বাংলাদেশের জনগণ কারও প্রভুত্ব স্বীকার করবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ফকির আলমগীরের (প্রয়াত গণসঙ্গীত শিল্পী) একটা চমৎকার গান আছেৃ ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারও দানে পাওয়া নয়’। আমরা রক্তের দাম দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। কারও দয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি।সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে প্রভুত্ব স্বীকার না করার বোধ নিয়ে সবাই রুখে দাঁড়ানৃ। আন্তর্জাতিক বিশ্ব নিশ্চয়ই বিষয়গুলো দেখবে, অতীতেও দেখেছে। আর কোনো দেশ যদি মনে করে আমাদের ওপর প্রভুত্ব করবে, বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিন সেই প্রভুত্ব স্বীকার করবে না। মোগল আমলেও প্রভুত্ব স্বীকারে করেনি, ব্রিটিশ আমলেও করেনি, পাকিস্তান আমলেও করেনি, এখনো করবে না।তরুণ সমাজকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। হাফিজ (বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম) ভাই আমার চেয়েও বড়। আমরা এখনো লড়ছি, কথা বলছি। আমরা এখনো বিশ্বাস করি, এ দেশকে পরাধীন করে রাখার ক্ষমতা কারও নেই। এখনো বিশ্বাস করি, এ ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারকে একদিন চলে যেতেই হবে।মির্জা ফখরুল বলেন, সব শ্রেণিপেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নামতে হবে। অন্যথায় জয়ী হওয়া যাবে না। শ্রমিক ভাইদের রাজপথে নামাতে হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নামাতে হবে। সব জায়গা থেকে মানুষকে উঠে আসতে হবে। সেইদিন হবে সত্যিকার অর্থেই সফল গণঅভ্যুত্থান, সফল বিস্ফোরণৃ বিজয়।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এই মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ হয়। সমাবেশের ব্যানারে ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন’ এরকম স্লোগান লেখা ছিল। এদিন নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতের একপাশে সড়কে ছোট পরিসরে এ সমাবেশ হয়।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর গ্রেফতারের পর সাড়ে তিন মাস পর মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান বিএনপি মহাসচিব। গত শনিবার দেশে ফেরার পর এটি তার প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদান।সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বলে দারিদ্র্যের সংখ্যা নাকি কমে এসেছে। অথচ নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচির আওতায় সরকারের বিভিন্ন ভাতায়ও লুটপাটকারীরা ভাগ বসায়। ভাতার জন্য বরাদ্দের টাকা নিয়ে যায়। এভাবে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। পাচার করা টাকার কোনো হিসাব নেই।তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো লোপাট করে দিয়ে এখন ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। এটি আবার আরেকটা দুর্নীতির ব্যবস্থা তৈরি করছে।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করছেন। অথচ একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত হচ্ছে না। কোথায় গেল সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কোথায় গেল ছাত্ররা, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন করেছে, ঊনসত্তরে আন্দোলন করেছে, নব্বইয়ে আন্দোলন করেছে। কোথায় গেছে তারা?মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্রদল নেতাদের বলি- শুধু স্লোগান দিলে হবে না, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। ইনফেন্ট্রি (পদাতিক) শক্তিশালী করতে হবে। ইনফেন্ট্রি শক্তিশালী না হলে যুদ্ধ করবে কে? সংগঠনে এমন মানুষ তৈরি করতে হবে, যারা পুলিশের হুইসেল শুনলে দৌঁড়াবে না, সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ শুনে পালাবে না, রাস্তায় অনঢ় হয়ে প্রাণ দেবে।
মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, সেভাবেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি জানি, আমার বহু ছেলেরা সেভাবে কষ্ট করছে, তারা কেউ বাড়িতে থাকতে পারে না, তাদের চাকরি নেই, টাকা-পয়সা নেই, তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তারা লড়াই করছে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফেরানোর বিষয়টি সারাদেশে তরুণ সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাদের মধ্যে সেই সাহস ও বোধ তৈরি করতে হবে, যেন তারা ভাবতে পারে- যা করছি দেশের জন্য করছি, যা করছি গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য করছি, যা করছি দেশমাতৃকাকে রক্ষা করার জন্য করছি।পাকিস্তানের নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখেন। ইমরান খান দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে তরুণদের মাঠে নিয়ে আসতে হয়, কীভাবে নারীদের মাঠে নামাতে হয়। আমাদের চেয়ে কম অত্যাচার তাদের ওপরে হয়নি। তারা সেনানিবাস আক্রমণ করেছিল, মার্কিন সামাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পাকিস্তানে এমন অবস্থান নিয়ে কেউ কোনোদিন রাজনীতিতে টিকতে পারেনি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।দলের ভাইস-চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুর রহমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিবসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।