ঢাকা, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫,
সময়: ১২:৩০:২৬ AM

ফ্যাসিবাদের মঞ্চায়ন ৬ সালের ২৮ অক্টোবর:রিজভী

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
28-10-2025 08:42:56 PM
ফ্যাসিবাদের মঞ্চায়ন ৬ সালের ২৮ অক্টোবর:রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির সূচনা হয়েছিল। সেদিনের রক্তাক্ত তাণ্ডব গোটা জাতিকে স্তম্ভিত করেছিল, যা ছিল বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের প্রথম প্রকাশ।মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) আয়োজিত ‘২৮ অক্টোবর প্রেক্ষিত: লাশতন্ত্র থেকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের উত্থান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।রিজভী বলেন, “সেদিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া পদত্যাগের প্রক্রিয়ায় ছিলেন, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের নির্দেশ মানছিল না। প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ে। সেই সুযোগে শেখ হাসিনা ও তার দল চারদলীয় জোটের কর্মীদের ওপর রক্তাক্ত হামলা চালায়। এটি ছিল ফ্যাসিবাদের প্রথম মঞ্চায়ন।”

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, “ছাত্রদলের সভাপতি শাহাবুদ্দিন লালটুকে যেভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়েছিল, তা শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী রাজনীতির ভয়াবহ উদাহরণ। ঠান্ডা মাথায় একজন আহত মানুষকে ইট দিয়ে থেতলানো এবং তার লাশের ওপর উল্লাস করা—এমন নির্মমতা বাংলাদেশ আগে কখনও দেখেনি।”

রিজভীর অভিযোগ, ২৮ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞ ছিল পরিকল্পিত। তিনি বলেন, “সেদিন থেকেই শেখ হাসিনা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক আনুগত্যে সাজাতে শুরু করেন—যেভাবে হিটলার তার ‘আর্য রাষ্ট্র’ গড়েছিলেন। শেখ হাসিনাও তার প্রশাসনে একই কৌশল প্রয়োগ করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘের মহাসচিবও সেই সময়ের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার তখন থেকেই গণতন্ত্রকে হত্যা করে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছিল। প্রশাসনে দলীয় আনুগত্যের বাইরে কেউ স্থান পেত না।”

ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, “হিটলারের মতো শেখ হাসিনাও রাষ্ট্রপূজার এক বয়ান দাঁড় করিয়েছেন—যেখানে রাষ্ট্র মানেই আওয়ামী লীগ। যে এই চিন্তার বাইরে যাবে, সে দেশদ্রোহী।”

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, “বাংলাদেশে গঠিত ফ্যাসিবাদ কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে প্রোথিত। শেখ হাসিনার আমলে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারব্যবস্থা সবকিছুই দলীয় আনুগত্যে পরিচালিত হয়েছে।”

ডাকসুর উদ্যোগের প্রশংসা করে রিজভী বলেন, “ডাকসু যেভাবে আজ মুক্ত আলোচনা আয়োজন করছে, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের প্রতীক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মুক্ত চিন্তা ও সত্য অনুসন্ধানের কেন্দ্র হতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদের বয়ান সব সময় একটি ‘চেতনা’কে বিকৃত করে হাজির হয়। শেখ হাসিনার ‘চেতনা’ও তাই—যেখানে বিরোধী কণ্ঠ মানেই রাষ্ট্রবিরোধিতা। তরুণ প্রজন্মকে এই বিকৃত বয়ানের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সত্য ও স্বাধীনতার চর্চা করতে হবে।”

রিজভী বলেন, “আমরা যারা দীর্ঘ ১৫–১৬ বছর ধরে নিপীড়নের মধ্যেও গণতন্ত্রের জন্য লড়েছি, আমাদের সংগ্রাম বৃথা যায়নি। আজকের তরুণ প্রজন্ম সেই গণতান্ত্রিক চেতনা পুনরুদ্ধার করছে—এটাই শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় জবাব।”

আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম