ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫,
সময়: ০৭:২৩:০১ AM

আতঙ্ক চারদিকে ভয়ার্ত পরিবেশ :রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ।।দৈনিক সমবাংলা
28-08-2025 07:23:01 AM
আতঙ্ক চারদিকে ভয়ার্ত পরিবেশ :রিজভী

জনগণের শান্তিপূর্ণ দুর্বার আন্দোলন ঠেকাতে শেখ হাসিনা নব্য নাৎসি কায়দায় অতীতের মতো আবারো নতুন করে গুমের উৎসব শুরু করেছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রতিটি শহর-বন্দর-জনপদে এখন সাদা পোশাকধারীদের হাড় হিম করা আতঙ্ক। চারদিকে ভয়ার্ত পরিবেশ। যেন হানাদার বাহিনী আক্রমণ করেছে বাংলাদেশের বুকে। শেখ হাসিনার গুম বাহিনীর ভয় দেখিয়ে মায়েরা তাদের বাচ্চাদের এখন ঘুম পাড়াচ্ছে। রবিবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, চারদিকে শুধু জমাট বাঁধা কান্নার পাহাড়। প্রতিদিনই সেই কান্নার পাহাড় আরও উঁচু হচ্ছে। ১৫ বছর ধরে সেই কান্নার পাহাড় থেকে এখন চুইয়ে নামছে আর্তনাদ, আর গলগল করে উঠছে ক্রস-ফায়ারে মৃতদের আর গুম হওয়া মানুষের অভিশাপ।গণতন্ত্রের পক্ষ শক্তির দরজায় কড়া নাড়ছে বিজয়ের হাতছানি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভোট ডাকাতদের প্রতিহত করে ১২ কোটি ভোটারের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গণতন্ত্রের পক্ষ শক্তির দরজায় কড়া নাড়ছে বিজয়ের হাতছানি। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে সর্বাত্মক অবরোধে অচল হয়ে গেছে বাংলাদেশ। আর ভোট ডাকাত আওয়ামী সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে জনগণের আদালতের কাঠগড়ায় বিচারের মুখোমুখী হওয়ার। 

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা শুধুমাত্র নিজের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে হত্যা, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতারের মাধ্যমে গোটা দেশে একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। জনগণের শান্তিপূর্ণ দুর্বার আন্দোলন ঠেকাতে শেখ হাসিনা নব্য নাৎসি কায়দায় অতীতের মতো আবারো নতুন করে গুমের উৎসব শুরু করেছে। প্রতিটি শহর-বন্দর-জনপদে এখন সাদা পোশাকধারীদের হাড় হিম করা আতঙ্ক। চারদিকে ভয়ার্ত পরিবেশ। যেন হানাদার বাহিনী আক্রমণ করেছে বাংলাদেশের বুকে।

রিজভী বলেন, রাতদিন তারা কালো মাইক্রোবাসে নিয়ে নাৎসী বাহিনীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে গণতন্ত্রকামীদের। তাদের হাতে সাধারণ মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। র‌্যাব-পুলিশের নামধারী আওয়ামী পুলিশলীগ আন্দোলনরত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের না পেলে তাদের পিতা-মাতা, পুত্র-সন্তান, ভাই-বোন এবং আত্মীয়-স্বজনদেরও ধরে নিয়ে অদৃশ্য করে রাখছে। তুলে নিয়ে গিয়ে অস্বীকার করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের মতো জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করছে এই নামধারী আওয়ামী র‌্যাব-পুলিশ। কোথাও কোথাও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের না পেয়ে বাথরুম থেকে পানি এনে বাসার সব বিছানায় ঢেলে দিয়েছে পুলিশ! 

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সারাদেশে দলদাস পুলিশ বাহিনী বিনা মামলায়, বিনা ওয়ারেন্টে বা গায়েবি মামলায় পাইকারী হারে হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার করে নির্যাতন করছে। তুলে নিয়ে গিয়ে বন্দি অবস্থায় অনেককে কোমর থেকে পায়ের তালু অবধি হাতুড়িপেটা করে অচল করে দেয়া হচ্ছে। গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। যা চরম মানবতাবিরোধী। যা বাংলাদেশ স্বাক্ষরকৃত জাতিসংঘের কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার (নির্যাতন বিরোধী কমিটি-ক্যাট) এবং নিপীড়ন বিরোধী আস্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট টর্চার (ইউএটি) অনুযায়ী একটি গণবিরোধী ভয়াবহ অপরাধ, যা আস্তর্জাতিক আদালতে বিচার এবং কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আস্তর্জাতিকভাবে ধিকৃত এই ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় রাখতে যারা গণতন্ত্রকামীদের গুম-খুন-গ্রেফতার-মিথ্যা মামলায় জড়িত করছে তাদেরকে সাবধান এবং হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি। আপনারা ভোটের অধিকার আদায়ে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের প্রতিপক্ষ হবেন না। গণতন্ত্রকামী মানুষের জোয়ার ঠেকাতে পারবে না। যে সব সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এখন পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে গণতন্ত্রকামীদের হুমকি দিচ্ছেন, সবাইকে গ্রেফতার করা হবে বলে ভয় দেখাচ্ছেন তারা গণবিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসুন।‘অন্যথায় পুলিশের মর্যাদাপূর্ণ ইউনিফর্ম খুলে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে রাজপথে নামুন। দুঃশাসনে পিস্ট প্রতিবাদী মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতে দলীয় ও অবৈধ রাষ্ট্রশক্তির হয়ে বেপরোয়া আচরণ করবেন না। আপনারা কে কি করছেন বাংলাদেশের জনগণ সব হিসাব রাখছে। গণঅভ্যূত্থানে আপনাদেরও পরিণতি কি হবে তা জনগণ নির্ধারণ করে রাখছে।’

তিনি বলেন, বিনাভোটে ক্ষমতা দখল করে রাখার জন্য ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশকে সম্পূর্ণ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনে ‘স্যোসাল মবিলিটি’ থমকে যায়। বাংলাদেশে জনসমাজ সমাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। মানুষের আশা জাগানিয়া কিছু নেই। দেশজুড়ে নৈরাজ্যের কালো অমানিশা বিস্তার লাভ করে। বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই শুধু নয়; বর্তমানে পেশাজীবী-শ্রমজীবী-কর্মজীবী এমনকি গার্মেন্টস শ্রমিকরা পর্যস্ত এই ফ্যাসিস্টদের কাছে নিরাপদ নয়। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে আজ পর্যস্ত চারজন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। 

রিজভী আরও বলেন, পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে কেন গাজীপুরে গার্মেন্টস কর্মী আঞ্জুয়ারা, মো. জামাল উদ্দিনকে হত্যা করা হলো? গার্মেন্টস কর্মী আঞ্জুয়ারা-জামাল উদ্দিন রাষ্ট্র ক্ষমতার ভাগ চায়নি। আঞ্জুয়ারা শুধুমাত্র স্বামী সস্তান নিয়ে খেয়ে পরে একটু সুখে শাস্তিতে বেঁচে থাকার দাবি তুলেছিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনার অবৈধ ক্ষমতার লোভ আঞ্জুয়ারা-জামাল উদ্দিনদের বাঁচতে দেয়নি।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সুকৌশলে দেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত পোশাক শিল্প ধ্বংসের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছেন। তিনি পুনরায় চুয়াত্তরের মতো দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করতে চান, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করতে চান। বাংলাদেশি মালিকরা সরকারের প্ররোচণায় শনিবার ১৫০ পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। ন্যায্য দাবি আদায়ের বিক্ষোভের দায়ে ১১ হাজার শ্রমিককে অভিযুক্ত করে মামলা করেছে দলদাস পুলিশ। পুরো অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। জনগণ বিশ্বাস করে- এখন রেডিমেড গার্মেন্টস ব্যবসা অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার গ্যারান্টি চান তিনি। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের মোট গ্রেফতার ৩৬৫ জনের অধিক নেতাকর্মী। মোট মামলা ১৩টি, মোট আসামি ১৪৮৫ জনের অধিক নেতাকর্মী বলেও জানান রিজভী।