ঢাকা, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪,
সময়: ০২:৩৪:২৭ PM

উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে না বিএনপি

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
16-04-2024 12:23:17 PM
উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে না বিএনপি

উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়  গিতকাল ১৫ এপ্রিল সোমবার। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয়ভাবে কোন প্রার্থী দেবে না এবারের উপজেলা নির্বাচনে অর্থাৎ যাতে দল থেকে একাধিক প্রার্থী হতে পারে সেজন্য জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়েছে। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। বিএনপির কেউ যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, কেউ যদি নির্বাচনে সহায়তা করে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিবে দলটি। বিএনপি নেতারা মনে করে বিগত সংসদ নির্বাচনকে জায়েজ করতে তড়িগড়ি করে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ফাঁদ পেতেছে সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন আর কোনো নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০২১ সাল থেকে বিএনপি স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন বর্জন করে আসছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যাঁরা সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন, তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এখনো বিএনপি সেই সিদ্ধান্তেই আছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনেও বিএনপি অংশ নেয়নি। সেখানে দলের সাবেক দুই নেতা মো. মনিরুল হক (সাক্কু) ও মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন (কায়সার) প্রার্থী হন। এই দুজন ২০২২ সালে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। এমনকি ত্রিশালে ৯ মার্চ মেয়র পদে উপনির্বাচনে বিএনপি নেতা আমিন সরকার বিজয়ী হওয়ার পর দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে এজানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ব্রেকিং নিউজকে বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির আগের সিদ্ধান্তই বহাল আছে। তিনি বলেন, এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। যদি কেউ নির্বাচনে যায় তাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কারসহ তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, কেউ নির্বাচনে সহায়তা করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কয়েকদিন আগে ত্রিশালে মেয়র পদে নির্বাচনের পর একজনকে বহিষ্কারের কথা উদাহারণ টেনে রিজভী বলেন, যারাই অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দল কোন দ্বিধা করবে না। তিনি আরও বলেন, ডামি সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি কোন দিন সুষ্ঠু হবেও না। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের তিনি সরকারের মিথ্যা প্রলোভন থেকে দুরে থাকার আহবান জানান। 

দলের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতবিনিময় সভায় রমজান-পরবর্তী আন্দোলন-কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গও ওঠে। সেখানে নেতাদের সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে মত দেন। এ বৈঠকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। এরপর স্থায়ী কমিটির একটি বৈঠকেও উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসে। তখন সময়মতো আলোচনার পর সিদ্ধান্তের কথা হয়। 

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বিএনপিকে এ নির্বাচনে গেলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক ও প্রশ্ন, সেটা কিছুটা হলেও কমাতে পারবে সরকার। একই সঙ্গে এই প্রচারও শুরু করবে যে সংসদ নির্বাচন না করে বিএনপি ভুল করেছে।

দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, বিএনপি দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না, এটি আগে থেকে নীতিগত সিদ্ধান্ত। দলের কেউ স্বতন্ত্রভাবে এই নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ৪ মার্চ বগুড়ায় এক কর্মসূচিতে বলেছেন, বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যাবে না। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচনে গেলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা নির্বানের মাধ্যমে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার এটি একটি কৌশল হিসেবে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন অনেক নেতা। সরকারি দলের এসব কৌশলের মধ্যে বিএনপি নির্বাচনে গেলেও ভালো করতে পারবে না। হাতে গোনা কয়েকটিতে হয়তো জিততে পারবে, তাতে এ সরকারের অধীন নির্বাচন না করার বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলনে তৈরি হওয়া নৈতিক অবস্থান নষ্ট হবে। এছাড়া এমনিতে মামলায় জর্জরিত বিএনপি নেতাকর্মীরা। উপজেলা নির্বাচনে গেলে মামলার সংখ্যা আরও বাড়বে। আরও বেশি হয়রানির শিকার হবে নেতাকর্মীরা।

তাঁরা মনে করেন, দুটি কৌশল থেকে সরকার এবার দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রথমটি হচ্ছে, সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। কারণ, যেকোনোভাবে বিএনপিকে এ নির্বাচনে আনা গেলে তাদের ‘একতরফা’ ও ‘ডামি’ সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক ও প্রশ্ন, সেটি কিছুটা হলেও কমাতে পারবে।

উপজেলা নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে তৃণমূলের বিএনপি নেতাদের মন্তব্য জানতে চাইলে গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু তাহের মুসল্লি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে না গেলে দলের কোন ক্ষতি হবে না। বরং নেতাকমীরা নতুন করে মামলা হামলা থেকে বাঁচবে। তিনি বলেন, বিগত সংসদ নির্বাচনে তার এলাকা থেকে একটি বিএনপি নেতাকর্মীকেও আওয়ামী লীগ নিতে পারে নি। বিএনপির কোন ভোটারকেও তারা কেন্দ্রে নিতে পারে নি। উপজেলা নির্বাচনেও পারবে না। 

শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকতারুল আলম মাষ্টার বলেন, এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া একই কথা। তাদের অধীনে সকল নির্বাচন পাতানো। সরকারের লোকজন যাকে চায় সেই নির্বাচিত হবে। সুতরাং বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই সঠিক। তিনি আরও বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত তৃণমূলের প্রতিটি নেতাকর্মী রাজপথে আছে রাজপথে থাকবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পূনরুদ্ধার সফল হবে বলেও মনে করে তিনি।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম বলেন, ডামি সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। তিনি বলেন, বিএনপিতো নির্বাচনে যাবেই না যদি কোন বিএনপি নেতাকর্মী নির্বাচনে অংশ নেয় বা সহায়তা করে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সময় হোক দেখতে পাবেন বিগত সংসদ নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনও জনগণ বয়কট করবে। এ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন আগ্রহ নেই।