ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪,
সময়: ১০:৩৩:১৪ PM

পুলিশের হাতে ধরা দুদক ডিজির পিএ

স্টাফ রিপোর্টার ।।দৈনিক সমবাংলা
19-09-2024 10:33:14 PM
পুলিশের হাতে ধরা দুদক ডিজির পিএ

মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে রাজধানীর বায়তুল মুকাররম মসজিদ মার্কেটের এক কার্পেট ব্যবসায়ীর থেকে কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে ধরা পড়লো একটি চক্রের ৪ প্রতারক ।শুক্রবার (২৩ জুন) মতিঝিল এলাকার হিরাঝিল হোটেলের দ্বিতীয় তলায় তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।আর গ্রেপ্তারের পর প্রতারকদের পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হন তারা।চক্রটির নেতৃত্বে ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মানি লন্ডারিং বিভাগের একজন মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হিসেবে কর্মরত ব্যক্তি৷  তার নাম - গৌতম ভট্টাচার্য (৪২)। তার সহযোগীদের মধ্যে রয়েছেন চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল মো. এসকেন আলী খান (৫৭) ও দুই দালাল হাবিবুর রহমান (৪২), পরিতোষ মন্ডল (৬৩)।  দুদকের এক মহাপরিচালকের পিএ গৌতমের বাড়ি মৌলভীবাজারে। বাকি তিনজনই গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা।

অভিযানে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে মিষ্টির ৪টি প্যাকেট, নগদ দেড় লাখ টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন, দুদকের মনোগ্রাম/সিল সম্বলিত খাকি রঙের ১টি খাম ও দুদকের একটি নোটিশ জব্দ করা হয়েছে।শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ।

তিনি জানান, ব্যবসায়ী আশিকুজ্জামান আমদানি করা কার্পেট ও জায়নামাজ বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে সরবরাহ করেন। গত ২০ জুন সকালে এই ব্যবসায়ীর উত্তরার বাসায় দুদুকের মনোগ্রাম/সিল সম্বলিত খাকি রঙের খামে ১টি নোটিশ নিয়ে হাজির হন একজন অফিসার।  আশিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে কার্পেটের ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণের চোরাচালান এবং মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়।  

দুদকের সেই অফিসার আশিকুজ্জামানকে সহানুভূতি দেখিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ, সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক এবং এমএসআই তাকে খুঁজছে বলে জানায়। সেই সঙ্গে দুদক তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগটি আমলে নিয়েছে বলেও জানায় ওই কর্মকর্তা।  

অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ বলেন, ওই সময় ভুক্তভোগীর স্ত্রী প্রসব সংক্রান্তে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। দুদকের অভিযোগ ও কর্মকর্তার এমন সব বক্তব্যে ঘাবড়ে যান আশিকুজ্জামান। এসময় নোটিশ বহনকারী অফিসার তার হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আশিকুজ্জামানকে কথা বলিয়ে দেন।  তিনি বলেন, এরপর আশিকুজ্জামানকে হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে এই মামলা থেকে বাঁচাতে প্রথমে তার কাছে ৫ কোটি ও পরে ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে দুদকের কথিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কয়েকটি মিষ্টির প্যাকেটে টাকা নিয়ে শুক্রবার মতিঝিল এলাকার হিরাঝিল হোটেলের দ্বিতীয় তলায় সমঝোতার জন্য আশিকুজ্জামানকে আসতে বলে চক্রের সদস্যরা।  

গোয়েন্দা পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মামলা থেকে বাঁচতে প্রথমে ভুক্তভোগীর কাছে ৫ কোটি টাকা দাবি করা হয়। পরে সমঝোতা অনুসারে প্রথমে দুই কোটি টাকা দিতে বলা হলেও পরবর্তীতে দিতে বলা হয় এক কোটি টাকা দেওয়ার জন্য। ভুক্তভোগীর বিষয়টি সন্দেহ হয়, পরে তিনি গোয়েন্দা পুলিশকে বিষয়টি জানালে গোয়েন্দা (ডিবি) লালবাগ বিভাগের একটি টিম হিরাঝিল হোটেলে অভিযান চালিয়ে  ৪ প্রতারককে গ্রেপ্তার করে।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতারক গৌতম ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন ধরে দুদকের বিভিন্ন মহাপরিচালকদের পিএ হিসেবে কাজ করে আসছে। তিনি কখনো দুদকের ডিজি (তদন্ত), ডিজি (এডমিন), ডিজি (প্রসিকিউশন), ডিজি (মানি লন্ডারিং) এর অফিসের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (পিএ) হিসেবে কাজ করেছেন। সে কারণে তিনি জানতেন কীভাবে নোটিশ করতে হয়, কি কি ভয়ভীতি দেখালে ভুক্তভোগীরা ঘাবড়ে যাবে।  

তিনি বলেন, এই চক্রটি বিভিন্ন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও বিভিন্ন চাকরিজীবীদের টার্গেট করে এমন প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল। তাদের ব্যক্তিগত নানা তথ্য সংগ্রহ করে দুদকের চিঠির খাম ও প্যাড/ ফরমেট ব্যবহার করে অভিযোগের নোটিশ পাঠাতো। পরে কখনো মোবাইল হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলে, কখনো শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে বসে, কখনো আশেপাশের বিভিন্ন হোটেলে টার্গেটের টাকায় ভূরিভোজ করে তাদের অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতি দিতো, কখনও বা সমঝোতার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তারা।জব্দ হওয়া সেই নোটিশের মাধ্যমে সম্পত্তি ক্রোক করা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশসহ সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনএসআই, ডিবি পুলিশ এবং দুদক দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে কঠোর শাস্তির ভয় দেখানো হয়।

ডিবির এই মুখপাত্র বলেন, আসলে তারা দুদকের কেউ না। তারা মূলত দালাল চক্র। তাদেরকে সহযোগিতা করছিলেন দুদকের পিএ গৌতম ভট্টাচার্য ও চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল মো.এসকেন আলী খান। এই দুজন জানেন একটা মানুষকে কীভাবে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে হয়। এই চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় রয়েছে। তাদের টার্গেট ছিলো ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী এবং যারা হঠাৎ করে বড় লোক হয়েছে তাদের।  

এই ঘটনার সঙ্গে দুদুক বা পুলিশের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, এই বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। আসামিদের আমরা রিমান্ডে পেলে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ বিষয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করব।গ্রেপ্তাররা এ পর্যন্ত কতজন মানুষ প্রতারিত করেছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি তদন্ত শেষে বলা যাবে।