১ মে রাতে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন শীর্ষ নেতা বৈঠক করেন। তাঁরা বরিশাল মহানগরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে আহ্বায়ক কমিটি গঠনে একমত হন। এতে খোকন সেরনিয়াবাতকে আহ্বায়ক ও ৩ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করার সিদ্ধান্ত হয়। একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের সঙ্গে মহানগর কমিটির টানাপোড়েনের অবসান ঘটাতে এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দলের হাইকমান্ড। চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পরই নতুন কমিটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।
মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান মেয়র ও মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি খোকন সেরনিয়াবাতের ভাতিজা। খোকনের বড় ভাই ও মেয়রের বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি দক্ষিণাঞ্চলের প্রভাবশালী নেতা। তবে হাসানাত পরিবারের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক খোকন সেরনিয়াবাতের।
সূত্র জানায়, দুটি কারণে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে। প্রথমত, খোকন সেরনিয়াবাতকে প্রার্থী ঘোষণার দুই সপ্তাহ পরও এখন পর্যন্ত মহানগর কমিটি নির্বাচনী কাজে যুক্ত হয়নি। দ্বিতীয়ত, গত সোমবার মে দিবস পালনে খোকন সেরনিয়াবাতের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা হলেও এতে অংশ নেননি সাদিক অনুসারী মহানগর নেতাকর্মীরা। পরে মহানগর কমিটি পৃথক শোভাযাত্রার নামে শোডাউন করেছে। এই শোডাউন মেয়র প্রার্থীর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো ঘটনা বলে মনে করছে দলের হাইকমান্ড।
এদিকে মে দিবসে পৃথক শোভাযাত্রা না করার জন্য রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত তৎপরতা চলে জানা গেছে। রাত ১২টার পরে মহানগরের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর, সহসভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস খোকন সেরনিয়াবাতের বাসায় যান। তখন তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিকেলের শোভাযাত্রা করবেন না তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তালুকদার ইউনুস খোকনের বাসায় যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, পৃথক শোভাযাত্রা হলেও আমরাও নৌকার পক্ষেই স্লোগান দিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।
মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য এবং শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন বলেন, মহানগর কমিটির নেতাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তাঁরা সাদিক আবদুল্লাহর কর্মচারী। এই কমিটিকে নির্বাচনের মাঠে নামানো হলে তাঁরা আত্মঘাতী কাজ করতে পারেন। তাই কমিটি বিলুপ্ত করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। খোকন সেরনিয়াবাত গত ২৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব জানিয়েছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন বলেন, মহানগরের কমিটি ভেঙে দেওয়া হলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আরেক সহসভাপতি ও প্যানেল মেয়র গাজী নইমুল হোসেন লিটু এ প্রসঙ্গে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নগর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দিন থেকে মেয়াদ ৩ বছর ধরা হবে। সে হিসেবে মহানগরের মেয়াদ আছে আরও এক বছর। কমিটি পরিবর্তন করতে হলে সম্মেলন ডাকতে হবে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আফজাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ১৬ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। তার আগেই মহানগরের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ চলছে। নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পরিকল্পনার বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই।
২০২১ সালের শুরুতে মহানগর আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্যের পূর্ণ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তারও দেড় বছর আগে ৩০টি ওয়ার্ডে পৃথক সম্মেলন করে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম ঘোষণা দেওয়া হয়। গত সাড়ে ৩ বছর ধরে দুই সদস্যের কমিটি দিয়ে চলছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ।