সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চায় বলে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন যে মন্তব্য করেছেন, তা জনগণের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয় বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে শনিবার (১১ নভেম্বর) বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি দেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।এতে বলা হয়, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন ৯ নভেম্বর এক সেমিনারে নির্বাচন নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা বিএনপি ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা জনগণের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। রাষ্ট্রদূত নির্বাচনে সংবিধান মেনে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বাংলাদেশ নিয়ে তার এ উদ্বেগকে আমরা স্বাগত জানাই। পাশাপাশি এটিও মনে করিয়ে দিতে চাই যে, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনকারী দল হিসেবে বিএনপি সবসময় সেই সংবিধানের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, যা জনগণ দ্বারা অনুমোদিত ও গৃহীত। কিন্তু দুঃখজনক যে, ভোট ডাকাতির অপসংস্কৃতির ধারক হিসেবে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার অপপ্রয়াসে, বিতর্কিত সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।বিবৃতি আরও বলা হয়, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, সর্বজনস্বীকৃত ও বহুল প্রশংসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাতিল করেছে শেখ হাসিনা সরকার। সাংবিধানিক আইনজ্ঞ ও সুশীল সমাজের বিশেষজ্ঞ মতামত এবং বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে, দুরভিসন্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠী জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে পরপর দুটি প্রহসনমূলক নির্বাচন স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ নির্বাচনের নামে যে রাষ্ট্রীয় দুর্বৃত্তায়ন, তাতে অনেক ক্ষেত্রে সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রুহুল কবির রিজভী বিবৃতি বলেন, চীন বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচন দেখতে চায় বলে রাষ্ট্রদূত ওয়েন যে মন্তব্য করেছেন, তা জনগণের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয়। জনগণের একটি বিশাল অংশ গত ১০ বছরে ভোট প্রদানের কোনো সুযোগ পায়নি। তাই দেশের জনগোষ্ঠী শেখ হাসিনার অধীনে নয়, বরং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চায়। রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন পুরো জাতি গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে, নিজেদের ভোটের অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারের প্রয়াসে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানাচ্ছে।চীনের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের সমালোচনা করে বিবৃতি বলা হয়, বাংলাদেশের নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপ না করার জন্য চীনের রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে নিজের বক্তব্যই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ তিনিই আবার বলছেন বর্তমান সংবিধানের আওতায় নির্বাচন করা উচিত।রিজভী বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্ঞান ও অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক স্বার্থের ভিত্তিতে। বিএনপি বিশ্বাস করে, দুই দেশের জনগণের মাঝে সম্পর্ক স্থাপনেই কূটনৈতিক সাফল্য নিহিত। তাই বিএনপি চীনকে আহ্বান করছে, বাংলাদেশের জনগণের অভিপ্রায় ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির প্রতি আলোকপাত করার জন্য। বিএনপি প্রত্যাশা করে, যেন অচিরেই বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়।