এই প্রজন্মের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় কণ্ঠশিল্পী দিনা মন্ডলে কণ্ঠে প্রকাশ হয়েছে নতুন মৌলিক গান "মনে রইলো মনের কষ্ট"গানটি সম্প্রতি কাঙ্গাল মিউজিক ইউটিউব চ্যানেল এবং বাউল মন ও মন কুঠুরি ফেসবুক পেজে মুক্তি পেয়েছে।দিনার কণ্ঠে ধারণকৃত ‘মনে রইলো মনের কষ্ট’ গানের গীতিকার মাহমুদ মুরাদ ও সুরকার রাজীব ভট্টাচার্য, সঙ্গীত পরিচালনায়, সালমান শেখ। গানের ভিডিও পরিচালনা করেছেন আল আমিন মাসুদ।
দিনাজপুরে জন্ম এই বাউল শিল্পীর। জেলার নামের সঙ্গে নিজের নাম দীনা! এ যেন এক অদ্ভূত মিল। ছোট বেলা থেকেই সুরের প্রতি ঝোক ছিল তার। সময় পেলেই সুরের ছন্দে মেতে উঠতেন। তবে সেই সুর যে তাকে এতো দূর নিয়ে আসবে তা ভাবতেই পারেননি কখনো। সুরেই এনেছে জীবনের পরিবর্তন, সুরই দিয়েছে প্রিয় মানুষকে কাছে পাবার ঠিকানা।সংগীতের আবহেই বেড়ে ওঠা দীনার। ছোট বেলা থেকেই গান শিখতেন,গানের জন্য দাদী আরজিনা বেগম ও নানা আকবর আলী পারিবারিক সহযোগীতা করেছেন। বাউলের সঙ্গে শিখেছেন নজরুল সংগীতও। গানের তার প্রথম শিক্ষক ছিলেন নজরুল সংগীত শিল্পী ছিলেন মুজিবুর রহমান। লালন গানের গুরুমুখী বিদ্যায় দীনার ওস্তাদ বাউল শাহাবুল। তার কাছ থেকেই গানের দীক্ষা নেয়া। দীনার দাদাগুরু হলেন বাংলার প্রখ্যাত শিল্পী শফি মন্ডল। চলার পথে এই শিল্পীর স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়েছেন দীনা। আর এতেই চলার পথ হয় আরো প্রসারিত।
শফি মন্ডল বলেছেনও তার যোগ্য উত্তরসূরীদের মধ্যে একজন হবেন এই দীনা।
জীবনের গল্পে হয়তো এতো কিছু কখনো আশা করেননি দীনা মন্ডল। প্রথম জীবনে অবশ্য তার নাম ছিল দিলরুবা। সময়ের আবর্তনে দর্শকপ্রিয়তায় নাম বদলে হয়েছেন দীনা। সেই দিলরুবা আর এখনকার দীনার পার্থক্য আকাশ-পাতাল।
দিনা মন্ডল নাম হয়েছে মিসকিন শাহর দরবারে গিয়ে। তার গানে মুগ্ধ হয়ে আকবর আলী নামে এক লোক এই নাম দিয়েছিলেন ভালোবেসে।
গান শেখার পথে কলেজ জীবনে ইয়াকুব আলী নামে এক শিক্ষকের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন দীনা। যার কাছ থেকেও শিখেছেন অনেক কিছু।
তার গাওয়া গানের মধ্যে ‘কেন এতা মায়া মায়া লাগে, যে মারলো এই বুকে ছুরি, তার পেছনে কেন ঘুরি, এখনো সেই বৃন্দাবনে, যদি তরীতে বাসনা জাগে, সুখে থাকো সুজন বন্ধু, জীবনের ঐ পারে যদি আরেক জনম থাকে, শ্যাম তুমি লীলা বুঝো মন বুঝো না’ গানগুলো পেয়েছে সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা।
শুরুটা অবশ্য খুব বেশি দিনের না দীনার। অল্প সময়ের মধ্যেই গানের ভুবনে অবস্থান করে নিয়েছেন। জানান দিয়েছেন নিজের ভেতরকার প্রতিকার। আর এ নিয়েই পেয়েছেন আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা।
পেশাদারিত্বের সঙ্গে গানের শুরু ২০২০ সাল থেকে। তবে সে যাত্রা অনেকটা আটকে দেয় করোনা। তবুও থেমে থাকেননি দীনা। অনলাইনে করে গেছেন গানের আসর। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ছন্দে ফেরান নিজেকে। স্টেজ পারফর্ম করে আসতে থাকনে আলোচনায়। নজর কাড়েন সবার। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তার মায়াবী সুর। আসতে থাকে গানের আরও বায়না। সেই যে তার পথ চলা আর থামতে হয়নি তাকে।
লালনগীতি, পল্লীগীতি, বাউল, মলয়া, রাধা-কৃষ্ণের প্রেম লীলা, বিচ্ছেদসহ সব ধরণের গানেই সমান পারদর্শী দীনা। সব গানেই তুলেন মায়াবী এক সুর। সেই সুরে যেন হারিয়ে যাওয়া যায় ভাবের দেশে। পাগলপারা সুরের মূর্ছনায় হৃদয় জয় করেছেন ভক্তদের।
তার এই অগ্রযাত্রার পেছনের কারিগর তার স্বামী মাহতাব হোসেন। অনুপ্রেরণা দিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন দীনাকে। সার্বিক সফরযাত্রী হিসেবে কোন গান কখন মানুষের মন জয় করবে সেই দিকনির্দেশনা দেন তিনি।
কথা হয় তার স্বামীর সঙ্গে। মাহতাব বলেন, ‘দীনাকে আমি সর্ব্বোচ্চ জায়গায় দেখতে চাই। এ জন্য যা করার দরকার আমি করবো। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমি তাকে গানের জগতেই রাখবো। তার সুরে অদ্ভূত এক মায়া রয়েছে। সেই ভুবন ভুলানো হাসি আর সুরে দর্শকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে গানের জন্য ফোন করা হয়, এমনকি দেশের বাইরেও তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে, সেখান থেকেও আসছে গানের প্রস্তাব।’
মৌলিক গান নিয়ে জানতে চাইলে দিনা বলেন- ‘একজন শিল্পীর পরিচয় তার মৌলিক গান।
তিনি আরো বলেন, “গান নিয়ে পরিকল্পনা বলতে গেলে, যেতে হবে দূর, দূর থেকে আরো বহুদূর। যতোদিন বেঁচে আছি ভালো ভালো গান করতে চাই। আর আমার দর্শকও শ্রোতা ভাই বোনদের বলতে চাই আপনাদের কাছে যদি আমার গান ভালো লাগে তাহলে আমাকে সাপোর্ট করবেন উৎসাহ দিবেন। যেন আমার গান গাওয়ার ইচ্ছেটা দ্বিগুণ হয়। আর আমার জন্য দোয়া করবেন। ভালো ভালো বাংলা গান শুনবেন। বাংলা গানের সাথে থাকবেন। সবার জন্য শুভকামনা