ঢাকা: বিএনপির সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনকে দলীয়ভাবে মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি দলটির সরকার আন্দোলনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সহিংস পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হলে প্রশাসনিকভাবে প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিয়েছে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে। বুধবার (১২ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি সমাবেশ ডেকেছে। এই সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। একই দিন রাজধানীতে সমাবেশের পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে একই দিনে একই সময় দুই দলের এই দুই সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরির শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। গত বছর নভেম্বর মাস থেকে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে। বিএনপি কর্মসূচি দিয়ে যাতে কোনো ধরণের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য তৈরি করতে না পারে, সে জন্য আওয়ামী লীগ এই কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে এবং আগামী নির্বাচন পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে বলে জানান দলটির নেতারা। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবারও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশ নামে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এ কর্মসূচি দিয়েছে। এই সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। বিএনপি যেন সমাবেশ থেকে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সরকারও যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসনিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপির সমাবেশের কর্মসূচি থেকে উস্কানিমূলক কোনো কর্মকাণ্ড, সন্ত্রাস, নাশকতা তৈরির চেষ্টা করা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে আগে থেকেই তাদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সূত্রগুলো এও জানায়, বিএনপির আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচিকে তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। কেননা, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি আন্দোলনে চেষ্টা করছে, ঘোষণা দিচ্ছে। কিন্তু কোনো আন্দোলনই দাঁড় করাতে পারেনি।
এর কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিএনপি যে দাবি নিয়ে আন্দোলনের কথা বলছে, তাতে জনগণের কোনো সমর্থন নেই। তাদের এক দফা আন্দোলনেও জনগণ সাড়া দেবে না। তবে এই আন্দোলনের ব্যর্থতা থেকে বিএনপি অরাজনৈতিক পথ বেছে নিতে পারে, বিষয়টিও মাথায় রেখেছেন তারা।নেতারা ভাবছেন, বিএনপি-জামায়াত অতীতের মতো সরকারকে বেকায়দায় ফলতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারে। যেহেতু তারা এখন সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কথা বলছে, আর এর জন্য সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়, তবে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।
আর এ কারণেই সরকার ও আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের সমমনা দলগুলোর নেতাদের গতিবিধি খেয়াল রাখছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কোনো ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা হলে সঙ্গে সঙ্গে সরকার আইনগত সব রকম ব্যবস্থা নেবে বলেও জানায় সূত্রগুলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি কোনো আন্দোলন করতে পারবে না। তাদের কোনো জনসমর্থন নেই, আর আন্দোলন আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি বেশি জানে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে কর্মসূচি দিলে সেটা আমরাও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। সরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ প্রশ্নই ওঠে না। এসব অযৌক্তিক দাবি নিয়ে বিএনপি যদি সন্ত্রাসের পথে হাঁটে, তাহলে সমুচিত জবাব পাবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের প্রশাসন আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে। তারা কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আমরা কাউকে মাঠ দখলে নিতে দেবো না, মাঠ ছেড়ে দেবো না। কালও (বুধবার) আমাদের আওয়ামী লীগের সমাবেশ আছে ৷ আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে আছি। আমরা সেটা (সরকারের পদত্যাগ) হতে দেবো না।