ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সময়: ১২:২৯:৪৪ AM

তাপদাহের মধ্যেই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
28-04-2024 11:18:18 AM
তাপদাহের মধ্যেই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

 তাপপ্রবাহে প্রাণিকুল ওষ্ঠাগত। বইছে মৃদু থেকে অতি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ। এরই মধ্যে রোববার (২৮ এপ্রিল) খুলছে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা। তাতে শিক্ষক-অভিভাবকদের প্রবল আপত্তি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হঠাৎ করে শনিবারও খোলা রাখার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষকরা।  ঈদের ছুটি শেষে গত ২১ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও তাপপ্রবাহের কারণে এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাপপ্রবাহ আর কমেনি। বরং মৃদু থেকে অতি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।প্রাথমিকে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা এবং স্কুল সময় পরিবর্তন করা হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এক আদেশে জানিয়েছে, আগামী ২৮ এপ্রিল রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম চলমান থাকবে। এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়সমূহ প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়সমূহ প্রথম শিফট সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় শিফট ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলমান থাকবে। তাপদাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সংশ্লিষ্টদের নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাঠানো রুটিন বিবেচনায় নিয়ে উপজেলাভিত্তিক শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাপ্তাহিক রুটিন প্রণয়ন করবেন। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তাপদাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে আসার পূর্ব পর্যন্ত এবং পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত উল্লিখিত সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।

আর বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আগামী ২৮ এপ্রিল রোববার থেকে যথারীতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খোলা থাকবে এবং শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তাপদাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে। শ্রেণি কার্যক্রমের যে অংশটুকু শ্রেণিকক্ষের বাহিরে পরিচালিত হয়ে থাকে এবং সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসতে হয়, সে সব কার্যক্রম সীমিত থাকবে। তাপদাহ এবং অন্যান্য কারণে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকার ফলে যে শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে তা পূরণ এবং নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিখন ফল অর্জনের জন্য পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত শনিবারও শ্রেণি কার্যক্রম চলবে।

শনিবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলাগুলোর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দিনাজপুর, রাঙামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা ও বরিশাল বিভাগগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকবে।

আর রোববার সিলেট বিভাগে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও অন্যত্র বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এদিকে, তাপদাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন অনেক শিক্ষক-অভিভাবক। বিশেষ করে শনিবারও মাধ্যমিক স্তরে খোলা রাখার সমালোচনা করেছেন তারা। শিক্ষকগণ প্রকাশ্যে কথা না বললেও বিভিন্নভাবে সমালোচনা করছেন।

চলমান তাপদাহের মধ্যে স্কুল খোলায় শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হলে তার দায় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে বলে জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম।

স্কুল খোলার আগের দিন শনিবার (২৭ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা জানান অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু।

বিবৃতিতে বলা হয়, তীব্র তাপপ্রবাহে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ রেখে অনলাইনে শ্রেণির কার্যক্রম তথা পাঠদানের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছিল অভিভাবকদের সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। কিন্তু সারাদেশের তীব্র তাপপ্রবাহের তেমন কোনো উন্নতি না হওয়া সত্ত্বেও সরকার রোববার থেকে সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসা খুলে দেওয়ার পরিপত্র জারি করেছে। ফলে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা তীব্র তাপপ্রবাহ চলমান থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছে।  

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারি সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য দেশের সব মানুষ। তীব্র তাপপ্রবাহে সরকারি সিদ্ধান্তে দেশের কোথাও যদি কোনো শিক্ষার্থীর কোনো রকম জীবন বিপন্ন ঘটে বা কোনো রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার সব ধরনের দায়ভার সরকার ও সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।