পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকে ছোট থেকে লালন পালন করে বড় করেছে সরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, 'যে বেনজীর সাহেবের নামে এত ঘটনা, তিনি বিদেশে চলে গেলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে তার কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তাহলে এই সমস্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে কি প্রমাণিত হয় না সরকার বেনজীর সাহেবকে লালন পালন করেছেন । যেমন বাবা-মা শিশু সন্তানকে লালন পালন করে ছোট থেকে বড় করে ঠিক তেমনিভাবে এই সরকার বেনজীর সাহেবকে লালন পালন করে বড় করেছেন। রিজভী বলেন, 'সারা বাংলাদেশে মানুষের ফসলী জমি আত্মসাৎ করা, মানুষের বাড়ি ঘর আত্মসাৎ করা, ঢাকা শহরের ফ্ল্যাটের পরে ফ্ল্যাট স্ত্রীর নামে, মেয়ের নামে, সবার নামে ফ্ল্যাট কিনেছেন এই বেনজীর। কারণ এদেরকে দিয়েই শেখ হাসিনা ভোটার বিহীন নির্বাচন করেছেন, রাতের অন্ধকারে নির্বাচন করেছেন, সমস্ত অপকর্ম করেছেন এদেরকে দিয়ে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, 'বেনজীরদেরকে দিয়ে সরকার কত বিএনপির নেতাকর্মী, অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, শ্রমিক থেকে শুরু করে কতজনকে যে অপহরণ করেছেন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা করিয়েছেন। আজিজ-বেনজীর সাহেবের এই যে ঘটনাগুলো আজকে মানুষ শুধু বিস্ময়ে শুনছে, খবরের কাগজে পড়ছে। আমরা তো মাত্র ছিটেফোঁটা জানি ভিতরে যে আরো কত কি আছে।
গুণী মানুষরা এখন কারাগারের লোহার খাঁচায় মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, 'ডক্টর ইউনুস বলছে আমি আধা ঘন্টার মতো লোহার খাঁচায় ছিলাম। আর দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় যে ব্যক্তি তিনি বছরের পর বছর লোহার খাঁচার মধ্যে আবদ্ধ। আজকে ডক্টর ইউনুস সাহেবরা সম্মানিত নন, এখন সম্মানিত কে? বেনজীর-আজিজ? এদের কি ব্যাকগ্রাউন্ড এগুলো বলার মত নয়।
তিনি বলেন, 'বেনজীরের স্ত্রীর নামে ৬৪৬ বিঘা জমি সারাদেশেই তার ইয়ে..এই ভদ্রলোক বেনজীর সাহেব তিনি ওসিদের সম্মেলনে ওসিদেরকে বলছেন দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। যদি হঠাৎ করে শয়তান এসে বক্তব্য দেয় তোমরা সৎ ভাবে চল, তোমরা ন্যায় সঙ্গতভাবে চলো, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, এটা যেমন বিস্ময়কর ব্যাপার হবে। ঠিক এই সরকারের মন্ত্রীরা যখন উপদেশ দেয়, এই সরকারের আমলারা যখন কোন উপদেশ দেয় তখন সেটি মনে হয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধার কোটার নামে বাবা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এখন আওয়ামী লীগ নেতা, মামা আওয়ামী লীগের এমপি, খালু আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা, এদেরকে ঢুকানোর জন্যই এই প্রক্রিয়া চলছে। আমরা ফ্যাসিবাদের এক চরম বিষবাষ্পের মধ্যে বসবাস করছি। আমরা যে শ্বাস নেই সেটা ফ্যাসিবাদের। যে বাতাস সেই ফ্যাসিবাদের বাতাসের বিষবাষ্প আমাদেরকে গ্রহণ করতে হচ্ছে।
রিজভী বলেন, 'মানুষের শেষ আশ্রয় আদালত সেটি আইন সঙ্গতভাবে সেটিতে রুল অফ ল অর্থাৎ বিচারবিভাগের যে স্বাধীনতা এই স্বাধীনতা নেই বরং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা তারা নিজেরাই সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সেটি না হলে যশোরের নোয়াপাড়ার একজন মহিলা আফরোজা বেগম তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল ফ্যানের সাথে টানিয়ে টর্চার করল, মেরেও ফেলল। সে যদি ড্রাগ এডিক্টেড হয়, সে যদি ড্রাগের ব্যবসা করে, তার কাছ থেকে নাকি ইয়াবা পেয়েছে। তার ছেলে আশপাশের লোক কেউ বলেনি যে তিনি এটা করে। ওই মহিলা নাকি এটা করে এটা হচ্ছে পুলিশের অভিযোগ। তাকে টর্চার করে মেরে ফেলা হলো, এটার কারণ হচ্ছে দেশে আইনের শাসন নেই। বিচার বিভাগের কাছে মানুষের যে শেষ আশ্রয়, সে আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই আজকে পুলিশ বেপরোয়া।
তিনি আরও বলেন, 'মানুষ এখন চোখ দিয়ে পানি ফেলতেও ভয় পায় যদি এটা আওয়ামী লীগের লোক দেখে, যদি পুলিশ দেখে, পরে যদি আমার আবার বিপদ হয়। মানুষ এখন হৃদয়ের মধ্যে কান্নাকাটি করছে, অন্তরের মধ্যে কান্নাকাটি করছে অর্থাৎ মানুষ কান্না করতেও ভয় পাচ্ছে। এই সমাজ এই রাষ্ট্রের মধ্যে আমরা বসবাস করছি।
সংগঠনের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মুজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু,নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম,মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।