
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘গতকাল মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার সত্য উদঘাটনের দায়িত্ব প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এ ঘটনায় বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের রাতেই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি একটি বৃহৎ পরিবার—কোনও ছিদ্রপথে দু-একজন দুষ্কৃতিকারী ঢুকে পড়লে সবসময় তা বোঝা সম্ভব হয় না। তবে যদি দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করা যায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কার্পণ্য করেন না দল বা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’ তিনি বলেন, ‘গত পরশু রাতে পাবনার সুজানগরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন রাতেই তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকালের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ কোন কোন রাজনৈতিক দল ওই ঘটনাকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করছে। এখানে দল কোথায় জড়িত? দলের নামধারী কেউ হতে পারে। এটা তো দলের পদ-পদবি নিয়ে সংঘর্ষ নয়, দলের মতাদর্শ নিয়ে ঝগড়াও নয়। ঝগড়া হয়েছে তাদের ব্যবসা নিয়ে—এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনারা শুনেছেন, ভাঙারি ব্যবসা নিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সঙ্গে দল হিসেবে বিএনপি কোথায় জড়িত?’
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী আরও বলেন, ‘যিনি নিহত হয়েছেন এবং যারা ঘাতক, তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝগড়া চলছিল। এখন পট পরিবর্তন হয়েছে, ওয়ার্ড পর্যায়ের কেউ কেউ হয়তো ওই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, যা মহানগর বা কেন্দ্রীয় নেতারা জানেন না। রোড লেভেলের সবকিছু বোঝা যায় না। কিন্তু কোনও ধরনের অপকর্ম, সংঘাত বা মানুষ হত্যায় যারা জড়িত, তাদের কোনও ছাড় নেই। মাটির গভীরে থাকলেও সেখান থেকে ধরে এনে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। দু-একটি রাজনৈতিক দল মিছিল করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। আমরা যদি শেখ হাসিনার মতো নিশ্চুপ থাকতাম, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতাম, তাদের বহিষ্কার না করতাম, তাহলে এক কথা ছিল। কিন্তু দল অবিলম্বে বিচার দাবি করেছে ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাহলে আপনারা মিছিল করছেন কেন? মানে, রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা।’
একটি রাজনৈতিক দলের অতীত কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আপনাদের অতীত অপকর্ম ভুলে যাইনি। আমরা ভুলে যাইনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কীভাবে পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছিল, কীভাবে বাসের ভিতর থেকে ছাত্রদল নেতাকে ধরে বিনোদপুর গ্রামে হত্যা করা হয়েছিল। আপনাদের নৃশংসতা, ভয়াবহতা মানুষ ভুলে যায়নি। এখনও আপনাদের দেখলে মানুষ সেই উপাধিগুলোই দেয়। আর আপনারা এখন মিছিল করেন? বিএনপির ইতিবাচক দিকগুলো উপেক্ষা করে যারা ফায়দা লুটতে চান, তারা সফল হবেন না।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি বারবার আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘দল থেকে বারবার বলা হচ্ছে—ওরা (বহিষ্কৃতরা) সন্ত্রাস করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করুন। আপনারা যদি নিশ্চুপ থাকেন, তাহলে সমাজে আরও বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস ছড়াবে। সন্ত্রাসীর কোনও রাজনৈতিক পরিচয় নেই। সে নিজের সুবিধার জন্য বাড়ি দখল করে, জমি দখল করে, গরু নিয়ে যায়, মাছ ধরে নিয়ে যায়—এটাই সন্ত্রাসীদের কাজ।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও ধরনের অপকর্ম, সংঘাত, রক্তঝরানো, মানুষ হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিএনপিতে কোনও ঠাঁই নেই। যেই ঘটনার সঙ্গেই কেউ জড়িত থাকুক, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং প্রতিদিনই হচ্ছে। কিছু রাজনৈতিক দল মিছিল করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। আমরা তাদের অতীত ভুলে যাইনি। ফায়দা লুটে কোনও লাভ হবে না। বিএনপি সেই দল নয়। বিএনপি হচ্ছে সেই দল, যারা মানুষকে শান্তিতে রাখার নিশ্চয়তা দিতে চায়। বাংলাদেশে এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে আমরা শান্তির বার্তা পৌঁছে দিইনি।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অপরাধী যেন দলের মধ্যে ঢুকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। আমি প্রশাসনকে ফোন করে বলেছি, অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক, তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করুন। বিএনপি তার পক্ষ নেবে না। কিন্তু আপনারা কেন সেটা করছেন না? ঢাকার পুলিশ কমিশনার কি করছেন? নাকি আপনারা চান, এমন ঘটনা বাড়তেই থাকুক এবং দায় গিয়ে পড়ুক বিএনপির ঘাড়ে।’
এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এস. এম. জাহাঙ্গীর, বিএনপি নেতা কফিল উদ্দীন, আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।