
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের যথাযথ মর্যাদা দিতে হলে দেশে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে—এ মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, যারা অন্ধকারের শক্তি, ষড়যন্ত্রের শক্তি, তারা নির্বাচনকে ঠেকাতে চায়। আর আমাদের উচিত, যে যেখানে আছি, নির্বাচনের স্বপক্ষে নেমে পড়া। এর মধ্য দিয়েই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হবে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের’ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত "শহীদের স্মরণে" শীর্ষক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, যারা নির্বাচন ভয় পায়, যারা অন্ধকারের শক্তিকে পুনর্বাসন করতে চায়—আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চায়—এখন তারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। পিআর পদ্ধতি এখন যথেষ্ট নয়। যদি কেউ করতেও চায়, তাহলে জাতির সামনে তাদের কর্মসূচি তুলে ধরে ভোট করা উচিত। তারা জয়লাভ করলে পিআর করবে। কিন্তু বিএনপির ঘাড়ের উপর চেপে বা অন্য কোনো সরকারের ঘাড়ে চেপে এই দুষ্কর্ম করা ঠিক হবে না। এটির প্রতি জাতির কোনো সমর্থন নেই।
তিনি বলেন, এই আন্দোলন যেটা হয়েছে, সেটা জুলাই-আগস্টের মধ্যে পরিসমাপ্তি হলেও আন্দোলনটা ১৫-১৬ বছরের। হাসিনা তাড়ানোর আন্দোলন, স্বৈরাচার তাড়ানোর আন্দোলন, দেশ রক্ষার আন্দোলন—এটা তো দীর্ঘ আন্দোলন। শুধু জুলাই-আগস্টকে আমরা যারা স্মরণ করছি, তারা যেন আমাদের অতীতকে (১৫-১৬ বছরের) অস্বীকার না করি।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, জুলাই-আগস্টকে স্মরণ করব আমাদের মর্যাদার জন্য, ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের জন্য। এটা এমন একটা জিনিস, যেটাকে কখনো বিতর্কে নিয়ে যাওয়া উচিত হবে না। এই আন্দোলনে যারা ছিলেন, সবাই জাতীয় বীর। সবাই রক্ত দিয়েছেন জাতিকে মুক্ত করার জন্য। এই আন্দোলনে কিশোর, শ্রমিক, বয়স্ক থেকে শুরু করে সকলে একটি জাতীয় মুক্তির জন্য লড়াই করেছে। সেই জাতীয় মুক্তির কাজটি আমরা এখনো করতে পারিনি। জাতীয় মুক্তির কাজটি করতে হলে একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন দরকার।
তিনি আরও বলেন, স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের স্বাভাবিক পথ হচ্ছে নির্বাচন। এই নির্বাচনটা যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা করতে না পারব, ততক্ষণ বুঝতে হবে শহীদদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা পূর্ণতা পাচ্ছে না। তারা জীবন দিয়েছেন একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য। আর গণতান্ত্রিক দেশ গঠন করতে হলে নির্বাচন দরকার, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। সেই ভোটাধিকার আমরা এখনো মানুষকে বুঝিয়ে দিতে পারিনি। হাসিনার কেড়ে নেওয়া ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। ভোটের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের পছন্দের মার্কায় ভোট দেবে। এরপর আমরা একটি জাতীয় সরকার গঠন করব। সে সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা গঠন করতে না পারি, ততক্ষণ পর্যন্ত শহীদদের যথাযথ মর্যাদা দিতে পারছি না। শহীদদের যদি মর্যাদা ও সম্মান দিতে হয়, তাহলে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে যেহেতু তারিখ ঠিক হয়ে গেছে, তাহলে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। বসে থাকলে হবে না। যারা অন্ধকারের শক্তি, ষড়যন্ত্রের শক্তি, তারা নির্বাচনকে ঠেকাতে চায়। আর আমাদের উচিত, যে যেখানে আছি, নির্বাচনের স্বপক্ষে নেমে পড়া। এর মধ্য দিয়েই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হবে।
দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে. এম. রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান, কৃষক দলের সাবেক দফতর সম্পাদক এস. কে. সাদী প্রমুখ।