ঢাকা, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫,
সময়: ০৪:৫৯:৫৫ AM

মার্চে বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে বিএনপি

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
02-01-2025 11:08:06 AM
মার্চে বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে বিএনপি

ফ্যাসিবাদের পতনে মুক্ত পরিবেশে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পেলেও খুব একটা ফুরফুরে মেজাজে নেই বিএনপি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলটির সামনে এখন একাধিক চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর মধ্যে অন্তর্র্বতী সরকারের সঙ্গে সার্বিক সহযোগিতার ভিত্তিতে চলতি বছর নির্বাচন আদায় করাই বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, এখনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকলেও অন্তর্র্বতী সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য নির্বাচনের যে ধারণা দেওয়া হয়েছে, তাতে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের কথাও বলা হয়েছে। অন্যদিকে, চলতি বছরের মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এটিই ‘যৌক্তিক সময়’ বলে মনে করেন তারা। এই ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারে দলটি। তবে তারা সরকারের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে যাবে না। বিএনপির আশা, জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ‘যৌক্তিক সময়ে’ নির্বাচন দেবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, বিএনপিকে নির্বাচন আদায় ছাড়াও লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চলতি বছর দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। সারা দেশের নেতাকর্মীরা তার ফেরার প্রতীক্ষায় রয়েছেন। এ ছাড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের ঐক্য ধরে রাখা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানান দাবির মুখে ছাত্রদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দেশকে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়াও বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জের। নির্বাচন সামনে রেখে দলটিকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়িয়ে যোগ্য ও ত্যাগীদের দিয়ে সারা দেশে সংগঠনও গোছাতে হবে। দলকে সুসংগঠিত করে নতুন সব চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মন জয়ে তাদের প্রত্যাশা পূরণেও কাজ করতে হবে।ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হয়। সরকার অনুভব করে, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করায় রাষ্ট্র কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে ১৫টি কমিশন গঠন করে সরকার। তবে সংস্কার আগে, নাকি নির্বাচন আগে—এ নিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং এর মিত্র দল ও জোটগুলোর বেশিরভাগই নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরে দ্রুত নির্বাচন চাইছে। পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দায়িত্ব পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দিতে বলছে তারা। এমন প্রেক্ষাপটে বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষদিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।’

বিএনপি মনে করে, চলতি বছরের প্রথমার্ধের ভেতরে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষে পরবর্তী তিন-চার মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। সেক্ষেত্রে ২০২৫ সাল অতিক্রম হওয়ার কথা নয়। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন হলে তাতে আপত্তি থাকবে না বিএনপির। তাদের অভিযোগ, দেশে এখন ‘পতিত’ ফ্যাসিবাদের দোসরদের নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকতে পারে। তা ছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অর্থনীতিতে গতি আনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনে এখনো স্থিতিশীলতা আসেনি বলে মনে করে বিএনপি। দলটি আরও মনে করে, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রসহ নানা ঘটনায় দেশে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা মনে করে, দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং দেশকে স্থিতিশীল করতে নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপেই কাটতে পারে নির্বাচনকেন্দ্রিক জটিলতা বা সংশয়। আর নির্বাচন যত দেরি হবে, সংকট তত বাড়বে।

জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতিতে ২০২৫ সালেই নির্বাচন আদায়ে সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গত দুই মাসের অধিক সময় ধরে রোডম্যাপের দাবিতে সোচ্চার থাকা বিএনপি। তবে তারা অন্তর্র্বতী সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় না। দাবি আদায়ে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এর অংশ হিসেবে শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত না হলেও আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ সারা দেশে বড় বড় সভা-সমাবেশ করা হতে পারে। বিএনপির ভাবনা অনুযায়ী, এই কর্মসূচি একদিকে যেমন নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে কাজে লাগানো যাবে, অন্যদিকে জনগণ যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, সেটিও তুলে ধরা যাবে। বিএনপি এখন রাষ্ট্র মেরামতের দলীয় রূপরেখা ৩১ দফাকে নতুন করে ব্র্যান্ডিংয়ে ব্যস্ত। এ নিয়ে বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার পর এখন জেলাভিত্তিক কর্মশালা চলছে, যেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হচ্ছেন। এই কর্মসূচি শেষে নির্বাচন ইস্যুতে ফোকাস করবে দলটি।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই। দলটির নেতারা বলছেন, দল গঠন করে নির্বাচনের জন্য তারা জনগণের কাছে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্র বা কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হলে গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দলগুলো তো বটেই, জনগণও তা মেনে নেবে না। একই সঙ্গে ছাত্রদের নতুন দল আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠলে বিএনপির তাতে আপত্তি রয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো রাজনৈতিক দল গড়ে উঠুক, বিএনপি তা-ও চায় না। তবে ছাত্রদের নানান কর্মকাণ্ডে সন্দেহ-আপত্তি থাকলেও তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াবে না বিএনপি। সরকারের সঙ্গেও কোনো বিরোধে যাবে না। এই সরকার ব্যর্থ হোক, বিএনপি সেটা চায় না।

শত নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় করতে পারাকে ২০২৪-এর বড় অর্জন হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নতুন বছরে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা বড় চ্যালেঞ্জ। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে চায় বিএনপি। তারা ধৈর্য ধরে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দেশকে কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন বছরে বিএনপির প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন  বলেন, নতুন বছরে জনগণের প্রত্যাশা, দেশে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হবে, গণতন্ত্র জনগণের কাছে ফিরে যাবে, জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার ও ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরে পাবে, দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং বিগত ১৪ বছর ধরে যে অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন, দুর্নীতি হয়েছে, তার থেকে দেশ মুক্তি পাবে।

তিনি আরও বলেন, সামনে অনেক ইস্যু আছে, সেগুলো মোকাবিলা করা অবশ্যই এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। দুর্নীতি, ঘুষ-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং প্রশাসনে যে পক্ষপাতিত্ব, এগুলো থেকে মুক্ত হওয়া দেশের জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জের। তারপরও এটা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আমরা চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন চাই, এটা যৌক্তিক সময়। সরকার এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) আন্তরিক হলে এটা সম্ভব।