ঢাকা, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫,
সময়: ০৯:১৩:৪৫ PM

আলতাফ চৌধুরী সৎ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি

স্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
22-12-2025 07:08:43 PM
আলতাফ চৌধুরী সৎ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি

এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী একজন সহজ-সরল, সৎ, নির্ভীক ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। সামরিক ও রাজনৈতিক—উভয় অঙ্গনেই তিনি সততা, পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি ১৯৪১ সালে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ থানার কাঠালতলী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবকাল থেকেই শৃঙ্খলা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের আদর্শে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন, যা পরবর্তী জীবনে তার সাফল্যের মূল ভিত্তি হয়ে ওঠে।

সামরিক জীবন

আলতাফ হোসেন চৌধুরী তার কর্মজীবন শুরু করেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে একজন যোদ্ধা পাইলট হিসেবে। তিনি আধুনিক যুদ্ধবিমান ড্যাসল্ট মিরাজ–৩ এর প্রধান পাইলট হিসেবে দক্ষতা ও পেশাগত নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে স্কোয়াড্রন লিডার হিসেবে যোগদান করেন।

১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি পাইলট প্রশিক্ষণ স্কুলে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি বহু দক্ষ, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও দেশপ্রেমিক পাইলট গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তার পেশাদারিত্ব, কঠোর শৃঙ্খলা ও নেতৃত্বগুণের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ধাপে ধাপে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হন। অবশেষে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি বাহিনীর আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সামগ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। একজন দক্ষ সংগঠক ও দূরদর্শী নেতা হিসেবে তার ভূমিকা বিমান বাহিনীর ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।

রাজনৈতিক জীবন

১৯৯৫ সালে সফল সামরিক জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-তে যোগ দেন। রাজনীতির অঙ্গনেও তিনি সততা, নিষ্ঠা ও সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দেন। বিএনপি সরকারের সময়ে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন তিনি।

মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি দায়িত্বশীলতা, দৃঢ়তা ও প্রশাসনিক দক্ষতার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করেন। বিশেষ করে পটুয়াখালী, বরগুনা ও বরিশাল অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়নে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। পটুয়াখালী–বরিশাল–বরগুনা মহাসড়ক নির্মাণ ও উন্নয়ন, বরিশাল–বরগুনা মহাসড়কের সংস্কার এবং পটুয়াখালী জেলার ধুমকি ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি গ্রামের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন তার অন্যতম বড় অর্জন। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থানীয় অর্থনীতি ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এছাড়াও তিনি শিক্ষা, ধর্মীয় ও সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তার উদ্যোগে এলাকায় বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দির নির্মিত হয়, যা শিক্ষা ও সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। পাশাপাশি বহু শিক্ষিত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তিনি জনগণের কাছে আরও সমাদৃত হয়ে ওঠেন।

২০০৮ সালে তিনি পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর এবং ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দলের প্রতি আনুগত্য ও সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে ২০১৬ সাল থেকে তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পটুয়াখালী–১ আসনের রাজনীতিতে তিনি একজন পরিচিত, অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় নেতা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে এলাকাবাসী আশাবাদী।

এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী সামরিক ও রাজনৈতিক—উভয় জীবনেই শৃঙ্খলা, সততা, পেশাদারিত্ব ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সফল সামরিক ক্যারিয়ার এবং জনকল্যাণমুখী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তার জীবনকে করেছে গৌরবোজ্জ্বল। কর্মনিষ্ঠা, নেতৃত্বগুণ ও দায়িত্ববোধের কারণে তিনি আজ দেশের একজন সম্মানিত, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুপরিচিত।