
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সোমবার (২৬ মে) সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়।দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কর্মচারীরা সচিবালয়ের প্রধান গেট বন্ধ করে দিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। সচিবালয় প্রবেশের অন্য গেটলোও বন্ধ করে দিয়েছেন তারা।সোমবার বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর ও মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এরপর বেলা সোয়া ১১টার দিকে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের অন্য অংশ। এই অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন মো. নূরুল ইসলাম এবং মুজাহিদুল ইসলাম।বিক্ষোভ মিছিলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘অবৈধ কালো আইন, বাতিল কর, করতে হবে’, ‘কর্মচারী মানে না, অবৈধ কালো আইন’, ‘মানি না মানবো না, অবৈধ কালো আইন’, ‘এক হও লড়াই কর, ১৮ লাখ কর্মচারী’, ‘সচিবালয়ের কর্মচারী, এক হও এক হও’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’- এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভে অংশ নিতে কাজ রেখে নিচে নেমে এসেছেন। অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৬ নম্বর ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল সচিবালয় চত্বর প্রদক্ষিণ শুরু করে। মিছিলটি এক নম্বর গেটের পাশ ঘেঁষে ১ ও ২ নম্বর ভবনের করিডোর দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনের নিচে অবস্থান নেয়। সেখানে তারা বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করার ঘোষণা দেন। এর মধ্যে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করা হলে বিকাল ৪টায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান কর্মচারী নেতারা।সমাবেশে একজন কর্মচারী নেতা বলেন, যেসব কর্মচারী আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন, অনেক সচিব তাদের ডেকে নিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। আজ থেকে কোনো কর্মচারীকে কেউ থ্রেট করলে আপনারাও উল্টো থ্রেট করবেন। বৃহস্পতিবারের (২৯ মে) উপদেষ্টা পরিষদের সভা পর্যন্ত প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন কর্মচারীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
সমাবেশে অন্য একজন কর্মচারী নেতা বলেন, এই অধ্যাদেশ জারির মাস্টারমাইন্ড মোখলেস উর রহমান (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব)। আপনি যা করেছেন, আজ (সোমবার) বিকেল ৪টার মধ্যে তা প্রত্যাহার করতে হবে। আপনারা উপদেষ্টা পরিষদকে ভুল বুঝাতে পেরেছেন। আমাদের ভুল বোঝাতে পারবেন না।
এ সময় মোখলেস, মোখলেস! ভুয়া, ভুয়া!! বলে স্লোগান ওঠে।কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা প্রথমে গিয়েছিলাম লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিবের কাছে। তিনি বলেছেন, এটা করেছে জনপ্রশাসন সচিব। জনপ্রশাসন সচিব বলেছেন, এটি করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, এটি ইনিশিয়েট করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বলেছেন, আমরা এটা সম্পর্কে কিছুই জানি না।
চার ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে। এমন বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে সরকার।
রোববার (২৫ মে) সন্ধ্যায় অধ্যাদেশটি জারি করেন রাষ্ট্রপতি।এর আগে ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদনের পর থেকেই সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইনটি প্রত্যাহারের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ করে আসছিলেন। রোববার (২৫ মে) সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সবগুলো সংগঠন সম্মিলিতভাবে অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। অধ্যাদেশটি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।