ঢাকা, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪,
সময়: ০৪:৩৬:০১ AM

নিষ্ঠার সাথে এই দায়িত্ব পালন করবো:আমিনুল হক

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
05-11-2024 05:56:10 PM
নিষ্ঠার সাথে এই দায়িত্ব পালন করবো:আমিনুল হক

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির শীর্ষ দুই পদের দায়িত্বকে ঈমানি দায়িত্ব বলে মনে করছেন নতুন কমিটির আহ্বায়ক আমিনুল হক ও সদস্য সচিব মোস্তফা জামান।সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ৬ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর  দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তারা।এ দিন সাংগঠনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা মহানগর উত্তরসহ চার মহানগর এবং ছয় জেলায় নতুন কমিটি দেয় বিএনপি। এর মধ্যে একটিতে পূর্ণাঙ্গ এবং বাকিগুলোতে আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন এসব কমিটি গঠনের তথ্য জানানো হয়। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আমিনুল হককে আহ্বায়ক এবং মোস্তফা জামানকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ছয় সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির অন্যরা হলেন- যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এসএম জাহাঙ্গীর, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি এবং যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএম আব্দুর রাজ্জাক (দপ্তর)।তবে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী অনেক নেতার মহানগর উত্তরের স্বল্প পরিসরের এই কমিটিতে স্থান হয়নি। এ কারণে তাদের কর্মী-সমর্থকরা কিছুটা হতাশ। জানা গেছে, উত্তর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অথবা পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের পদায়ন করা হতে পারে।

উত্তর বিএনপির নতুন কমিটি পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্থানীয় নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন কমিটির নেতারা মাঠের রাজনীতির পাশাপাশি আন্দোলন-সংগ্রামেও সক্রিয় ছিলেন। আর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের মহানগর উত্তরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠিত হওয়ায় নেতাকর্মীরা খুশি। কারণ, তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, মহানগর উত্তর থেকেই উত্তর বিএনপির কমিটি গঠন করা হোক।

কমিটির মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চান। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সম্পূর্ণ ক্লিন ইমেজসম্পন্ন নেতাদের দিয়ে মহানগর উত্তর বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করেছেন তিনি।

মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে বিএনপি। এর আগে গত ৭ জুলাই সাইফুল আলম নিরবকে আহ্বায়ক ও আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে দুই সদস্যের এই আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

আমিনুল হক ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির বিগত দুটি কমিটিতে (আমান-আমিনুল এবং নীরব-আমিনুল) সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এবার তাকে উত্তরের আহ্বায়ক করা হয়েছে। তিনি নেতাকর্মীদের কাছে ক্লিন ইমেজসম্পন্ন এবং তারেক রহমান ও বিএনপির আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। দল এবারও তার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেছে। এ নিয়ে টানা তিন কমিটির শীর্ষ পদে রইলেন সাবেক এই ফুটবলার। উত্তর বিএনপি'র বিগত কমিটি বিলুপ্ত করার পরও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন আমিনুল হক। লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মকাণ্ডে মানুষকে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন করাসহ নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি করেন তিনি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থাকা আমিনুল একাধিক মামলায় কারাবরণও করেছেন।

মোস্তফা জামানও দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। ছাত্রদল দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। ১৯৯১ সালে বর্তমান তুরাগ থানা ও উত্তরা-পশ্চিম থানার সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন হরিরামপুর ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মোস্তফা জামান। পরবর্তীতে মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। মহানগর উত্তর বিএনপির আগের কমিটিগুলোতে সহ-সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সরকারবিরোধী সর্বশেষ আন্দোলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সাথে সমন্বয় করে রাজপথে কর্মসূচি পালন করেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মনোনয়নে ৫৩ নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে ভোট করেন মোস্তফা জামান। একাধিকবার কারাবরণ করা মোস্তফা জামানের বিরুদ্ধে দেড়শর মতো মামলা রয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান সেগুনের দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রয়েছে। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। নেতাকর্মীরা মনে করেন, সেগুন এতদিন দলে বঞ্চিত ছিলেন। এবার উত্তরের কমিটিতে তাকে গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করা হয়েছে।

এসএম জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন ধরে উত্তরের রাজনীতিতে জড়িত। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তরে ছাত্রদল ও যুবদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২০ সালে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নও পান তিনি। সেই হিসেবে উত্তরে তার একটা শক্ত অবস্থান রয়েছে। এবার তিনি মহানগর উত্তর বিএনপির শীর্ষ পদের একটিতে বিশেষত সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব থাকবেন- দলীয় রাজনীতিতে এমন আলোচনা ছিল। তাকে নতুন কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।

ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি বিএনপির প্রয়াত নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর বোন। তিনি বিএনপির মনোনয়নে ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। মিষ্টি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত রয়েছেন। মহানগর উত্তরের কমিটিতেও তিনি এর আগে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সব সময় রাজপথে তার ভূমিকা ছিল। দল তার কাজের মূল্যায়ন করেছে।

এবিএম আব্দুর রাজ্জাকও দীর্ঘদিন ধরে উত্তর বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। সরকারবিরোধী সর্বশেষ আন্দোলনে দলের মহানগর উত্তরের দপ্তরে থেকে নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় সাধন করেন, যা রাজধানীতে আন্দোলনকে সংঘটিত করতে ভূমিকা রাখে। দল তার এই কাজের মূল্যায়ন করেছে।

জানতে চাইলে মহানগর উত্তর বিএনপি'র নতুন কমিটির আহবায়ক আমিনুল হক বলেন, দল এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাকে ঈমানি দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি পরিপূর্ণভাবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে এই দায়িত্ব পালন করবেন। দলের সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করবেন।

নতুন কমিটির সদস্য সচিব মোস্তফা জামান  বলেন, বিএনপি এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার কাজের মূল্যায়ন করেছেন। তাকে ঈমানি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এটা মহাদায়িত্ব। তিনি নতুন কমিটির আহ্বায়ক আমিনুল হকের সাথে সমন্বয় করে দলের সবাইকে নিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে এই দায়িত্ব পালন করবেন।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরে এরশাদ উল্লাহকে আহবায়ক ও নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করে ৫৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি; বরিশাল মহানগরে মনিরুজ্জামান খান ফারুককে আহবায়ক ও মো. জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়াকে সদস্য সচিব করে ৪২ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি; সিলেট মহানগরে রেজাউল হাসান কয়েছ লোদীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ইমদাদ হোসেন চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি; মৌলভীবাজার জেলায় ফয়জুর রহমান ময়ুনকে আহবায়ক করে ৩২ সদস্যের আহবায়ক কমিটি; সুনামগঞ্জ জেলায় কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনকে আহবায়ক করে ৩২ সদস্যের আহবায়ক কমিটি; ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নানকে আহবায়ক ও সিরাজুল ইসলাম সিরাজকে সদস্য সচিব করে ৩২ সদস্যবিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি; কুষ্টিয়া জেলায় কুতুব উদ্দীন আহমেদকে আহবায়ক ও ইঞ্জিনিয়ার মো. জাকির হোসেন সরকারকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি; ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলায় মো. জাকির হোসেন বাবলুকে আহবায়ক ও মো. রোকনুজ্জামান সরকার রোকনকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্যের আহবায়ক কমিটি এবং শেরপুর জেলায় মো. হযরত আলীকে আহবায়ক ও অ্যাডভোকেট মো. সিরাজুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্যবিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।