দীর্ঘ দেড় যুগের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উত্তাপ, আর সারাদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবমুখর আবহ। বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মতে, এটি আর কেবল একটি দলীয় কর্মসূচি নয়—বরং রূপ নিচ্ছে একটি সর্বস্তরের গণজাগরণে।বিএনপির ভাষ্য অনুযায়ী, তারেক রহমান এখন শুধু একটি রাজনৈতিক দলের নেতা নন; তিনি কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, কৃষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশার প্রতীক। তাঁর দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেই শূন্যতা পূরণের প্রত্যাশায় তাঁর প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে মানুষের আবেগ আজ স্পষ্ট। সেই আবেগ আর ভালোবাসা প্রকাশ করতেই লাখো মানুষ ঢাকামুখী হয়েছেন।
রাজধানীর হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউস, ভাড়া বাসা ও মেসগুলোতে ইতোমধ্যে জায়গা সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকেই কর্মসূচির কয়েক দিন আগেই ঢাকায় এসে অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের দাবি, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় এই গণসংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হতে পারে।
তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে ঢাকার ৩০০ ফিট এলাকায় বিশাল গণসংবর্ধনার আয়োজন করেছে বিএনপি। এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেশের ৬৩ জেলা থেকেই ঢাকায় ছুটছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। বাস, ট্রেন, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারের পাশাপাশি মোটরসাইকেল বহরেও ঢাকার পথে যাত্রা করছেন তারা। ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় পৌঁছেছেন। বাকিরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পৌঁছাবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
নেতাকর্মীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন রাখতে বিএনপির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দলীয় ব্যবস্থাপনায় একাধিক ট্রেন রিজার্ভ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পরিবহন সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাতে যাতায়াতের সময় কোনো বিশৃঙ্খলা বা ভোগান্তি না ঘটে।
জেলা ভিত্তিক অংশগ্রহণের চিত্র
মেহেরপুর জেলা বিএনপি জানিয়েছে, জেলা থেকে পাঁচ হাজারের বেশি নেতাকর্মী ঢাকায় অংশ নেবেন। জেলা বিএনপির সভাপতি জাবেদ মাসুদ মিল্টন বলেন, জেলার তিনটি উপজেলা থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বাস, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করে ঢাকায় যাচ্ছেন। অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে আগেই ঢাকায় পৌঁছেছেন।
নওগাঁ জেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের যাতায়াতের জন্য ১০০টি বাস ভাড়া করেছে। জেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু জানান, প্রাথমিকভাবে সাত হাজার নেতাকর্মীর ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গাইবান্ধা জেলা থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অন্তত ২০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় যাচ্ছেন। জেলার সাত উপজেলার ৮১টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার সব ইউনিট থেকেই অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। এ জন্য পাঁচ শতাধিক বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার ভাড়া করা হয়েছে। অনেকেই ট্রেনে ও ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় যাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে প্রায় ৩০০ গাড়ির বহর নিয়ে নেতাকর্মীরা ঢাকায় উপস্থিত হবেন বলে জানানো হয়েছে। দলীয় নেতারা বলছেন, শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এই এলাকা থেকে বড় উপস্থিতি কর্মসূচিকে আরও শক্তিশালী করবে।
খুলনা বিভাগ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি লক্ষ্য করা গেছে। খুলনা জেলা বিএনপি জানিয়েছে, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে তারা দীর্ঘদিন ধরেই সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। রাজশাহী থেকে ৩৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মী ও সমর্থক ঢাকায় যাবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। তারা ট্রেন, বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহনে করে ঢাকায় পৌঁছাবেন।
রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম জানান, রংপুর থেকে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ ঢাকায় যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা রংপুর হয়ে ঢাকায় আসছেন।
লক্ষ্মীপুর থেকে প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী সড়ক ও নদীপথে ঢাকায় যাচ্ছেন। সাতক্ষীরা জেলা থেকে ১০ থেকে ১২ হাজার এবং বাগেরহাট জেলা থেকে প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় অংশ নেবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
দলীয় নেতাদের প্রত্যাশা
বিএনপির নেতারা বলছেন, এই গণসংবর্ধনা কেবল একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে প্রত্যাবর্তন নয়; এটি দেশের সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা, আবেগ ও বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। তাদের মতে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথচলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে।
সব মিলিয়ে, ঢাকার ৩০০ ফিট এলাকা এখন প্রস্তুত এক ঐতিহাসিক জনসমাবেশ প্রত্যক্ষ করতে। লাখো মানুষের ভালোবাসা, প্রত্যাশা ও আবেগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন—যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।