ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ২ নেতা ও যুবলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে সে দেশের পুলিশ। গত রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) ভোররাতে কলকাতার হাতিয়াড়া এলাকার একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে ধর্ষণের অভিযোগ শোনা গেলেও কলকাতা ও শিলংয়ের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে ধর্ষন,অবৈধ অনুপ্রবেশ, ছিনতাই ও ডাকাতির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ইলিয়াছ আহমদ জুয়েল, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সিলেট মহানগর যুবলীগের সহসভাপতি আব্দুল লতিফ রিপন।ভারতের কলকাতায় অবস্থান করা সিলেট ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, কলকাতা শহরের হাতিয়াড়া এলাকার একটি বাসা থেকে রবিবার ভোররাতে এই চার নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রবিবার বারাসাত কোর্টে তাদের হাজির করা হয়। আদালত তাদেরকে মেঘালয় রাজ্যের আদালতে উপস্থিত করার আদেশ দেন। কলকাতায় থাকা সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা জানান, যতটুকু জেনেছি পুলিশ একই বাসা থেকে ৫ জনকে আটক করে।তবে কোনো মামলার আসামি না হওয়ায় সাহেল আহমদ নামের একজনকে পড়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ। সাহেল সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। তবে মামলার এজাহারভুক্ত অপর দুই আসামি হলেন সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ ও সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু।
ডাউকি পুলিশ স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতের বিদেশি আইনের ধারায় (১৪) মামলা হয়েছে।এ ধরায় ভারতে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিধান লঙ্ঘনের শাস্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। লঙ্ঘনগুলোর মধ্যে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করা, বৈধ নথি ছাড়া দেশে প্রবেশ করা, অথবা নিবন্ধন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়া অন্তর্ভুক্ত।ভারতীয় আইন অনুযায়ী, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ধারাগুলো মধ্যে-ধারা ১১৮(১) বিএনএস: এটি বিপজ্জনক অস্ত্র বা উপায় দ্বারা স্বেচ্ছায় ক্ষতি করার সঙ্গে সম্পর্কিত, ধারা ৩০৯ (৮) বিএনএস: তে ডাকাতির শাস্তির সঙ্গে সম্পর্কিত, ধারা ৩১০ (২) বিএনএস: তে ডাকাতির (ডেকোয়েটি) সঙ্গে সম্পর্কিত, যা পাঁচ বা তার বেশি ব্যক্তির মাধ্যমে সংঘটিত ডাকাতি এবং ধারা ৩২৪(৪) বিএনএস-তে ডাকাতি করতে গিয়ে স্বেচ্ছায় ক্ষতি করার সঙ্গে সম্পর্কিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারা সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে শিলং যান। শিলং শহরে প্রথমে তারা একটি হোটেলে অবস্থান নেন।পরে তারা শহরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। গত ৫ নভেম্বর তারা শিলং থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত হন। মেঘালয়ের ডাউকি থানার একটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
কলকাতায় অবস্থান করা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল কালের কণ্ঠকে জানান, তাদেরকে শিলংয়ের ডাউকি থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ, ছিনতাই ও ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত অপপ্রচারের নিন্দা জানাচ্ছি। সত্যতা যাচাই না করে বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষের চরিত্র হনন করা অত্যন্ত নিম্নরুচির পরিচয়। আইনি প্রক্রিয়ায় আশা করি তারা সুবিচার পাবেন।’জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) যেকোনো সময় অভিযুক্ত চার জনকে আদালতে তোলা হবে বলে নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ তার এক আত্মীয়।