নেতৃত্ব সংকটে ধুঁকছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক থেকেও নেই। দীর্ঘদিন হয় না কাউন্সিল। নেই চোখে পড়ার মতো কোনো কর্মসূচি। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের কর্মসূচিও শ্রমিক সমাবেশ শোভাযাত্রায় সীমাবদ্ধ। দলের প্রধান দুই কাণ্ডারি শারীরিক কারণে নিষ্ক্রিয় থাকলেও উঠে আসেনি সংগঠন গোছানোর মতো পরিশ্রমী কোনো নেতৃত্ব। তবে, সংগঠনটির দায়িত্বশীল নেতারা নেতৃত্ব সংকটের বিষয়টি মানতে নারাজ। তাদের ভাষ্য, বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের অগণতান্ত্রিক পরিবেশের কারণে তারা সংকটে।২০১৪ সালের ১৯ ও ২০ এপ্রিল শ্রমিক দলের সবশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয়। সম্মেলনে প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি কাউন্সিলর নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের কথা তোলেন। এতে গোলোযোগ সৃষ্টির কারণে সেখানে কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। ওই বছর ৫ মে আনোয়ার হোসাইনকে সভাপতি এবং নূরুল ইসলাম খান নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৪ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়।
ওই কমিটি সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনে হয়নি অভিযোগ তুলে শ্রমিক দলের বিরাট একটি অংশ বিদ্রোহ করে। তারা ওই বছরের ৭ জুন এএম নাজিম উদ্দিনকে সভাপতি ও আবুল খায়ের খাজাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট পাল্টা কমিটি ঘোষণা দেয়। পরে নাজিম উদ্দিন কমিটিতে না থাকায় আবুল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর শ্রমিক দলের উভয় কমিটিই বৈধভাবে গঠিত হয়নি উল্লেখ করে শ্রম পরিদপ্তরের পরিচালক শ্রম আদালতে চিঠি দেয়। এমনকি আনোয়ার-নাসিম কমিটি ‘অবৈধ’ অভিযোগে আদালতে মামলা করেন বিদ্রোহীরা।সেই মামলা পরবর্তীসময়ে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম খান নাসিম কয়েক বছর ধরে অসুস্থ। নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই। কয়েক মাস হলো সভাপতি আনোয়ার হোসেনও বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ। সংগঠনের এ অবস্থায় দায়িত্ব নেওয়ার মতো কোনো নেতাও সামনে আসেননি। সার্বিক কারণে শ্রমিক দলের হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি।নেতৃত্ব সংকটে ধুঁকতে থাকা শ্রমিক দল পুনর্গঠনে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের ওপর আস্থা রেখে সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অনানুষ্ঠানিক নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। গত এক বছর ধরে শ্রমিক দলে গতি আনতে কাজ করছেন তিনি। তার নেতৃত্বেই আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের শ্রমিক সমাবেশ এবং শোভাযাত্রা বাস্তবায়ন হচ্ছে। নতুন কমিটি হলে তিনিই হবেন এ সংগঠনের কাণ্ডারি- এমনটা ভাবছেন অনেকেই।নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষায় শ্রমিক দল নেতারা ব্যর্থ কি না জানতে চাইলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে সাংগঠনিক ব্যর্থতা বলতে কিছু নেই।’
দীর্ঘ এক দশক কাউন্সিল না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কাউন্সিল না হওয়া কোনো সমস্যা নয়। শ্রমিক দল বিএনপির সহযোগী সংগঠন। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ ধারা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত। আমাদের যেমন গঠনতন্ত্র আছে, তেমনি তাদেরও কিছু রুলস আছে। তাই কমিটির বিষয়ে শ্রম আইনের অনেক কিছু ফলো করতে হয়।’
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অসুস্থতা প্রসঙ্গে মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাসিম খান অসুস্থ। তিনি কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন না। সভাপতি আনোয়ার হোসাইন বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তবে তিনি কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাদের পরামর্শেই আমরা কাজ করছি।’নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নেতাদের ব্যর্থতা মানতে নারাজ শ্রমিক দলের সমন্বয়কারী শিমুল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘শ্রমিক দলের নেতৃত্বেই শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।’ তার অভিযোগ, ‘বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকার সবার অধিকার যেমন ক্ষুণ্ন করছে, তেমন শ্রমিকদের অধিকারও ক্ষুণ্ন করেছে।’
বর্তমান শ্রমিক দলের নেতারা তাদের অতীতের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার যে ধারাবাহিকতা তা কী কারণে রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে জানতে চাইলে সাবেক শ্রমিক দল নেতা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এটা হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতি সম্পৃক্ত। শ্রমিকদের জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ দরকার, সেটা এখন নেই। ট্রেড ইউনিয়নগুলো যুবদল-ছাত্রদলের মতো হয়ে গেছে। ট্রেড ইউনিয়ন কথা বলতে পারছে না। বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা চলছে। যে কারণে শ্রমিকরা আজ খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে।’শ্রমিক দলের নেতৃত্ব বিকাশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ গড়ে তোলা দরকার। বিভক্তির রাজনীতি যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।’