
প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, ‘পদত্যাগ কে করবে বা করবে না, তাতে কিছু আসে-যায় না। কে এসব কথা বাইরে ছড়াচ্ছে, তাও আমরা জানি না। আমাদের নেতা সালাহউদ্দিন সুন্দরভাবে বলেছেন—চেয়ার খালি থাকে না। তাই এসব কথা না বলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। আপনি যদি এ দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারেন, তাহলে আপনার প্রাপ্য পুরস্কার ও উপাধি সারা জীবন জনগণ মনে রাখবে। আর যদি বিলম্ব করেন, ইতিহাসে আপনার নাম নিন্দিত হয়ে থাকবে—যেটা আমরা চাই না।’মঙ্গলবার (৩ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম ৭১ আয়োজিত ‘গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে ফারুক আরও বলেন, ‘আপনাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। আপনি যখন গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এই পদে বসেন, আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি, আপনার চারপাশে যেন কিছু একটা ঘুরপাক খাচ্ছে—একটা অস্বচ্ছতা, একটা জটিলতা। যে ব্যক্তি তিন মাসের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারতেন, আমরা এখনও তা দেখতে পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার করতে তো বেশি সময় লাগার কথা নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন বহু উদাহরণ আছে। একমাত্র বহুদলীয় গণতন্ত্রের সংস্কার করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এর ফলে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা কি অনেক সময় নিয়েছিল? শাহাবুদ্দিন তো তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে পেরেছিলেন, অথচ আপনার নয় মাস অতিবাহিত হয়ে গেল।’
সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ বলেন, ‘গতকাল বাজেট পেশ হয়েছে। আমার দল এর ভালো-মন্দ বিশ্লেষণ করবে, প্রতিক্রিয়া দেবে। কিন্তু আপনি কেন যেন মনে হচ্ছে কারও কথায় চলছেন। নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত, প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রস্তুত, দেশের প্রতিটি ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কেনা হয়ে গেছে। তাহলে এখনও কোন সংস্কার বাকি রয়েছে যে কারণে আপনি নির্বাচন দিচ্ছেন না? আর নির্বাচন বললেই বলা হয় বিএনপি নাকি ক্ষমতার জন্য পাগল! অথচ আমাদের নেতা তারেক রহমান স্পষ্ট বলেছেন—ক্ষমতায় যেতে নয়, মৃত মানুষের ভোটে নয়, শেখ হাসিনা যে ভোটাধিকার ধ্বংস করেছেন, সেই অধিকার ফিরিয়ে আনাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভেসে আসা দল নই। বিএনপি ছোট রাজনৈতিক দল নয়। আমরা একাধিকবার রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিলাম। আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কর্মী। আমরা আয়না ঘরে দাঁড়িয়ে দিন কাটানো কর্মী, সকাল থেকে রাত অবধি আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা কর্মী। আমরা পুলিশের ভয়ে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মী, হাজারো মামলা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়ানো কর্মী। সর্বশেষ, আমরা হলাম সেই কর্মী, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত।’
ফারুক বলেন, ‘এই দেশে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রথম লড়াই শুরু করেছিল বিএনপি। বিএনপিকে অবহেলা কেন? দুই-তিনটি দল বাদে প্রায় সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনের পক্ষে একমত। কেউ কেউ এখনও নিবন্ধন পাননি, আবার কেউ কেউ নিবন্ধন ফিরে পাচ্ছেন। আপনারা সক্রিয় হোন, নিবন্ধন নিয়ে দেশের সেবা করুন। আমরা দোয়া করি, যাতে আপনারা ড. ইউনূসকে বোঝাতে পারেন—নির্বাচন এখনই দরকার। কারণ, যদি নির্বাচন না হয়, সংসদ না থাকে, তাহলে আমরা করিডোর, বন্দর, বাজেট, আইনশৃঙ্খলা এসব নিয়ে কোথায় কথা বলব? সংসদেই তো এসব আলোচনা হবে। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি তো সংসদেই তুলব।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার নির্বাচিত নয়, এটি একটি বিপ্লবী সরকার। আমরা আপনাকে বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়েছি। দয়া করে সেই বিশ্বাসের মান রাখুন, ডিসেম্বরেই নির্বাচন দিন। আমরা ভোটে বিশ্বাসী দল, আমাদের নেতা ভোটে বিশ্বাসী। আমরা ভোটের দল, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দল নই। কারণ, আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান কাউকে দিয়ে ক্ষমতায় যাননি—তাকে বসিয়েছিল সিপাহি-জনতা।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপন এবং সঞ্চালনা করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আহমেদ শাহিন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার প্রমুখ