ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪,
সময়: ১২:৪০:০৬ PM

সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে তৎপরতা নেই:রিজভী

স্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
20-10-2024 06:26:39 PM
সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে তৎপরতা নেই:রিজভী
দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যায় এবং প্রবল বর্ষণে জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।রবিবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।রিজভী বলেন, শেরপুর, নেত্রকোণাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলে বন্যায় এবং প্রবল বর্ষণে কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন একটা তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যায় যেভাবে সরকারী বেসরকারী উদ্যোগে ব্যাপক তৎপরতা দেখা দিয়েছিল সেটি বর্তমানে দেখা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক বন্যায় কৃষক ও খামারীদের অতি দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা করতে হবে। বন্যা উপদ্রুত মানুষ ও তাদের পরিবারের দুরাবস্থার বিষয়টি সরকারকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। বাজারে চাল, ডাল, সবজি, মাছ, মাংস, ডিমের সরবরাহ ঠিক রাখতে হলেও সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। সার, কীটনাশক ও বীজের সরবরাহ বাড়িয়ে কিংবা প্রণোদনা দিয়ে কৃষক ও খামারীদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

তিনি বলেন, জীবনযাত্রার মান স্বাভাবিক রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত আবাসন পুনঃনির্মাণ, পয়ঃনিস্কাশন, বিদ্যুৎ ও পুষ্টির মতো অতি প্রয়োজনীয় সেবাগুলোর ঘাটতি যাতে না হয়, সেটি বিবেচনা করে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এই বন্যাজনিত সংকটে শিশুরা যাতে অপুষ্টিতে না ভোগে সেজন্য সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বন্যা পরবর্তী অসুস্থতা ও পানিবাহিত রোগ নিরাময়ে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের বিষয়ে সরকারকে কর্মতৎপর হতে হবে।  

রিজভী বলেন, ভয়াবহ বন্যায় শেরপুর ও নেত্রকোণায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন রোপা আমন ও সবজি চাষীরা। সরকারী সূত্র থেকে জানা যায়, শুধুমাত্র নেত্রকোণা জেলার পাঁচ উপজেলায় বিশ হাজার ৯শত ৯ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে ৭০ হাজারের বেশী কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমান প্রায় ৪শত কোটি টাকা। অন্যদিকে সবজি চাষের ক্ষতি হয়েছে ১৬০ হেক্টর জমির। এতে ৫৩২০ কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। প্রায় ১৭৩০টি পুকুর এবং মৎস্য খামার ডুবে গেছে। টাকার অংকে যার পরিমান ৮ কোটি টাকা। শেরপুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০ জন কৃষক। এ বছর ৯৫ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছিল, তার মধ্যে ৩৭ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যায় নষ্ট হয়েছে।

এসময়ে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি তুলে ধরে রুহুল কবির রিজভী। দাবিগুলো হল- বন্যার পানিতে যাদের জমির ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে তাদের সঠিক তালিকা প্রনয়ণ করে আগামী ফসল না উঠা পর্যন্ত তাদেরকে সর্বাত্মক ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা, আগামী ফসলের জন্য সুদমুক্ত কৃষি ঋণ প্রদান ও বিনা মূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচের তেলের ব্যবস্থা করা। আগামী ফসলের আগে রবি শষ্য উৎপাদনের জন্য তাদের মধ্যে রবি শষ্যের বীজ প্রদান করা। বন্যার পানিতে যে সকল মৎস্য, হাঁস-মুরগী,গবাদী পশুর খামার বিনষ্ট-ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের সঠিক তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে পুনরায় খামার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সুদমুক্ত ঋণসহ অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা।

এছাড়া বন্যার পানিতে যাদের বাড়ী-ঘর আংশিক ও পুর্নাঙ্গ ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের তালিকা তৈরী করে ঘর-বাড়ী পুনঃনির্মাণে সহায়তা প্রদান করতে হবে, নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যে সকল গ্রাম-পাড়া-মহল্লা বিলীন হয়ে গেছে, সে সকল স্থানে বসবাসকারীরা বর্তমানে উদ্বাস্ত হয়ে গেছে, তাদেরকে সরকারী খাস জমিতে/আশ্রয়ন প্রকল্পে স্থানান্তরিত করা, যে সকল বাঁধ-রাস্তা-মসজিদ-মাদ্রাসা-মন্দিরসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক ও পুর্নাঙ্গ ধ্বংস হয়ে গেছে সেগুলো সংস্কার ও পুণ:নির্মাণ করা, বন্যার পানিতে যে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সামগ্রী বিনষ্ট হয়ে গেছে তাদেরকে সরকারী উদ্যোগে শিক্ষা সামগ্রী ও সহায়তা প্রদান করা, বন্যার পানি নামার সাথে সাথে রোগ-বালাইগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, প্রয়োজনে এলাকা ভিত্তিক মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে চিকিৎসা দিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, সহ প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, হারুন অর রশীদসহ প্রমুখ।