ঢাকা, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫,
সময়: ০১:১২:৩১ PM

আগামী নির্বাচনে সৎ ও যোগ্যদের প্রার্থী করবে বিএনপি

স্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
06-04-2025 01:37:29 PM
আগামী নির্বাচনে সৎ ও যোগ্যদের প্রার্থী করবে  বিএনপি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৎ যোগ্য ও‘ক্লিন ইমেজ’এর স্থানীয় নেতাদের প্রার্থী দিবে এমটাই চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি। চাদাবাজ,সন্ত্রাসী,  অপকর্মে জড়িত বা বিতর্কিত কাউকে মনোনয়ন দেবে না দলটি এমন সিদ্ধান্ত দলের হাই কমান্ডের। । বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যেই এটা নিয়ে আসনভিত্তিক কাজ শুরু করেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দল থেকে যাদের চূড়ান্ত প্রার্থী করা হয়েছিল, যারা দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত, বিশেষ করে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর-পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজধারীদের দিয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকার খসড়া তৈরি করা হবে। আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যে এই খসড়া তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।নির্বাচনের চূড়ান্ত রোডম্যাপ এখনো ঘোষিত না হলেও অন্তর্র্বতী সরকারের পক্ষ থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ধারণা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতিটি দলই এখন নির্বাচনমুখী তৎপরতায় সম্পৃক্ত হয়েছে। বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো আসনভিত্তিক কাজ শুরু করেছে। দু-একটি দল এরই মধ্যে তাদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা করেছে এবং সে অনুযায়ী নির্বাচনের মাঠে কাজও শুরু করেছে।

বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু না করলেও গত ফেব্রুয়ারিতে দলের বর্ধিত সভা থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেন। জানা গেছে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করবে দলটি।

বিএনপি এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ না দিলেও দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বসে নেই। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই নির্বাচনী এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা, আছেন গণসংযোগের মধ্যে। দলের নির্দেশনা মেনে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। শোডাউনের রাজনীতি না করলেও সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে রমজানজুড়ে এলাকায় ইফতার মাহফিল করেছেন, ঈদুল ফিতরও উদযাপন করেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের এসব কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। অতীতে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে এই দলটি একাধিকবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। সুতরাং নির্বাচনের জন্য সবসময় বিএনপির প্রস্তুতি থাকে। সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হবে।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বাস্তবতা বিবেচনায় বিএনপি প্রতিটি আসনে প্রাথমিকভাবে তিন থেকে চারজনকে মনোনয়ন দিয়েছিল। কারণ, বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠে দাঁড়াতে দেওয়া হবে কি হবে না, দল তখন এমন একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে ছিল। তাই প্রথম প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলে দ্বিতীয়জন নির্বাচন করবেন; দ্বিতীয়জনের প্রার্থিতা বাতিল হলে, পরেরজন নির্বাচন করবেন—এমন চিন্তা-ভাবনা থেকে দলীয় কৌশলের অংশ হিসেবে তখন এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তেমন কিছু ঘটবে না। দলীয়ভাবে একজনকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। একই সঙ্গে দলীয় সেই প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বাকিদের কড়া নির্দেশনাও দেওয়া হবে, যাতে সবাই সম্মিলিতভাবে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে।

জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি কোনো ধরনের গ্রুপিং বরদাশত করবে না। একই সঙ্গে যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারিত্বসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে, তাদেরও মনোনয়ন দেবে না। সম্ভাব্য প্রার্থীদের এরই মধ্যে দলের এমন কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। এতে করে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা অনেক ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

বিএনপি মনে করছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন খুব সহজ হবে না। নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ দলটির। নেতারা বলছেন, বিএনপির জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদের ঘায়েল করার জন্যই এটা করা হচ্ছে। তাদের আশা, গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির যে ত্যাগ, দেশের মানুষ সেটা ভুলে যায়নি। আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা যে হামলা-মামলা, গুম-খুনের শিকার হয়েছে—তাদের এই সংগ্রাম, ত্যাগের কথা বিবেচনা করে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে জনগণ বিএনপিকেই বেছে নেবে। ফলে দলটি আশাবাদী, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে তারা আগামীতে সরকার গঠন করবে। যদিও বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বী অপরাপর দলগুলোকেও সমীহ করছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী জোট গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে বিএনপি। তবে নির্বাচনী জোট গঠনের ক্ষেত্রে দলটি এখন পর্যন্ত সেভাবে মনোযোগী না হলেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সেই তৎপরতা শুরু হতে পারে। নির্বাচনী সেই জোটে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা যথারীতি বিএনপির সঙ্গে থাকবে। এ ছাড়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থাকা ইসলামপন্থি ও বামধারার দলগুলোকে জোটে আনা যায় কি না, সেই প্রচেষ্টাও থাকবে বলে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায় থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সেক্ষেত্রে জুলাই অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা ছাত্রদের নেতৃত্বে সদ্য আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) নির্বাচনী জোটে আনতে পারে দলটি। নির্বাচনী সমঝোতা হলে নতুন এই দলটিকে কিছু আসনে ছাড় দেওয়ার চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে বিএনপির।

বিএনপির অবস্থান হচ্ছে, নির্বাচনে বিজয়ী হলে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করবে। সেই জাতীয় সরকার বাংলাদেশে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।এদিকে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও ক্লিন ইমেজের পাশাপাশি আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সুখে-দুঃখে কর্মীদের পাশা থাকা নেতাদের আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে চান।

এ প্রসঙ্গে নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ফজলে হুদা বাবুল  বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সেটাই মেনে নেবেন। তবে তাদের প্রত্যাশা—যেসব প্রার্থী আন্দোলন-সংগ্রাম ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে কর্মীদের সঙ্গে ছিলেন এবং এখনো আছেন, কারাগারে কর্মীদের দেখভাল করেছেন, জামিনের চেষ্টা করেছেন তথা দুর্দিনে কর্মীদের পাশে ছিলেন, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হোক। এমন নেতাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে তৃণমূলের কর্মীরা আনন্দিত হবেন। তবে দলের হাইকমান্ডের বাইরে তারা কখনো যাবেন না। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, ধানের শীষ যার, তারা তার।