উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এরইমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তিনি। কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে মঙ্গলবার রাত ১০টায় লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন তিনি। চিকিৎসকদের পরামর্শে তার দেশের ফেরার তারিখ নির্ধারণ হবে। এই সফরের মধ্য দিয়ে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সাত বছর পর দেখা হচ্ছে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের।দলীয় সূত্র বলছে, লন্ডনে পৌঁছে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা রয়েছে খালেদা জিয়ার। বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে কিছুদিন থাকার পর যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। মেরিল্যান্ডের পূর্ব বাল্টিমোরে অবস্থিত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন তিনি।
খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার প্রস্তুতি সম্পন্ন
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ যাত্রার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির রাজকীয় বহরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছেন। সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সংবলিত এই বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ফ্লাইটে করে মঙ্গলবার রাতে লন্ডন যাবেন খালেদা জিয়া। এ সফরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে রোববার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। এছাড়াও এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে।
অর্ধযুগ ধরে খালেদা জিয়ার বিদেশ চিকিৎসার দাবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। এরপর থেকেই খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবার এবং দল থেকে একাধিকবার দাবি জানানো হচ্ছিল। কারাবাসকালীন খালেদা জিয়াকে কারা কর্তৃপক্ষ তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করলেও বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি সরকার। ২০২০ সালের মার্চে তৎকালীন সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি পান তিনি। কারামুক্তির পর থেকে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থাকলেও এ সময়ে তাকে একাধিকবার জরুরি ভিত্তিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার হার্টে রিং পরানো হয়েছে, লিভার সিরোসিসের চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিকিৎসক এনে ‘টিপস’ করানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও তার বিদেশে চিকিৎসার দরজা উন্মুক্ত হচ্ছিল না।ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এর পরপরই তার বিদেশযাত্রা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়। তিনি কোন দেশে যেতে পারেন, সেটা নিয়ে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড ও পরিবার একাধিকবার বৈঠক করেছে। এ সময়ের মধ্যে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থাও দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য সায় দিচ্ছিল না। এমন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থা দীর্ঘ ভ্রমণের উপযোগী করে তোলা, কোনোভাবে তাকে বিদেশে নেওয়া যায় এবং তার পাসপোর্ট জটিলতা নিরসনের ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরইমধ্যে তার নতুন পাসপোর্ট করানো, ভিসা জটিলতা সব কিছু কেটে গেছে। তিনি যুক্তরাজ্য ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের ভিসাও পেয়েছেন।খালেদা জিয়ার
সফর সঙ্গী
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এবারের বিশেষ সফর সঙ্গীর বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও চিকিৎসক, পরিবারের সদস্য এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাসহ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন যেতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এরইমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার সফর সঙ্গী হিসেবে সাতজন চিকিৎসকসহ ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যাবে এমন তথ্য প্রচারিত হয়েছে। ওই তথ্য অনুযায়ী, সফর সঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডা. মো. এনামুল হক চৌধুরী, তাবিদ মোহাম্মদ আওয়াল, ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিক, মো. শাহাবুদ্দীন তালুকদার, নুরুদ্দীন আহমাদ, মো. জাকির ইকবাল, মোহাম্মদ আল মামুন, শরিফা করিম স্বর্ণা, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবিএম আব্দুস সাত্তার, মো. মাসুদুর রহমান, এসএম পারভেজ, ফাতেমা বেগম এবং রুপা শিকদার। তবে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়া যায়নি।