্যার ব্যাপারে জানিয়েছে মোদীসহ ফাইভ আইজের নেতারা।
ভারত সম্ভবত পশ্চিমা ঐক্যের শক্তিকে অবমূল্যায়ন করেছে। এটি কানাডাকে একটি দ্বিতীয় সারির শক্তি হিসেবে দেখে। তারা মনে করে যদি অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে ভালোভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারবে। ওয়াশিংটনের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের তানভি মদন বলেছেন, কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রথমত কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবেশী দেশ। দেশ দুইটির রয়েছে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যু। উত্তর আমেরিকায় অন্যদেশের হস্তক্ষেপকে তারা মেনে নেবে না। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রেও রয়েছে শিখ সম্প্রদায়।তবে কোনো অপরাধমূলক প্রমাণ প্রকাশ করা হলেও অভিযুক্তদের অস্বীকার করার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রতি তার কৌশলগত প্রতিশ্রুতি ভেঙে ফেলবে না। মোদী ও তার দল ভারতে যে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ নিয়ে এসেছেন তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র খুব কমই মোদীর সমালোচনা করেছে। চীন সম্পর্কে পারস্পরিক উদ্বেগের ওপর ভিত্তি করেই তাদের অংশীদারত্ব।ভারত একদিকে পশ্চিমাপন্থি আবার অন্যদিকে পশ্চিমের প্রতি বিরক্ত। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্ক গভীর করতে আগ্রহী, কিন্তু তার নিরাপত্তার দিক অন্য শক্তির কাছে হস্তান্তর করতে গভীরভাবে অনিচ্ছুক। ভারত যদি চীনের মতো নিজেদের ওজন হারানো শুরু করে, তবে এটি দ্রুতই কিছু দ্বিদলীয় সমর্থন হারাবে। নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারত যদিও সত্যিই দায়ী হয়, তাহলে মোদীর উচিত অবাধ্যতা কমানো।